আযমাইন রাফিন
ক্রিকেটের বেলায় বাঙালি বরাবরই বাড়াবাড়ি রকমের আশাবাদী জাতি।
অসম্ভব জেনেও নিশ্চিত পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বাঙালি হৃদয়ে লালন করে কোন এক রাজপুত্রের আগমনের অব্যক্ত স্বপ্ন, রূপকথার গল্পের মতো নিশ্চিত পতনের মুখ থেকে তুলে নিয়ে যিনি লিখবেন বিজয়োপাখ্যান।
তবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সেদিন যা হলো, ‘গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা’ও মাঠে উপস্থিত দর্শকদের বেশিরভাগকে ধরে রাখতে ব্যর্থ। গুটিকতক যে কয়জন দর্শক মাঠে ছিলেন, অসম্ভব কিছু দেখার চেয়ে টিকেটের টাকার শেষাংশ অবধি উসুল করাই বোধহয় তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল। তবে মাঠের দর্শকদের সমর্থন হারালেও দমে যাননি একজন। ‘হারার আগে হারবো না’ মনোভাব নিয়ে সেদিন ইংরেজ বোলারদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি, ধ্বংসস্তূপের ভেতর দাঁড়িয়ে গেয়েছিলেন সৃষ্টির গান। শফিউলকে সাথে নিয়ে রচনা করেছিলেন ‘ইংরেজবধ কাব্য’, আর বাংলাদেশ দলকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়। আর কেউ নন, তিনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ‘দ্য সাইলেন্ট কিলার’।
বলছিলাম ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচের গল্পটা। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের স্পিনারদের তাণ্ডবে বেশি দূর যেতে পারেনি ইংল্যান্ড। আড়াইশ’র মধ্যেই ইনিংস গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ বাহিনী। জবাবে তামিম-ইমরুলের ব্যাটে সহজ জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ মড়ক! সহজ জয়ের রাস্তা হারিয়ে ভীষণ দুর্গম এক পথের সম্মুখীন হলো বাংলাদেশ। জয়ের জন্য বাকি তখনো প্রায় পঞ্চাশ রান, হাতে উইকেট মাত্র দুটি! স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন শুধু মাহমুদউল্লাহ, সঙ্গী হিসেবে পেলেন শফিউলকে। বাকিটা ইতিহাস, নিজে খেললেন, শফিউলকে দিয়ে খেলালেন। দুজনের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশ যখন নোঙর করছে জয়ের বন্দরে, ম্যাচের তখনো এক ওভার বাকি। অসম্ভবকে সম্ভব করে মহাকাব্যিক এক জয় এনে দিয়ে নায়ক হলেন রিয়াদ।
বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহর ভূমিকাটাই এমন, বিপদে পড়া দলকে উদ্ধার করতে তাঁকেই এগিয়ে আসতে হয়। চার বছর পরের কথাই ধরা যাক। আরেক বিশ্বকাপ, আরেক বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ। ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডের ঐ ম্যাচে শুরুতেই বিপর্যয়ে বাংলাদেশ। দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর সৌম্যকে নিয়ে শুরুর বিপর্যয় সামলালেন রিয়াদ, পরে মুশফিককে সাথে নিয়ে দলকে পৌঁছে দিলেন সম্মানজনক সংগ্রহে। দলীয় সংগ্রহের পথে নিজের নামেও তৈরি করলেন একটি রেকর্ড, শত রেকর্ডের ভাঙাগড়ার খেলায় যে রেকর্ড থাকবে চির অক্ষত, চির অমলিন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম শতক! এর আগে কাছাকাছি গিয়েও পারেননি তামিম-আশরাফুল, পরে শতক হাঁকিয়েছেন সাকিব-মুশফিক। তাতে কী? রেকর্ডখাতায় দেশের হয়ে বিশ্বকাপে প্রথম শতকধারীর নাম তো আর পাল্টাচ্ছে না। আর সে রেকর্ডের এমনই মহিমা, নাটকীয় ম্যাচের শেষভাগে রুবেলের অমন আগুনঝরানো বোলিংয়ের পরও ম্যাচের নায়ক মাহমুদউল্লাহ।
