খেলাধুলা ডেস্ক
বহুদিন ধরে জাতীয় দলের রাডারে নেই সাব্বির রহমান। মাঠের বাইরে নানা বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়ে ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাফল্যের ইতিহাস থাকলেও চলতি নিউজিল্যান্ড সফরেও তার সুযোগ হয়নি। সেই সাব্বির রহমান এখন পাড়ার ক্রিকেট খেলেন। সারা দেশে ‘খ্যাপ’ খেলে বেড়ান! সাব্বির বাংলাদেশের হয়ে দুটো ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও একটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছেন। তবে তাকে নিয়ে কখনোই নিশ্চিন্ত থাকতে পারেননি নির্বাচকরা।
সাব্বির রহমান জাতীয় দলে নেই ১৬ মাস ধরে। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বশেষ সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সাব্বির রহমানের একটি ১০২ ও ৪৩ রানের ইনিংস আছে। নিউজিল্যান্ডে দলে না থাকার আক্ষেপের কথা জানিয়ে সাব্বির বলেন, ‘ক্রিকেট জীবনে আমি সব খেলাই মিস করছি, যতদিন পর্যন্ত ম্যাচ খেলতে পারছি না। খারাপ করেছি টি-টোয়েন্টিতে কিন্তু বাদ পড়েছি সব দল থেকে। এখানে একটা ভুল বোঝাবোঝির জায়গাও থাকতে পারে।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় টুর্নামেন্ট খেলে বেড়াচ্ছে সাব্বির। এখন পর্যন্ত সোনারগাঁও, মাগুরা ও ময়মনসিংহে তাকে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলতে দেখা গেছে। সাব্বিরের ব্যাখ্যা, ‘আমার সব উইকেটে খেলতে হয়, কখনো খেলছি সোনারগাঁও, মাগুরা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশের সব উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমার। আমি এভাবে চিন্তা করি যে, আমি আবার ছোট থেকে বড় হচ্ছি। আমি যতই একা একা অনুশীলন করি, তাতে লাভ নেই আমাকে ম্যাচে থাকতে হবে।’
২০২০ সালে কোভিড সংক্রান্ত বিরতির পরে সাব্বির যখন শেষ পেশাদার ক্রিকেট ম্যাচ খেলেন, সেই প্রেসিডেন্টস কাপে ৫ ম্যাচে মোট রান করেন ৩৯ এবং বঙ্গবন্ধু টি টোয়েন্টি কাপে ৭ ম্যাচে করেন ১০৬ রান। অথচ, এই সাব্বির যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসেন তখন তাকে ঘিরে ছিল অনেক প্রত্যাশা। বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্জাইজ ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম আবিষ্কার এই সাব্বির রহমান। ভক্তরা ও বিশ্লেষকরা সাব্বির রহমানকে ‘টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ’ বলে আখ্যা দেন।
স্পিনার নাথান লায়ন বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে এসে, সাব্বির রহমানের ব্যাটিং স্টাইল দেখে বিরাট কোহলির সাথে তুলনা করেছিলেন। ২০১৬ সালে ঢাকায় টি টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে সাব্বির ছিলেন ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট।যেখানে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, তিলেকরত্নে দিলশান, শোয়েব মালিক, শহীদ আফ্রিদির মতো খেলোয়াড়দের মধ্যে সাব্বির হন মূল পর্বে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সাব্বির নিজেও স্বীকার করেছেন, ৪-৫ বছর আগের সাব্বির ও এখনকার সাব্বিরের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
শ্রীলঙ্কার সাথে ২০১৯ সালের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি সাব্বির রহমানের শেষ ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামা। সেই সিরিজে সাব্বির প্রথম ম্যাচে ৬০ রান করেন। আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের সাথে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে কোনো সাফল্য পাননি। রান করেন ২৪,০,১৩,১৫ ও ১! সাব্বির বলেন, ‘আমার যখন ২১-২২ বছর বয়স, মানসিকতা অন্যরকম ছিল। আমি সবসময় চেষ্টা একটাই করি যাতে বলের চেয়ে রান বেশি থাকে। যখনই মাঠে নামি, স্কোরকার্ডের দিকে তাকিয়ে দেখি বলের চেয়ে রান বেশি কিনা। এটা আমাকে তৃপ্তি দেয়।’
২০১৯ বিশ্বকাপের আগে সাব্বির রহমান সম্পর্কে নির্বাচকরা বলেন সাব্বির রহমান থাকা মানে ব্যাটিং অর্ডারের সাত নম্বর জায়গা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা। তবে মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সাব্বির রহমান। নানা সময়ে সাব্বির নিষিদ্ধও হয়েছেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতেও সাব্বির রহমানকে তৎকালীন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুরোধে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপের পরেই দুটো সিরিজ খেলার পর সাব্বিরকে আর জাতীয় দলে বিবেচনায় আনা হয়নি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষক এম এম কায়সার মনে করেন, সাব্বির রহমানের নিজের একাগ্রতার কমতি আছে ঠিকই, তবে পুরো দায়টা সাব্বিরের নয়। তিনি বলেন, ‘যাদের মনে করা হয় ভবিষ্যৎ আইকনিক ক্রিকেটার, তাদের ধরে রাখার জন্য, খেয়াল রাখার জন্যই কোচ রাখা হয়। তাহলে আর পাড়ার ক্রিকেটে খেলতে হয় না সাব্বিরদের। ভারতের পৃথ্বী শকেই দেখুন। আপনি দেখেন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যর্থ হওয়ার পর, স্থানীয় কোচরা তার সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করেছে। এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে কিন্তু তার আসল রূপ ফিরে পেয়েছে।’ তবে সাব্বিরের বিশ্বাস, তিনি নিজেকে প্রমাণ করে আবারও জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন।
Discussion about this post