খেলাধূলা ডেস্ক
শিরোপা জিততে শেষ ওভারে প্রাইম ব্যাংকের দরকার ছিল ১৬ রান। টি-টোয়েন্টিতে খুব কঠিন কিছু নয়। তার মধ্যে আবার স্ট্রাইকে ছিলেন সেট ব্যাটসম্যান অলক কাপালি, ১২ বলে তিনি তখন দুটি করে চার-ছক্কায় ২৭ রানের ঝড় তুলে বসে আছেন।
আগের ম্যাচেই শেষ দিকে ঝলক দেখিয়েছিলেন অলক কাপালি। আজ (শনিবার) শেরে বাংলার অঘোষিত ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষেও শেষদিকে এসে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন এই হার্ডহিটার।
কিন্তু আবাহনী পেসার শহিদুল ইসলামের করা শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে রানই নিতে পারলেন না কাপালি। চতুর্থ বলটি সোজা ব্যাটে ছক্কা হাঁকিয়ে আবারও আশায় নিয়ে আসেন দলকে।
দুই বলে তখন দরকার ১০ রান। কে জিতবে? টানটান উত্তেজনা অঘোষিত ফাইনালে। কিন্তু কাপালি শেষটায় আর পারলেন না। পঞ্চম বলে সোজা ব্যাটেই ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করলেন।
কিন্তু টাইমিংও হলো না। বল বাতাসে ভেসে সীমানার ওপারে যাওয়া বহুদূরে, ৪০ গজও গেল না। বিফল মনোরথ অলক সিঙ্গেলস নিলেন। শেষ বলে ৯ রান প্রয়োজন পড়লো। ওই ডেলিভারি ওয়াইড বা নো বল থেকে চার হলেও একটা সম্ভাবনা থাকতো। কিন্তু শহিদুল শেষ ডেলিভারিটিও করলেন মাথা ঠাণ্ডা রেখে।
ফলে স্ট্রাইকে থাকা প্রাইম ব্যাংক পেসার শরিফুল ইসলাম সিঙ্গেলসও নিতে পারলেন না। প্রাইম ব্যাংক ড্রেসিংরুম আর ডাগআউটে তখন কবর নিস্তব্ধতা।
শোরগোল। উল্লাস। উচ্ছ্বাস। এ উল্লাস প্রাইম ব্যাংককে ৮ রানে হারিয়ে লিগ ট্রফি জেতার। এ বিজয় উৎসব আবাহনীর হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।
গত পাঁচ লিগে এটা চতুর্থ শিরোপা আবাহনীর। এই সময়ে আবাহনী ছাড়া আর একটি দলই শুধু চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেটা ২০১৫-২০১৬ মৌসুমে। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল গাজী গ্রুপ।
আবাহনীর সাফল্যের সাতকাহন লিখতে গেলে চলে আসবে খালেদ মাহমুদ সুজনের নামটি। তার কোচিংয়েই আবাহনীর শিরোপা বিজয়ের হ্যাটট্রিক হলো। ২০১৪-২০১৫ মৌসুমে প্রাইম ব্যাংককে চ্যাম্পিয়ন করার পর আবাহনীর কোচ হন সুজন।
আগের ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডির কাছে হারের পরও আবাহনী কোচ ছিলেন শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। আজকের এ অঘোষিত ফাইনাল নিয়ে ২৪ ঘন্টা আগে জাগো নিউজের সাথে আলাপে সুজন বলেছিলেন, ‘আমি কনফিডেন্ট। আমার দল প্রাইম ব্যাংককে হারিয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পুরোপুরি সামর্থ্য রাখে।’
বাস্তবে হলোও তাই। প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর দাপট অব্যাহতই থাকলো। আরও একবার ট্রফি হাতে জয়োল্লাসে মাতলো আকাশি-হলুদ শিবির দল।
অঘোষিত লিগ ফাইনাল জিততে করতে হবে ১৫১। মোটেই বড় টার্গেট না। তবে ইতিহাস-পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, আবাহনীর বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংকের রান তাড়ার রেকর্ড ভালো না। ১৩ জুন এই শেরে বাংলায় আবাহনীর বিপক্ষে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১৯ ওভারে ১৭৩ রান তাড়া করতে পারেনি এনামুল হক বিজয়ের দল, হেরেছে ৩০ রানে।
