জেমি ডে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্বে। সাফল্য ব্যর্থতা মিলিয়ে সময়টা বেশ কাটছে তার। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের বাংলাদেশ ক্যারিয়ারকে, বাংলাদেশ ফুটবলকে মূল্যায়ন করলেন। প্রসঙ্গক্রমে উঠে এল এখানে তার ফুটবলের বাইরের জীবন, বাংলাদেশের প্রিয় জায়গা, প্রিয় খাবারের বিষয়গুলোও।
ঢাকা পোস্ট: বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আছেন। আপনার এই দুই বছরকে কীভাবে দেখছেন?
জেমি ডে: যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, সে জায়গা থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের উন্নতিতে আমি খুবই খুশি। খেলোয়াড়রা উন্নতি করেছে বেশ। দল হিসেবেও আগের থেকে ভালো খেলছি এখন। আমি মনে করি, আমাদের উন্নতির জায়গা আরও আছে। বেশি ম্যাচ জিততে হবে। একটা টুর্নামেন্ট জিততে হবে, অন্তত পক্ষে ফাইনাল খেলতে হবে। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে আমার আপাতত লক্ষ্য এটাই। এই লক্ষ্যেই খেলোয়াড়রা, নিজেদের তৈরি করতে হবে। ফাইনাল খেলতে, কিংবা জিততে পারলে বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য দারুণ হবে।
সাধারণত, একটু বয়স্কদের জাতীয় দলের কোচিংয়ে দেখা যায়। সে তুলনায় আপনি বেশ তরুণ। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়জুড়েই কি জাতীয় দলের কোচিংই করাবেন?
জাতীয় দলের কোচিং উপভোগ করি আমি। কাজটা দারুণ। বিশ্বকাপ ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, এসব খুবই দারুণ অভিজ্ঞতা। অন্য সব দেশেও কাজ করেছি, সেখানেও দারুন লেগেছে। এখানে একটু বয়স্ক লোকজনকে দেখা যায় কারণ এখানে কোচিংয়ের কাজটা কম। প্রতিদিন ধরে ধরে কোচিংয়ের ব্যাপারটাকে একটু মিস করি, ব্যাপারটা ভবিষ্যতে হয়তো আবারও ফিরে পেতে চাইবো। কিন্তু এখন জাতীয় দল নিয়ে কিছু অসমাপ্ত কাজ রয়ে গেছে, যেমনটা আমি প্রথমে বলেছিলাম, জাতীয় দলকে ফাইনালে তোলার ব্যাপারটা…আশা করি লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো। তখন হয়তো ভেবে দেখবো কী করা যায়। কিন্তু এখন আমি এখানেই বেশ আছি, নিজের কাজটাকে উপভোগ করছি।
আপনি এমন একটা দেশ থেকে এসেছেন যেখানে ফুটবল ক্রিকেটের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে ব্যাপারটা উল্টো, এখানে ক্রিকেট ফুটবলের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। প্রথম দিকে ব্যাপারটাকে কীভাবে দেখেছিলেন?
হ্যাঁ, ইংল্যান্ডে ফুটবল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, ক্রিকেটও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। এখানে ক্রিকেট জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তবে আমার বিশ্বাস, এখানেও ফুটবলের ভক্ত সমর্থকের সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। সেখানে বিনিয়োগ আছে। সেখানকার কাঠামো ফুটবলের চেয়ে এগিয়ে। আর মানুষজন দিনশেষে সফলদের সঙ্গে থাকতে চায়। শেষ কিছুদিনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বেশ সফল। জাতীয় দল হিসেবেও বেশ উন্নতি করেছে। সেটা অনুসরণের চেষ্টা আমাদের থাকবে।
ক্রিকেটের পেছনে দ্বিতীয় হয়ে থাকতে আমার সমস্যা নেই। তবে একদিন গুণমানে ক্রিকেটের সমকক্ষ কিংবা ক্রিকেটকে পেছনে ফেলতে চাই। হ্যাঁ জানি, কাজটা অনেক কঠিন; কিন্তু এটা আমাদেরকে একটা চ্যালেঞ্জের মুখেও ফেলে।
মে ২০১৮ থেকে এখন ফেব্রুয়ারি ২০২১। জাতীয় দলের দায়িত্বে আপনি বেশ কয়েক বছর ধরেই আছেন। যদি স্মৃতি ধোঁকা না দেয়, তাহলে আপনার প্রথম অনুশীলন সেশনটা হয়েছিল বিকেএসপিতে। এরপর থেকে ট্যাকটিকাল, টেকনিক্যাল, শারীরিক দিক থেকে কতোটা পরিবর্তন হয়েছে খেলোয়াড়দের?