‘রিয়াদ-রূপকথা’ এখানেই শেষ নয়। পরের ম্যাচে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবারো শুরুর বিপর্যয়ে বাংলাদেশ। সৌম্যকে সাথে নিয়ে আবারো হাল ধরলেন মাহমুদউল্লাহ, দলকে সম্মানজনক সংগ্রহে পৌঁছে দেওয়ার পথে দ্বিগুণ করলেন বিশ্বকাপে নিজের সেঞ্চুরি সংখ্যাকে। সেঞ্চুরির পর তাঁর উড়ন্ত চুমুর উদযাপনের ছবি ছাপা হলো পরের দিনের পত্রিকার প্রথম পাতায়, মাহমুদউল্লাহ পরিণত হলেন জনতার নায়কে।
মাহমুদউল্লাহর খেলোয়াড়ি জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আগে আসেনি। ’১১ বিশ্বকাপে ইংরেজবধের নায়ক ছিলেন বটে, তবে সে খ্যাতি উবে যেতে বেশি সময় লাগেনি। এরপর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার প্রশ্ন যেমন আসেনি, তেমনি সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের মতো ‘নায়ক’ উপাধিও জোটেনি কপালে। যে সময়ের কথা বলছি, ঐ সময়ে ব্যাটিং অর্ডারে তাঁর অবস্থান কখনোই সুস্থির ছিল না। টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের সুযোগ আসেনি বললেই চলে, ছয়-সাত-আটে ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে বেশিরভাগ সময়ে। অবশ্য মাহমুদউল্লাহও পারফরম্যান্স দিয়ে কখনোই টপ অর্ডারের জায়গা দাবি করতে পারেননি জোরগলায়। তবে ’১৫ বিশ্বকাপে তাঁকে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ দেন কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। সুযোগটা দুই হাতে কাজে লাগান মাহমুদউল্লাহ। তাঁর সাদা বলের ক্যারিয়ারের সেরা সময়ের শুরুটাও ওখানেই। বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠের তিন সিরিজে ওপেনারদের ঝলমলে পারফরম্যান্সে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন কম। তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তখনই আলো ছড়িয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটে-বলে রান-উইকেট পেয়েছেন, পরের বছর ঘরের মাঠে এশিয়া কাপে খেলেছেন দুর্দান্ত। টি-২০ ফরম্যাটের এশিয়া কাপের প্রায় প্রতি ম্যাচেই শেষের ঝড় তুলেছেন মাহমুদউল্লাহ, পাকিস্তানের বিপক্ষে মাশরাফিকে সাথে নিয়ে জিতিয়েছেন দুর্দান্তভাবে।
২০১৭ সাল।
নাসির-সাব্বিরের বাজে ফর্মের কারণে একজন ভালো ফিনিশারের অভাব বোধ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ফিনিশিংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় তাই ডাক পড়লো মাহমুদউল্লাহর, ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বর জায়গাটা হারাতে হলো মুশফিকুর রহিমের কাছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও মাহমুদউল্লাহর মূল ভূমিকা ছিল ইনিংসের সুন্দর সমাপ্তি টানা। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম-মুশফিকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পরও সেই সুন্দর সমাপ্তিটা টানা হয়নি, ফলাফল তিন শতাধিক রান করেও বড় পরাজয়। