খেলাধূলা ডেস্ক
ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে মাঠে নামার আগে আগে ইতিহাস কথা বলছিল । ম্যাচেও দেখা গেল তার ছাপ।
প্রথমার্ধের শেষদিকে কাই হ্যাভার্টজের গোলটাই গড়ে দিল ব্যবধান। তাতে ম্যানচেস্টার সিটিকে হতাশায় ডুবিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপসেরার শিরোপা ঘরে তুললো চেলসি।
ইতিহাস বলছিল, শেষ দুই অল ইংলিশ ফাইনালে হেরেছে প্রথমবারের মতো ওঠা দল। আর সব মিলিয়ে হিসেবটা করলে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলা দল অন্তত এ শতাব্দিতে শিরোপা জেতেনি। ইউরোপীয় পরিসরেও চেলসির বিপক্ষে জেতার নজির নেই সিটির। সেই ১৯৭০-৭১ মৌসুমে কাপ উইনার্স কাপের সেমিতে হেরেছিল দুই লেগেই।
সঙ্গে যোগ হয়েছিল শেষ ৪০ দিনে চেলসির কাছে সিটির টানা দুই হার। ইতিহাস না ভাবালেও, শেষ দুটো হার যে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার ভাবনাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, তার আভাস মিলছিল আগে থেকেই। আগের দিন এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন চেলসির ট্যাকটিকাল দিক নিয়ে তার ভাবনা। বলেছিলেন, চেলসির তিন জনের ডিফেন্স, সামনে ডাবল পিভোট, দুই ওয়াইড উইংব্যাক আর সামনে টিমো ভের্নারকে নিয়ে গড়া খুবই ‘ওয়াইড’ আর খুবই ‘ডিপ’ দলটার বিপক্ষে খেলা কেন কঠিন। এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ভুল করে বসাটা গার্দিওলারও যে ‘ইতিহাস’!
ফাইনালে আজ সবার আগে পুনরাবৃত্তি ঘটল সে ইতিহাসটার। কোনো প্রথাগত স্ট্রাইকার ছাড়াই পুরো মৌসুম খেলেছে সিটি, খেলল আজও। তবে আজ পরিবর্তন এল মাঝমাঠে। প্রথম একাদশে রাখলেন না কোনো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে। তাতে দলের রক্ষণাত্মক আকার তো ভাঙলোই, নিচ থেকে গড়ে উঠল না কোনো আক্রমণও। পুরো ম্যাচে প্রতিপক্ষ গোলমুখে শট গেল মোটে একটা।
এমনকি প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে ফলাফল গড়ে দেওয়া যে গোলটা হজম করল সিটি, তাতেও তো ছিল তার পরোক্ষ কারণ ছিল সেই মিডফিল্ডে একজন রক্ষণাত্মক খেলোয়াড়ের অভাবই। ৪৩ মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে পাস বাড়ান মেসন মাউন্ট। সিটি রক্ষণকে ছত্রখান করে যা গিয়ে পড়ে কাই হ্যাভার্টজের পায়ে, গোলরক্ষক এডারসনকে স্টেপওভার দিয়ে বোকা বানিয়ে সহজ এক গোল করেন তিনি।
প্রথমার্ধের ভুলটা দ্বিতীয়ার্ধে শুধরে নিয়েছিলেন কোচ গার্দিওলা। ৬৪ মিনিটে বের্নার্দো সিলভাকে তুলে ফিরিয়েছিলেন ফের্নান্দিনিওকে। তবে ততক্ষণে একটু বেশি দেরিই হয়ে গেছে। তার আগেই দলটা বড় ধাক্কা খেয়েছিল ‘টালিসম্যান’ কেভিন ডি ব্রুইনাকে হারিয়ে।
সার্জিও আগুয়েরো সিটি সমর্থকদের কথা দিয়েছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার আগে দল ছাড়বেন না। একেবারে শেষ ম্যাচে এসে তাকে সে কথা রাখার সুযোগটা করে দিয়েছিলেন সিটির স্প্যানিশ কোচ, নামিয়েছিলেন ১৪ মিনিটের জন্য। তবে সেটা কেবলই চাপ বাড়াতে পেরেছে চেলসি রক্ষণে, গোলটা আর আদায় করে দিতে পারেনি।
তার আগে চেলসির ব্যবধানটা বাড়তেও পারত। মাউন্টের বদলে মাঠে নামা ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ নষ্ট করেছিলেন দারুণ একটা সুযোগ, ফলে স্কোরলাইনটা ২-০ হয়নি। তবে তাতে অবশ্য খুব একটা ক্ষতি হয়নি ব্লুজদের। এক গোলের ব্যবধান ধরে রেখেই চেলসি জেতে শিরোপা। যেটা আবার মালিক রোমান আব্রাহামোভিচের আমলে দলটির চতুর্থ ইউরোপীয় ট্রফি।
আর সিটির ইউরোপীয় শিরোপার আক্ষেপ দীর্ঘায়িত হয় অন্তত আরও এক মৌসুম। দশ বছর আগে শেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা পেপ গার্দিওলারও বৈকি!
Discussion about this post