সত্যি বলতে, সেদিন বিকেএসপিতে আমাদের জন্য বড় বিস্ময়ই অপেক্ষা করছিল। শারীরিক দিক থেকে, টেকনিক্যাল দিক থেকে ইংল্যান্ডে খেলোয়াড়রা যেমন থাকে, এখানকার খেলোয়াড়রা অনেক পিছিয়ে ছিল। কিন্তু সেখান থেকে খেলোয়াড়রা শেষ দুই বছরে দারুণ উন্নতি করেছে, মানসিকতা, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছে, এখানে পুরো কৃতিত্বটা খেলোয়াড়দের। আপনি যদি লিগের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে তুলনা করেন, ফিটনেস কিংবা শারীরিক গড়নে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা বেশ এগিয়ে। এজন্যে তারা বেশ কৃতিত্বের দাবিদার, কারণ আমরা দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্যাম্পিংয়ে গিয়েছিলাম বড় সময়ের জন্য। সে সময় আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। সেখানে আমরা টেমপ্লেট দেখিয়েছি, কেমন জীবনযাপন করতে হবে তাদের, কেমন অনুশীলন করতে হবে। খেলোয়াড়রা সেটা ধরে রাখতে পেরেছে, কৃতিত্বটা তাদের। আর শেষ দুই বছরে তাদের মানসিক আর শারীরিক উন্নতি হয়েছে বেশ, আমি মনে করি এটা বেশ আনন্দদায়ী একটা ব্যাপার।
লোকজন ফলাফলের দিকে তাকায়। সবকিছু এখানে ফলাফলকে ঘিরেই। আমাদের জন্য প্রথম যে অবস্থায় খেলোয়াড়দের পেয়েছিলাম আর এখন যেমন পাচ্ছি তাতে বড় পরিবর্তনই এসেছে। নিজেদের জন্য আমরা গর্বিত। আমাদের অনুশীলন সুবিধা আরও উন্নত করতে হবে। আরও অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে।
যখন খেলোয়াড়দের ফিটনেস পদ্ধতিতে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছিলেন; খেলোয়াড়রা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিল? এতোদিন ধরে চলে আসা স্বভাবের কারণে কোনো অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
মানুষ পরিবর্তন পছন্দ করে না। আর তাই আপনি যেখানেই পরিবর্তন আনতে চাইবেন, বাধার মুখে পড়বেনই। আগের চেয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো খেলোয়াড়দের। খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এনেছিলাম। ফ্যাটযুক্ত খাবার বন্ধ করে দিয়েছিলাম, স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকায় তুলে এনেছিলাম।
যেটা আমাদের সাহায্য করেছে, এশিয়ান গেমসে সাফল্য এনে দিয়েছে। সেখানে আমরা দারুণ খেলেছিলাম। খেলোয়াড়রা পরিবর্তিত জীবনের সুফলটা বুঝতে পেরেছিল। তারা বুঝেছিল যে তাদের কাজটাই ঠিক, গেমসের পারফর্ম্যান্সই তাদের সেটা বুঝিয়েছিল। আমরা এরপর বলেছিলাম, জাতীয় দলে যদি টিকে থাকতে হয় এ রুটিনটাই মেনে চলতে হবে। ৯৫ শতাংশ সেটা মানতে পেরেছে খেলোয়াড়রা। হ্যাঁ, কিছুটা প্রতিরোধ থাকবেই, কিন্তু যখন আপনি ফলাফলটা দেখাবেন, তারা নিজে থেকেই সেটা মানতে শুরু করবে। সেটাই শেষ দুই-আড়াই বছরে হয়েছে।
যদি ইংল্যান্ড আর এখানকার জীবনটাকে দেখেন; এখানে আপনি তারকা। কেউ একজন আপনাকে দেখে একটা সেলফির আবদার করে বসল…ব্যাপারটাকে কেমন উপভোগ করেন?
