খেলাধুলা ডেস্ক
চার বছর আগে পিএসজির বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর অসাধারণ এক গল্প লিখেছিল বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই ২০১৬-১৭ আসরে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে ৪-০ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনা। ফিরতি পর্বে ন্যু ক্যাম্পে ৬-১ ব্যবধানে অবিশ্বাস্য জয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে পা রেখেছিল কাতালানরা।
এবারও ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে টিকে থাকতে হলে নতুন রুপকথার জন্ম দিতে হবে রোনাল্ড কোম্যানের দলকে। ইউরোপ সেরার আসরে ন্যু ক্যাম্পে ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পের দুর্দান্ত হ্যাট্রিকে ৪-১ গোলে হেরে বেশ পিছিয়ে আছে মেসিরা। স্প্যানিশ জায়ান্টদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তাই পিএসজির মাঠ থেকে অন্তত ৪-০ গোলের জয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।
এমনিই নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের অধীনে শুরুটা অগোছালো থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মে ফিরেছে কাতালানরা। বার্সেলোনা নামের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ নৌকাকে এখন অনেকটাই স্থিতিশীল করে এনেছেন এই ডাচ কোচ। লিগের শুরুটা বেশ খারাপ হলেও টানা ১২ ম্যাচ অপরাজিত থেকে উন্নতির আশা করছে বার্সা। সর্বশেষ কোপা দেল রে’র ম্যাচে সেভিয়ার বিপক্ষে প্রথম লেগে হেরেও ফিরতির লেগে দুর্দান্ত কামব্যাক ম্যাচটি বাড়তি অনুপ্রেরণা দিবে মেসিদের।
অন্যদিকে চলতি মৌসুম লিগে উথান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ফরাসি ক্লাব পিএসজি। গেল দশকে ফরাসি লিগে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখানো দলটি ২৮ ম্যাচ খেলে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে অবস্থান করছে। যদিও সর্বশেষ ৫ ম্যাচের ৪টি জয় লিগ ধরে রাখার লড়াইয়েও টিকে রাখছে লেস প্যারিসিয়ানদের।
কাগজে-কলমে গত কয়েক বছরে পিএসজি কখনোই চ্যাম্পিয়নস লিগে টপকাতে পারেনি বার্সেলোনাকে। আগের নকআউট রাউন্ডে দুই দল যে তিনবার মুখোমুখি হয়েছে, প্রত্যেকবারই পরের রাউন্ডে উঠেছে বার্সেলোনা। তাই, বলা যায় নতুন ইতিহাসের অপেক্ষা করছে পিএসজির সামনে।
কয়েক বছর ধরেই চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট স্টেজে প্রতিপক্ষের মাঠ এক অন্যরকম ধাধার নাম কাতালানদের কাছে। দুর্দান্ত ফর্মে থেকেও সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিপক্ষের মাঠে হেরে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে হয় বার্সাকে। ২০০৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ওল্ড ট্রাফোর্ডে জয়ের পর ইউরোপ সেরা মঞ্চে প্রতিপক্ষের মাঠে সর্বশেষ নয় ম্যাচে কেবল একটি জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। এই সময়ে ৯ ম্যাচে কাতালানরা গোল করেছে মাত্র তিনটি। তাই মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে রাতেও পিছিয়ে রাখবে মেসিদের।
এদিকে মুখোমুখি লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বার্সেলোনার বিপক্ষে দারুণ খেলছে পিএসজি। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে কাতালানদের বিপক্ষে সর্বশেষ ৩ ম্যাচের দুটোই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে প্যারিসের ক্লাবটি। ২০১৫ সালের পর ঘরের মাঠে নক আউট স্টেজে ২২ ম্যাচে পিএসজি ৬১ গোল করে হজম করে মাত্র ৩৮ গোল। তাছাড়াও চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোন দলেরই ৩ বা তার অধিকের বেশি গোলের লিড নিয়ে ঘরের মাঠে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার রেকর্ড নেই।
প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও বার্সেলোনার বিপক্ষে ফিরতি লেগেও পিএসজি দলে থাকছেন না নেইমার। এসিএল ইঞ্জুরির কারণে বার্নাট ও করোনা পজিটিভ ময়েস কেইনকেও পাচ্ছে না কোচ মৌরিচিও পচিত্তিনো। তবে হাটুর ইঞ্জুরি সেরে দলে ফিরছ আলেজান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জি। ঘরের মাঠে সতর্ক থাকতে হবে ভেরাত্তি ও লিওনার্দো প্যারদেসকে। একটি হলুদ কার্ড দেখলেই পরবর্তী ম্যাচ মিস করতে হবে এদুজনকে।
বার্সেলোনা দলেও ইঞ্জুরির বেশ তালিকা রয়েছে। সেভিয়ার বিপক্ষে ইঞ্জুরিতে পরা ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে থাকছেন না নিশ্চিত। পিএসজির বিপক্ষে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের ম্যাচের অন্যতম নায়ক সার্জিও রবার্তো খেলতে পারবেন না এবার। তবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোনাল্ড আরহোর অনুপস্থিতিতে ভোগাবে কাতালানদের। নিয়মতিভাবে ফিলিপ কৌতিনহো ও আনসু ফাতিও থাকছেন না বার্সার একাদশে।
ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের আসরে বার্সেলোনার ও পিএসজি একে অপরের সবমিলিয়ে এগারোবার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে উভয় দলই ৪টি করে জয় পেয়েছে, বাকি ৩টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১১ ম্যাচে প্যারিসের ক্লাবটির বিপক্ষে ২২ গোল করে কাতালানরা গোল হজম করে ২০টি। দুদলের সমান লড়াইয়ে পার্ক ডেস প্রিন্সেসের মাঠে রাতে জয়ী দলই এগিয়ে যাবে মুখোমুখি লড়াইয়েও।
অপেক্ষা এখন কিক অফের। ২০১৭ এর মত বার্সেলোনার ইতিহাসের পূনর্মঞ্চায়ন না পিএসজির নতুন ইতিহাস, কে জানে কি অপেক্ষা করছে পার্ক দেস প্রিন্সেসে।
Discussion about this post