খেলাধুলা ডেস্ক
জুভেন্টাসে প্রথম বছরে কোয়ার্টার ফাইনালে, দ্বিতীয় বছরে শেষ ষোলোতে বিদায়ের পর এবারও শেষ ষোলোতেই শেষ রোনালদোর চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিযান। গত দুই বছর আয়াক্স ও লিওঁর হাতে বিদায় নেওয়ার পর এবারে রোনালদোদের ‘ঘাতক’ হিসেবে আবির্ভূত এফসি পোর্তো—রোনালদোরই দেশ পর্তুগালের ক্লাব। গত রাতে দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে জুভেন্টাস ৩-২ গোলে জিতলেও অ্যাওয়ে গোলের গ্যাঁড়াকলে বিদায় নিয়েছেন রোনালদোরা।
এর আগের দুই বছরে তবু দল বিদায় নিলেও গোল করে রোনালদো ছিলেন আলোচনায়। প্রথম লেগে পোর্তোর মাঠে ২-১ গোলে হেরে আসা জুভেন্টাসকে বাঁচানোর জন্য কালও রোনালদোর দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ক্লাবটার সমর্থকেরা। এমন রাতগুলোতেই তো জ্বলে ওঠেন রোনালদো! এই ম্যাচের জন্য লিগে লাৎসিওর বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেও রোনালদোকে বিশ্রামে রেখেছিলেন জুভ কোচ আন্দ্রেয়া পিরলো, সে ম্যাচে মৌসুমে নিজেদের সেরা ফুটবলটা খেলেই জিতেছে জুভেন্টাস।
প্রথম লেগে মেহদি তারেমি ও মুসা মারেগার গোলের জবাবে সান্ত্বনাসূচক গোল করেছিলেন জুভেন্টাসের ইতালিয়ান উইঙ্গার ফেদেরিকো কিয়েসা। দ্বিতীয় লেগেও তিনি বলতে গেলে একাই টানলেন দলকে। দুই গোল করেছেন, জুভেন্টাসের হয়ে আরেক গোল ফরাসি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান রাবিওর। ওদিকে পোর্তোর হয়ে জোড়া গোল করেছেন সের্হিও অলিভিয়েরা। একটি অ্যাওয়ে গোল বেশি করার সুবাদে পরের রাউন্ডে উঠে গেছে পোর্তো।
রোনালদোদের বেদনা আরও বাড়িয়েছে একটি তথ্য। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন পোর্তোর ইরানিয়ান স্ট্রাইকার মেহদি তারেমি। তা সত্ত্বেও ১০ জনের পোর্তোকে আরও একটি গোল বেশি দিয়ে কোয়ার্টারে উঠতে পারেনি জুভেন্টাস।
৪-৪-২ ছকে আক্রমণভাগে রোনালদোর সঙ্গী ছিলেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতা। একই ছকে মাঠে নেমেছিল পোর্তোও। ম্যাচের তিন মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় জুভেন্টাস। ডান প্রান্ত থেকে কলম্বিয়ান রাইটব্যাক হুয়ান কুয়াদ্রাদোর ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে আরেকটু হলেই গোল করে দিচ্ছিলেন মোরাতা, আর্জেন্টাইন গোলকিপার অগুস্তিন মার্চেসিনের কল্যাণে সে যাত্রায় বেঁচে যায় পোর্তো। পরের মিনিটেই পোর্তো বুঝিয়ে দেয়, শুধু জুভেন্টাসের আক্রমণ নাক–মুখ খিঁচে সহ্য করার জন্যই তুরিনে আসেনি তারা। প্রথম লেগে জুভেন্টাসকে বলতে গেলে বিবশ করে রেখেই জিতেছিল, দ্বিতীয় লেগেও ছেড়ে কথা কইল না পর্তুগিজ ক্লাবটা।
১৭ মিনিটে এই তারেমির কল্যাণেই পেনাল্টি পায় পোর্তো। জুভেন্টাসের তুর্কি সেন্টারব্যাক মেরিহ দেমিরালের ট্যাকলে বক্সের মধ্যে পড়ে যান তারেমি। স্পট থেকে গোল করতে একেবারেই সমস্যা হয়নি সের্হিও অলিভিয়েরার। ২৭ মিনিটে কুয়াদ্রাদোর আরেকটা ক্রস আয়ত্তে এনে মোরাতা শট করলেও আবার চীনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে যান মার্চেসিন।