ইংল্যান্ডে ফুটবল অনেক বেশি জনপ্রিয়, সেখানে অনেক বেশি লিগ চলে। এখানে যেমন পাওয়া যায়, সে পরিচিতিটা ইংল্যান্ডে পাওয়া কঠিন। এখানে অনেকে ছবি তোলার জন্য বলে, এখানে বেশ পরিচিতিও পাওয়া গেছে, এখানে মানুষজন বেশ ভালো যা আমাকে দারুণ সাহায্য করেছে। আর ব্যক্তিগতভাবে এটাকে উপভোগ করি। অনেক উত্থান-পতন থাকবে, জয়ের ধারায় থাকলে একটু বেশি ভালো হয়।
তবে ইংল্যান্ডে পরিস্থিতিটা ভিন্ন, কেউ চেনে না কে আমি। সেখানে পারিবারিক জীবনে ঢুকে যাই। তবে এই ভারসাম্যটাও বেশ উপভোগ্য।
কিন্তু এখানে আপনার পরিবার আপনার সঙ্গে নেই। পরিবার ছেড়ে এত দূরে এসে থাকাটা কতটা কঠিন?
হ্যাঁ, কঠিন তো বটেই! দুই বছর হলো বাংলাদেশে আছি। ছেলে মেয়েদের বড় হয়ে ওঠাটাকে মিস করেছি, কয়েকটা জন্মদিনেও থাকতে পারিনি। কিন্তু আমার পরিবার এক্ষেত্রে বেশ সমর্থন যুগিয়েছে। তারা বোঝে, এ কাজটাকে আমি উপভোগ করি, কাজটাও বেশ ভালো। এখন এর ভালো খারাপ, দুটো দিককেই মেনে নিতে হবে। পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু আমার কাজটাই আমার পরিবারের সঙ্গে থাকা, না থাকাটাকে নির্ধারণ করে। আর আমি কাজটাকে ভালোবাসি। দুয়ের ভারসাম্য করে চলতে হয় আমাকে। কখনো কখনো এটা কঠিন। কিন্তু আমাকে মেনে নিতে হবে, এটাই দিনশেষে আমার কাজ। দুটো অবস্থাকেই মেনে নিতে হবে আমাকে।
২০১৮ সালে আপনার বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ হওয়ার কথা যখন আপনার পরিবারকে জানিয়েছিলেন, কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন তারা?
প্রথমে আমরা একে দেখেছিলাম একটা সুযোগ হিসেবে। এটা আমার জন্যে এমন একটা সুযোগ ছিল যেটাকে ছেড়ে দেয়ার উপায় ছিল না, পরিবারও এভাবেই দেখছিল। এর আগে যুক্তরাজ্যেই কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল আমার, কিন্তু দেশ ছেড়ে এত দূরে কাজ করার সমস্যা ছিলই। এটাও আমাদের বিবেচনায় উঠে এসেছিল। কিন্তু আপনাকে আগেই বলেছি, আমার পরিবার আর স্ত্রী এক্ষেত্রে বেশ সমর্থন দিয়ে গেছে। সে বলেছে, করে দেখো। যদি ঠিকঠাক চলে তাহলে চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। এরপর থেকে প্রতি বছর পরিস্থিতিটাকে পুনর্বিবেচনা করেছি আমরা, এভাবেই চলছে।
মাঠের ফুটবলে ফিরি। ফরোয়ার্ডদের গোল না পাওয়াটা এখনো একটা বড় সমস্যা আমাদের। ব্যাপারটাকে কীভাবে দেখছেন আপনি?