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের ব্যাটিং-ব্যর্থতার পরও বৃষ্টির আনুকূল্যে এক পয়েন্ট পেলো বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচকে সামনে রেখে টিম ম্যানেজমেন্টে তখন রাজ্যের হিসাব ‘কী করিলে কী হইবে’। তবে সব হিসাব ছাপিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কার, বাংলাদেশকে জিততে হবে। বাঁচা-মরার সেই ম্যাচে বোলারদের ভালো বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে কিউইদের তিনশ’র নিচে আটকালো বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে বোল্ট-সাউদি-মিলনেদের তোপের মুখে পড়লো বাংলাদেশ, ৩৩ রানেই নেই ৪ উইকেট, তামিম-সৌম্য-সাব্বির-মুশফিক সবাই ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন একে একে। এমন এক নাজুক পরিস্থিতিতে সাকিবের সাথে জুটি বাঁধলেন মাহমুদউল্লাহ। দুজনেই জানতেন কী করতে হবে, চুপচাপ নিজেদের কাজ করে যেতে লাগলেন। ভালো বলগুলো দেখেশুনে খেললেন, খারাপ বলে দিলেন উপযুক্ত শাস্তি। টিভির সামনে উপস্থিত বাংলাদেশী সমর্থকেরা হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, নিশ্চিত পরাজয় ভেবে যে ম্যাচ থেকে তাঁরা মন ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, সেই ম্যাচে জয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ! ট্রেন্ট বোল্টের বলে স্ট্রেট ড্রাইভ করতে গিয়ে সাকিব যখন বোল্ড হলেন, জয় থেকে তখন হাতছোঁয়া দূরত্বে বাংলাদেশ, সাকিবের নিজের নামের পাশেও জ্বলজ্বল করছে তিন অঙ্কের জাদুকরী সংখ্যা। মোসাদ্দেককে সাথে নিয়ে সেই ছোট্ট পথটুকু পাড়ি দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ভুল করেননি সাদা বলের ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিটা তুলে নিতে। সাকিব-রিয়াদের জোড়া শতকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে পৌঁছাতে নিজেদের কাজটুকু করে রাখলো বাংলাদেশ, ২০০৫ সালের পর কার্ডিফে লেখা হলো আরেক রূপকথা। জয় নিশ্চিতের পর ড্রেসিংরুমের বারান্দায় অধিনায়ক মাশরাফির উদ্বাহু উদযাপন হয়ে গেলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক অমর ছবি।
সাদা বলের ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহর সুসময় অব্যাহত ছিল পরের বছরগুলোতেও। ওয়ানডেতে অনেক ম্যাচে সফলতার সাথে হাল ধরেছেন, ফিনিশিং করেছেন, সাকিবের অনুপস্থিতিতে তো অধিনায়কত্ব করেছেন টি-২০তে। তাঁর অধীনে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দুই শতাধিক রান তাড়া করে জয়ের মুখ দেখে বাংলাদেশ। একই টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ম্যাচে খেলেছিলেন বাংলাদেশের টি-২০ ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য স্মরণীয় সেই ম্যাচের শেষ ৪ বলে প্রয়োজনীয় ১২ রানের সমীকরণ সমাধান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। নাটকীয় সেই ম্যাচের মহানাটকীয় সমাপ্তি দিয়েছিলেন শেষের আগের বলে ছক্কা মেরে। ইসুরু উদানার লেগ স্ট্যাম্পের ওপর করা বলটা যখন স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে পড়ছে, ধারাভাষ্যকক্ষে আতহার আলী-রোশান আবেসিংহে আর ব্রেট লির সমন্বিত ‘ওওওও’ চিৎকারটা এখনো বাঙালির কানে বাজে। রোশান আবেসিংহ বিস্ময়াভিভূত কণ্ঠে বলছেন, ‘হোয়াট আ ম্যাগনিফিশেন্ট শট, হোয়াট আ ম্যাগনিফিশেন্ট শট’, ওদিকে ব্রেট লি আরো অধিক বিস্ময়ে হাঁ করে আছেন, আহা!
