ফুলহামের কাছে আজ নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডে ১-০ গোলে হেরেছে লিভারপুল। তা লিভারপুল তো এখন অ্যানফিল্ডে খেললেই হারে! আজকের হারটিতে একটা ‘ছক্কা’ মারলেন সালাহ-মানেরা। অ্যানফিল্ডে এটি লিগে লিভারপুলের টানা ষষ্ঠ হার। রেকর্ড বলছে, টানা তো দূরে থাক, এর আগে লিভারপুল লিগে নিজেদের মাঠে সর্বশেষ ছয় ম্যাচ হেরেছিল ১৯৫৩-৫৪ সালে। সে মৌসুমে লিভারপুল লিগের পয়েন্ট তালিকায় সবার শেষে ছিল। সর্বশেষবার অবনমিতও হয়েছিল সেই মৌসুমেই।
অবনমনের শঙ্কা-টঙ্কা করার মতো খারাপ সময় এখনো আসেনি লিভারপুলের। এই মানের ক্লাবের অবনমন নিয়ে শঙ্কা হয়তো স্রেফ কৌতুক কিংবা বিদ্রূপেরই ব্যাপার। তবে মাঠে যে সময় চলছে লিভারপুলের, এর চেয়ে খারাপ সময়ও হয়তো আর কল্পনা করতে পারতেন না দলটির সমর্থকেরা। লিগ শিরোপা ধরে রাখার আশা তো কবেই শেষ, টানা হারের এই ছক্কায় এখন লিগে লিভারপুলের শেষ আশা, অর্থাৎ সেরা চারে থেকে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়ার আশাও অক্কা পেল বলে!
২৮ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগের পয়েন্ট তালিকায় এই মুহূর্তে ৭ নম্বরে লিভারপুল। সেরা চারের দৌড়ে থাকা অন্য দলগুলোর সঙ্গে তুলনায় গেলে এখন লিভারপুল সমর্থকদের মুখ পাংশুবর্ণ হওয়ার শঙ্কা। চারে থাকা চেলসির চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে ৪ পয়েন্ট পিছিয়ে ক্লপের দল। পাঁচে থাকা এভারটনের চেয়ে ২ ম্যাচ বেশি খেলে ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে, ছয়ে থাকা ওয়েস্ট হামের চেয়ে ২ ম্যাচ বেশি খেলে ২ পয়েন্ট পিছিয়ে।
এই মুহূর্তে লিভারপুলের পেছনে থাকা দলগুলোও লিভারপুলকে টপকে গেল বলে! ৮ নম্বরে থাকা টটেনহাম ২ ম্যাচ কম খেলে লিভারপুলের চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট পিছিয়ে, ৯ নম্বরে থাকা অ্যাস্টন ভিলা ২ ম্যাচ কম খেলে পিছিয়ে মাত্র ৩ পয়েন্টে।
তিন দিন আগে চেলসির কাছে ১-০ গোলে হেরে অ্যানফিল্ডে লিগে টানা পঞ্চম হারই ছিল ক্লাবের ১২৮ বছরে রেকর্ড, ষষ্ঠ হারে তো নিজেদেরই ছাপিয়ে গেল লিভারপুল! সেটি যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে আজ দলে ছয়টি বদল এনেছিলেন ক্লপ।
শুধু গোলকিপার আলিসন, লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসন, সেন্টারব্যাক ন্যাট ফিলিপস, মিডফিল্ডার জর্জিনিও ভাইনালদাম আর ফরোয়ার্ড মো সালাহ একাদশে জায়গা ধরে রেখেছিলেন। ফিরমিনো আর ওজান কাবাক ছিলেন না চোটে, বাকিরা ফর্মের দোষে।
কিন্তু এত বদলেও লাভ হলো কী! শুধু খেলোয়াড়ের নাম বদলাল, গত কদিনে লিভারপুলের খেলার ধরন একই থাকল। যেন দলটার কোনো প্রাণ নেই, কোনো তাড়না নেই, ফুটবল ম্যাচে যে জয়-পরাজয়ের ব্যাপার আছে, সে বোধও নেই। সন্ন্যাসরোগ বলা যায় বটে!
২০২১ সালে নিজেদের মাঠে আগের ছয় ম্যাচে মাত্র ১ গোল পাওয়া (সেটিও পেনাল্টি থেকে) লিভারপুল প্রথমার্ধে ফুলহামের রক্ষণে যেন ফুলের টোকা দিতে পেরেছে শুধু। ফুলহাম গোলকিপার আলফঁস আরেওলাকে কোনো পরীক্ষাই দিতে হয়নি। চাইলে ঘুম-টুমও দিয়ে নিতে পারতেন আরেওলা।
৪-৩-৩ ছকে রক্ষণকে ওপরে রেখে (হাইলাইন ডিফেন্স) খেললেও প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা সেভাবে না থাকলে কী হয়, সেটি গত কয়েক ম্যাচের মতো আজও টের পেয়েছে লিভারপুল। প্রতিপক্ষ রক্ষণে জমাট বেঁধে শুধু গতিময় উইঙ্গারকে কাজে লাগানোর কৌশলে খেলছে, রক্ষণ থেকে লম্বা পাস দিয়ে লিভারপুলকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। বার্নলি, ব্রাইটন, এভারটন, চেলসির পর আজ ফুলহামও তা-ই করল।
প্রথমার্ধে বারবার লিভারপুলকে কাঁপিয়ে দিয়েছে ফুলহাম। তবে ৪৫ মিনিটে গোলটা পেয়েছে লিভারপুল ফরোয়ার্ড মো সালাহর ভুলে। ফুলহামের কাভালেইরোর ফ্রি-কিক বক্সে ভেসে এলে সেটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন লিভারপুল লেফটব্যাক রবার্টসন, বল যায় নিজেদের বক্সের ঠিক প্রান্তে দাঁড়ানো সালাহর কাছে। কিন্তু বল নিয়ে কী করবেন, তা ঠিক করতেই মিনি সেকেন্ড সময় নেন সালাহ, অতটুকুই যথেষ্ট হলো ফুলহাম মিডফিল্ডার মারিও লেমিনার জন্য। বল কেড়ে নিয়ে চোখধাঁধানো আড়াআড়ি শটে বল জড়িয়ে দেন জালে।
অবনমন বাঁচাতে লড়তে থাকা ফুলহাম দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণে ১০ জন রেখে খেলবে, অনুমিত ছিল। এই ৪৫ মিনিট হলো তাই ‘লিভারপুলের আক্রমণ বনাম ফুলহামের রক্ষণ’ খেলা। কিছু সুযোগ পেয়েছে বটে লিভারপুল। ৪৮ মিনিটে দিয়োগো জোতার ভলি ফিরিয়ে দেন ফুলহাম গোলকিপার আরেওলা। বদলি নামা মানের দুর্বল হেড ৭০ মিনিটে ফেরে বারে লেগে। পাঁচ মিনিট পর শাকিরির শট যায় পোস্ট ঘেঁষে। যোগ করা সময়ে রবার্টসনের ক্রসে মানে পা ছোঁয়ানোর আগমুহূর্তে ফিরিয়ে দেন ফুলহাম ডিফেন্ডার অ্যান্ডারসন।
Discussion about this post