তিন বছর আগে যখন এসেছিলাম, তখনই বলেছিলাম যে খেলোয়াড়দের ঠিকঠাক জায়গায় না খেলালে সমস্যা হবেই। এই সমস্যাটা আমার আসার আগ থেকেই ছিল, এটা সাম্প্রতিক নয়। আর এটা শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে না, যদি না আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের গড়ে তোলার ধরণ, কাঠামোয় পরিবর্তন আনি। আমার মনে হয়, প্রত্যেকটা ক্লাবের শক্ত-পোক্ত যুব দল থাকা উচিৎ, জাতীয় দলেও। যাতে করে খেলোয়াড়রা ঠিকঠাক জায়গায় খেলতে পারে, সেটা হতে পারে সেন্টার ফরোয়ার্ড, মিডফিল্ড কিংবা সেন্টারব্যাক অবস্থানে। যদি ঠিকঠাক অবস্থানে খেলতে না পারে, তাহলে তাদের জন্য পারফর্ম করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা যদি একে প্রাধান্য না দিই, কোনো ব্যবস্থা না নিই তাহলে এ সমস্যাটা দুই দিনে উবে যাবে না।
যদি প্রিমিয়ার লিগের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন আপনার সম্ভাব্য মূল খেলোয়াড়, সুপার সাবরা বেঞ্চে বসে সময় নষ্ট করছেন। এটা বাংলাদেশ ফুটবলকে কেমন সমস্যার মুখে ফেলছে?
জাতীয় দলের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আমি কেবল তাদেরই দলে টানতে পারি, যারা মাঠে খেলছে। বদলি হিসেবে সময় পাওয়া, কিংবা স্কোয়াডেই না থাকা খেলোয়াড়দের জন্য পরের ক্যাম্পে সুযোগ পাওয়াটা কঠিন। এটা অবশ্যই জাতীয় দলকে সমস্যায় ফেলছে, কারণ আমরা আরও ভালো কিছু খেলোয়াড় পেতাম। কিন্তু আমাদেরকে খেলার মধ্যে থাকাদেরকে দলে টানতে হচ্ছে। হ্যাঁ, অবশ্যই এটা সমস্যার সৃষ্টি করছে।
দেখুন, আমি বলে দিতে পারব না খেলোয়াড়দের কী করা উচিৎ। তাদের সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। খেলোয়াড়দের পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতাও আছে যেখানে অর্থ অনেক বড় একটা ভূমিকায় থাকে। আমি কেবল তখনই খেলোয়াড়দের পরামর্শ দিতে পারব, যখন আমার কাছে তারা জানতে চাইবে। তবে দিনশেষে দলে তারাই থাকবে, যারা ম্যাচে খেলে, আর দলে থাকে।
শেষ কিছুদিনে লিগে কম বিদেশী খেলানো নিয়েও বেশ কথা বলেছেন…
দেখুন আমি বিদেশী খেলানোর পক্ষপাতি নই, ব্যাপারটা ঠিক নয়; আমি নিজেও বিদেশী। যদি তারা ফুটবল খেলতে, দলকে সাহায্য করতে বাংলাদেশে আসে, তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন, যখন তারা আসেন ভুল কারণে। এসে এখানকার খেলোয়াড়দের ভুল শিক্ষা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