সে ম্যাচে তামিম ইকবালের হাফসেঞ্চুরির (৫৫ রান) পরও প্রাইম ব্যাংক লড়াই করতে পারেনি। থেমে গিয়েছিল ১৪৩‘এ। হাঁটুর ইনজুরির কারণে সুপার লিগ থেকে সরে দাঁড়ানো তামিম ছাড়া অঘোষিত ফাইনালে ১৫০ রানের পিছু ধেয়ে বিজয় বাহিনীর সংগ্রহ এবার ১৪২।
হয়তো প্রতিপক্ষের রান তাড়ার দুর্বলতাটা খুব ভালোই অনুভব করেছে আবাহনী ‘থিংক ট্যাংক’। আর তাই টস জিতে ব্যাটিং নেয়া। যদিও শুরুটা ভালো হয়নি।
নাজমুল হোসেন শান্ত (৪০ বলে ৪৫) আর অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের (৩৯ বলে ৪০) চতুর্থ উইকেটে জুড়ে দেয়া ৭০ রানের ওপর ভর করে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আর শেষদিকে অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১৩ বলে দুই ছক্কায় করা ২১ রানের কার্যকর ইনিংসের ওপর ভর করে আবাহনী পায় ১৫০ রানের পুঁজি। শেষ পর্যন্ত বোলাররা সেটাকেই জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণ করেছেন।
প্রথম সেশনের শেষ দিকে ব্যাট হাতে অবদান রাখা সাইফউদ্দিন বল হাতেও আগুন ঝরিয়েছেন। প্রাইম ব্যাংকের টপ ও মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়ে আবাহনীর জয়ের রুপকার, নায়ক এই অলরাউন্ডারই।
৪ ওভারে ৩৬ রানে ৪ উইকেট দখল করেন সাইফউদ্দিন। এর মধ্যে ১৯ নম্বর ওভারে মানে তার নিজের শেষ ওভারে দিয়েছেন ১৬ রান। না হলে মিতব্যয়ী বোলিংই বলা যেতো।
দুই ওভারের প্রথম স্পেলে (১২ রানে) প্রাইম ব্যাংকের দুই নির্ভরযোগ্য টপ অর্ডার রনি তালুকদার (১) ও অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়কে (১৩) সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে প্রাইম ব্যাংককে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন সাইফউদ্দিন।
শেষ দিকে ১৭ নম্বর ওভারে মাত্র ৩ বলের ব্যবধানে প্রথমে রুবেল হোসেন আর পরে নাঈম হাসানকে ফিরিয়ে জয়ের পথ পরিষ্কার করে দেন তিনি।
দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠার পাশাপাশি বল হাতে প্রাইম ব্যাংকের ৪ ব্যাটসম্যানকে আউট করে ম্যাচসেরার পুরস্কারটিও পকেটে পুড়েছেন সাইফউদ্দিন।
তার সঙ্গে আবাহনীর অপর তিন পেসার মেহেদি হাসান রানা (৪ ওভারে ২/৩০), তানজিম হাসান সাকিব (৪ ওভারে ১/৩১) ও এ ম্যাচে একাদশে ঢুকেই শেষ ওভারে রান আটকে রেখে দলকে জেতানো শহিদুল ইসলাম (৪ ওভারে ০/২১) ভালো বোলিং করেছেন।
তবে অলক্ষ্যে আরও একজন কাজের কাজ করে দিয়েছেন। তিনি আরাফাত সানি, চ্যাম্পিয়নদের বোলিং ট্রাম্পকার্ড। এ অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার ৬ রানে ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রাইম ব্যাংকের মূল ব্যাটিং স্তম্ভ মোহাম্মদ মিঠুনকে।
আবাহনীর বোলারদের সাজানো-গোছানো ও মাপা বোলিংয়ের বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংকের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানও কিছু করতে পারেননি। রুবেল মিয়া ৪১ রান করে টপ স্কোরার হলেও তা কাজে লাগেনি। তিনি বল খেলেছেন রানের চেয়ে বেশি, ৪৩ টি।
একমাত্র অলক কাপালিই চেষ্টা করেছিলেন। শেষ দিকে তার ১৭ বলে তিন ছক্কায় গড়া ৩১ রানের হার না মানা ইনিংসটিই মরা ম্যাচে খানিক প্রাণের সঞ্চার করেছিল। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি বিজয় বাহিনীর। দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল প্রাইম ব্যাংকের। শেষ হাসি সেই আবাহনীর।
Discussion about this post