তবে মাহমুদউল্লাহর গল্পটা শুধুই রূপকথার নায়কের মতো ‘শুভ সমাপ্তি’র নয়। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ফিনিশার হয়েও মাহমুদউল্লাহ ব্যর্থ হয়েছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে, অনেক ক্ষেত্রে বেশ দৃষ্টিকটুভাবেই। ’১২ এশিয়া কাপে ভারত-শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন, অথচ ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন শেষ বলে চার রান নিতে ব্যর্থ হলেন শাহাদাত হোসেন, মাহমুদউল্লাহ তখন নন-স্ট্রাইকে হতাশ নয়নে দাঁড়িয়ে। ’১৬ এশিয়া কাপে দুর্দান্ত ফিনিশি দক্ষতা দেখিয়ে একই দায়িত্ব পেয়েছিলেন টি-২০ বিশ্বকাপেও। সেখানে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে সমাধান করতে পারেননি ৩ বলে ২ রানের সহজ সমীকরণ। আগের বলে মুশফিক ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন দেখেও তিনি ছক্কা মেরে নায়ক হতে চেয়েছিলেন। ফলাফল, পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়, নিশ্চিত জয়ের ম্যাচে বাংলাদেশের ১ রানে হার। ’১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন-মিরাজ দুর্দান্ত শুরু এনে দেওয়ার পরও সিনিয়রদের ব্যর্থতায় স্বপ্নভঙ্গ, আবারো ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ। তবুও, ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষমার অযোগ্য ভুলগুলোকে আড়ালে রাখলে মাহমুদউল্লাহর সাদা বলের ক্যারিয়ারকে মোটামুটি সফলই বলা যায়।
তবে মুদ্রার অপর পিঠের মতোই বিপরীত মাহমুদউল্লাহর লাল বলের ক্যারিয়ার। ২০০৯ এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক, অভিষেকেই পেয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। কিন্তু এরপর বোলিংটা করেছেন অনিয়মিতভাবে। দলের মূল স্পিনার ছিলেন না কোন কালেই, উইকেটও পেয়েছেন কালেভদ্রে। তাঁর মূল পরিচয় যে ব্যাটিং, সেই ব্যাটিংয়েও সফলতা এসেছে কম। ২০১০ সালে, নিজের চতুর্থ টেস্টেই ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস, পরের টেস্টে হ্যামিল্টনে সেঞ্চুরিও পেয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। কিন্তু এরপর যেন খরা নেমে এলো মাহমুদউল্লাহর টেস্ট ব্যাটিং ক্যারিয়ারে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আর কোন সেঞ্চুরি তো নেই-ই, উইকেটে সেট হয়ে আউট হয়েছেন অগণিতবার। দিনের শেষ বলে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হয়ে দলকে চাপে ফেলেছেন অনেক বার। ফলাফল হিসেবে বাদও পড়েছেন টেস্ট দল থেকে, খেলতে পারেননি শততম টেস্টে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐ টেস্ট ছাড়াও মিস করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত সিরিজ। এরপর অবশ্য আবার ফিরেছেন সাদা পোশাকের দলে, ২০১৮ সালে দেশের মাটিতে সেঞ্চুরিও করেছেন জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। পরের বছর হ্যামিল্টনে সেঞ্চুরি করেছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, দলের ইনিংস পরাজয় অবশ্য তাতে এড়াতে পারেননি। সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তান সফরে আবারো ব্যর্থতার পর বাদ পড়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট দল থেকে।
সাদা বলের ক্রিকেটে এক হাতে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, সমসাময়িক সাকিব-তামিম-মুশফিকদের চেয়ে সংখ্যায় তা কম হলেও, গুরুত্বের দিক দিয়ে তা পিছিয়ে নেই কোন ভাবেই। ওয়ানডেতে তাঁর তিনটি সেঞ্চুরির তিনটাই এসেছে দেশের বাইরে, আইসিসি টুর্নামেন্টে। ফিনিশিং অভিজ্ঞতা আর সামর্থ্যে এখনো দেশের অন্যতম সেরা তিনি। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটে নিজের সেরাটা কখনোই দিতে পারেননি তিনি। টেস্টে সেঞ্চুরি, পাঁচ উইকেট এবং উইকেটরক্ষক হিসেবে ডিসমিসালের কীর্তি আছে তিনি ছাড়া মাত্র একজনের, কিন্তু অধারাবাহিকতা আর সেট হয়ে উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার ধারাবাহিকতায় তাঁর টেস্ট খেলার সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। বয়সটাও তো কম হলো না, ২০০৪ সালে তাঁর সাথে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে খেলা কেউই এখন নেই জাতীয় দলের আশেপাশে। সব মিলিয়ে সাদা পোশাকে তাঁর জায়গায় নতুন মুখ দেখতে চাওয়াটা দোষের কিছু নয়।
তবে ক্যারিয়ারের সূর্য যতই পশ্চিমে হেলে পড়ুক না কেন, মাহমুদউল্লাহ অবশ্যই চাইবেন শেষ বিকেলের আলোয় আরেকবার ঝলমলে হয়ে উঠতে। পুরো ক্যারিয়ার তো ‘নীরব ঘাতক’ হয়েই কাটালেন, শেষাংশে না হয় পারফরম্যান্স দিয়ে একটু সরব হলেন!
Discussion about this post