যদি তারা মাঠের ফুটবলটা খেলতে আসে, খেলোয়াড়দের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে, তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। আজই দেখুন, রবসন দারুণ খেলছে কিংসের হয়ে। দারুণ খেলোয়াড়, বাংলাদেশ লিগের মানে সে অনেক ভালো। কিন্তু সে দেখায় কেমন মান আপনার বিদেশী খেলোয়াড়ে থাকা উচিৎ। প্রাকৃতিক ভাবে তার ভেতরে কিছু গুণ আছে। এমন খেলোয়াড়কে খেলতে দেখাটা দারুণ ব্যাপার। শেখ জামালে যেমন ওমর জোবে আছেন। দারুণ খেলোয়াড়, দলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। আমাদের খেলোয়াড়রা এমন সব খেলোয়াড় থেকে শিখতে পারবে অনেক কিছু। তাই, আমি বিদেশীদের খেলানোর বিপক্ষে নই। এ ব্যাপারটা বুঝি যে এখানে খেলোয়াড়রা মূল সব জায়গা দখল করে নেবে। কারণ, টেকনিক্যাল দিক থেকে তারা বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের চেয়ে অনেক এগিয়ে, আমাদের খেলোয়াড়দের মোটেও হেয় করছি না। তারা যদি বিদেশীদের কাছ থেকে শিখতে পারেন তাহলে তো বেশ ভালো। সেটাই করতে হবে আমাদের খেলোয়াড়দের।
সাম্প্রতিককালে আপনি অনেক বেশি বেশি খেলা দেখছেন ঢাকার বাইরের মাঠগুলোতে বসে। সেসব স্টেডিয়াম নিয়ে আপনার মতামত কী?
আমার জন্যে ঢাকার বাইরের স্টেডিয়ামগুলো ঘুরে ঘুরে দেখা বেশ ভালো ব্যাপার। আমার মনে হয়, এখানকার স্টেডিয়ামতেই শুধু নয়, ঢাকার বাইরের স্টেডিয়ামগুলোতেও মনোযোগ দেয়া উচিৎ আমাদের। কারণ, শুধু ঢাকাকেই নয়,পুরো বাংলাদেশকেই ফুটবলে সম্পৃক্ত করানো, জাতীয় দলের ম্যাচে তাদের সমর্থনটাকে আনা উচিৎ। আমি এ বছর তিন-চারটা ভিন্ন ভিন্ন স্টেডিয়ামে গিয়েছি। আমার মনে হয়েছে কুমিল্লা তাদের মধ্যে সেরা। সেখানকার পরিবেশটা দারুণ। অনেক দর্শক এসেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই জাতীয় দল ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের অন্য সব মাঠেও খেলুক, যেন সবাই এসে দেশের খেলা দেখতে পারেন। ভিন্ন ভিন্ন স্টেডিয়ামে, সেটা হতে পারে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লায়। আমরা চাই, জাতীয় দলের অংশ হোক সবাই, পরিবার গড়ে তুলুক। ঢাকার বাইরে যাওয়াটা একে সাহায্য করবে।
আপনি আপনার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরুতে আর্সেন ওয়েঙ্গারকে পেয়েছেন আর্সেনালে। তার সঙ্গে সবচেয়ে ভালো স্মৃতিটা কী?
আর্সেন আর্সেনালে এসে পুরো ক্লাবের কাঠামোটাকেই বদলে দিয়েছিলেন। তিনি ক্লাবটাকে জিততে শিখিয়েছিলেন। খাদ্যাভ্যাসে, অনুশীলনে পরিবর্তন এনেছিলেন। বেশ কিছু ইংলিশ খেলোয়াড়ের খেলোয়াড়ী জীবনটাকে আরও বড় করতে সাহায্য করেছিলেন। বাংলাদেশের মতো সেখানকার খেলোয়াড়রাও অনেক বছর আগে খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগী ছিল না। তিনি এসে সে মানসিকতাটা পরিবর্তন করেছিলেন, যা ক্লাবটাকেই বদলে দিয়েছিল। আর তাই আর্সেনকে নিয়ে আমার স্মৃতিটা বেশ ভালো।
বড় সময় ধরে ক্লাবে ছিলেন, তার অর্জনও অসামান্য। আপনি আর্সেনালে তার ক্যারিয়ারের দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন যে তিনি কোচ হিসেবে, ব্যক্তি হিসেবে কত ভালো ছিলেন।
আপনার ক্লাবে হার্বার্ট চ্যাপম্যান, আর্সেন ওয়েঙ্গারের মতো কোচেরা ছিলেন। তাদের কোচিং দর্শনের প্রভাব আপনার মাঝে কতোটা?