৩০ মিনিটে কিয়েসার একটা শটও একইভাবে আটকে দেন এই আর্জেন্টাইন গোলকিপার। ওদিকে জুভের ওয়েলশ মিডফিল্ডার অ্যারন র্যামসেও বেশ কয়েকটা গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। প্রথমার্ধে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় পোর্তো।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু পর পোর্তোকে আরও ভালোভাবে চেপে ধরে জুভেন্টাস। রক্ষণ করার পাশাপাশি রক্ষণভাগ থেকে নিখুঁত লং বল দেওয়ার জন্য ইতালিয়ান সেন্টারব্যাক লিওনার্দো বোনুচ্চির সুনাম অনেক দিনের, তাঁরই আরেকটা নিখুঁত লং বলে পোর্তোর রক্ষণভাগে ফাটল ধরে। বোনুচ্চির লং বল আয়ত্তে এনে গোল করার জন্য কিয়েসার পাতে সাজিয়ে দেন রোনালদো। ডান পায়ের দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে দলকে সমতায় ফেরান এই ইতালিয়ান রাইট উইঙ্গার।
এরপরই বিচিত্র কারণে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তারেমি। দুই মিনিট আগেই একটা হলুদ কার্ড দেখেছিলেন, দুই মিনিট পর রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালেও জোরে লাথি মেরে বল বাইরে পাঠিয়ে দেন এই ইরানিয়ান স্ট্রাইকার। রেফারির বাঁশি বাজানোর পরও কেন এই অবাধ্যতা, সে কারণে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানো হয় এই স্ট্রাইকারকে। ১০ জনের দল নিয়ে খেলা শুরু করে পোর্তো।
তারেমি চলে যাওয়ার ঠিক পর পর দুর্দান্ত একটা গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন জুভ ফরোয়ার্ড কিয়েসা। মার্চেসিনকে বোকা বানিয়ে গোলমুখে চলে গেলেও বর্ষীয়ান পর্তুগিজ সেন্টারব্যাক পেপের কারণে গোল করতে পারেননি এই উইঙ্গার, পোস্টে লাগিয়েছেন। গোটা ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক সেন্টারব্যাক পেপে।
ছয় মিনিট পর যদিও আর ব্যর্থ হননি কিয়েসা। গোটা ম্যাচেই ডান প্রান্ত থেকে কুয়াদ্রাদোর ক্রসগুলো জুভেন্টাসের আক্রমণের অন্যতম অস্ত্র ছিল। তেমনই এক ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন কিয়েসা।
৭৮ মিনিটে কুয়াদ্রাদোর ক্রস থেকে রোনালদো গোল করার এক সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। যোগ করা সময়ে কুয়াদ্রাদো নিজেই এবার গোল করার জন্য এগিয়ে আসেন, যদিও পারেননি। তাঁর বিদ্যুৎ–গতির শট ক্রসবারে লেগে পোর্তোকে বাঁচিয়ে দেয়। ৯০ মিনিট শেষে জুভে ২-১ গোলে এগিয়ে, দুই লেগে মিলিয়ে তখন ৩-৩ সমতা। শুরু হয় অতিরিক্ত সময়ের খেলা।
১১৫ মিনিটে সের্হিও অলিভিয়েরার ফ্রি-কিকে এগিয়ে যায় পোর্তো, মহামূল্যবান বাড়তি এক অ্যাওয়ে গোলও পেয়ে যায় তাতেই। ঠিক এক মিনিট পর রাবিওর হেডে আবারও ম্যাচে এগিয়ে যায় জুভেন্টাস।
কিন্তু ওই যে একটা বাড়তি অ্যাওয়ে গোল, তাতেই কপাল খুলে যায় পোর্তোর। আর আরেকবার হতাশায় মুখ ঢাকতে হয় রোনালদোদের। ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে ডাচ্ সেন্টারব্যাক ম্যাটাইস ডি লিখট পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি সাড়া দেননি।
Discussion about this post