আর্সেনালের ইতিহাস আছে। আর তাদের ইতিহাসটা তাদের কর্মপদ্ধতির, পেশাদারিত্বের। আপনি সেখানকার যে কাউকে জিজ্ঞেস করবেন, তারা আপনাকে বলে দেবে খেলোয়াড়দেরকে গড়ে তোলা, তাদের পরিচর্যার ব্যাপারে ক্লাবটা কতোটা পেশাদার। হ্যাঁ, আর্সেন এসে ক্লাবটাকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিলেন। এরপর দুজন কোচ কাজ করেছেন ক্লাবের সঙ্গে, ঠিকঠাক কাজ করেনি। আশা করছি, আর্তেতা ক্লাবে নিজের দর্শনকে প্রয়োগ করতে পারবে, এবং ক্লাবটাকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবে। ক্লাবটাকে এখনো অনুসরণ করি, এখনো সমর্থন করি। অনেক বছর আগে ক্লাবটার অংশ হতে পেরেছিলাম, এজন্যে আমি গর্বিত।
ঢাকায় আপনার জীবন কেমন? খুবই ব্যস্ত শহর, এখানকার যানজট। সবকিছু মিলিয়ে কেমন কাটছে?
হ্যাঁ, ঢাকা একটু ব্যস্ত শহর। এখানে বেশ কিছু দুর্দান্ত মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। সবাই বেশ ভালো, সাপোর্টিভ আর খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। ঢাকা, বাংলাদেশের কোনো জায়গা নিয়েই সমস্যা নেই আমার। এটা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। হ্যাঁ, আমি আমার পরিবারকে মিস করি, এটা প্রত্যাশিতই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষজন ব্যাপারটাকে ভুলিয়ে দেয়। আমাকে নিয়ে তারা ইতিবাচক, আমার যথেষ্ট যত্নও করে তারা।
ফুটবলের বাইরে এমন কোনো স্মৃতি যা বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেও মনে পড়বে?
হ্যাঁ অবশ্যই। এখানকার মানুষ, তাদের জীবনযাত্রা, এখানকার জায়গাগুলো…সবকিছু মিলিয়ে একটা ভালো স্মৃতি নিয়েই যাব যখন যাই। আমি আগেও বলেছি, এখানকার কিছু মানুষের কথা। এরা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ, বেশ ভালো মানুষ; যারা হয়তো আমি বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেও আমার বন্ধু থাকবেন। এ নিয়ে আমি গর্বিত আর আমার মনে খুব যত্ন করেই আগলে রাখবো ব্যাপারগুলোকে।
বাংলাদেশের কোন খাবার মনে ধরেছে?
চিকেন বিরিয়ানি। বিফ কাচ্চিটাও বেশ ভালো লেগেছে এখানকার।
বাংলাদেশে প্রিয় জায়গা?
সিলেট। এ জায়গাটা বেশ পছন্দ হয়েছে আমার।
সব শেষে চিরায়ত কিছু প্রশ্ন। মেসি নাকি রোনালদো?
লিওনেল মেসি।
পেলে নাকি ম্যারাডোনা?
পেলে।
পেলে-ম্যারাডোনা নাকি মেসি-রোনালদো? কাদের দ্বৈরথটা সেরা?
আমার মতে মেসি-রোনালদো। কারণ তারা সমসাময়িক, একই লিগে খেলেছে, একে অপরের বিপক্ষে খেলেছে। আমার চোখে তাই তাদের দ্বৈরথটাই সেরা।
সৌজন্যে-ঢাকা পোস্ট
Discussion about this post