খেলাধূলা ডেস্ক
পুরো টুর্নামেন্টে জুড়েই অপ্রতিরোধ্য পাকিস্তান । গতকালের সেমিফাইনালে তারাই ছিল শতভাগ ফেভোরিট দল। কিন্তু বিধাতা যার কপালে পরাজয় লিখে রাখেন সে কি করে বিজয়ী হয় ! যাদের টুর্নামেন্ট শুরুটা স্বস্তিদায়ক ছিল না, সেই অস্ট্রেলিয়াই পাকিস্তানকে হারিয়েছে ৫ উইকেটে। হাসান আলীর একটি ক্যাচ মিস এ হৃদয় ভাংগলো কোটি ক্রিকেট ভক্তের।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে বাবর আজমরা। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নার ৪৯ রান করে বিদায় নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া যখন ব্যাটিং বিপর্যয়ে, সেই মুহূর্তে মাঠে নেমে ঝড়ো ইনিংস খেলে শেষ ওভারে তিন ছক্কা মেরে দলকে জয় এনে দেন ম্যাথু ওয়েড।
টান টান উত্তেজনার এই ম্যাচের শেষটায় এক পর্যায়ে পাকিস্তানের জয়ই সম্ভাব্য মনে হচ্ছিল। ১৭৭ রানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার ২৪ বলে প্রয়োজন ছিল ৫০ রান। ১৭তম ওভারে স্টয়নিসের একটি চার ও এক ছয়ের পর তিন ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭ রানের। ১৮তম ওভারে আবারও এক চার ও এক ছয়ে অজিদের কক্ষপথে রাখেন ম্যাথু ওয়েড। পরের ওভারে শাহীনের বলে ওয়েডকে ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু মিডউইকেটে তার ক্যাচ নিতে পারেননি হাসান আলী। বলতে গেলে এই ক্যাচ হাত ফসকে যাওয়ার পর পর ম্যাচও ফসকে যায় পাকিস্তানের কাছ থেকে। জীবন পেয়ে পরের তিন বলে তিন ছয়ে এক ওভার হাতে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করেন অজি উইকেটকিপার। শেষের ঝড়ে অজিদের জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়া স্টয়নিস ৩১ বলে ৪০ রানে অপরাজিত ছিলেন। ম্যাথু ওয়েড ছিলেন আরও বেশি বিধ্বংসী। ১৭ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৪১ রানে। অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ বের করে নেওয়ায় ম্যাচসেরাও হন তিনি।
অথচ এই অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন শাদাব খান। ৯৬ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় তার লেগ স্পিনের কল্যাণেই। ২৬ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। টপে ওয়ার্নারের ৩০ বলে করা ৪৯ রান ছাড়া আর কেউ পাকিস্তানের ওপর ত্রাস ছড়াতে পারেননি। এই সময়েই ভীষণ চাপে পড়ে যায় অজিরা। শেষ ৪৬ বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮১ রান। তাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের হাতে চলে এসেছিল। আস্কিং রান রেট বাড়তে থাকায় ক্রিজে থাকা ব্যাটাররা ভুল করছিলেন ঠিকই। কিন্তু পাকিস্তানি ফিল্ডাররা সুযোগ হাতছাড়ায় পরে সেগুলোই হয়েছে হারের কারণ! ক্যাচ মিসের আগে ওয়েডকে রান আউটের সুযোগও মিস করে তারা। অবশ্য ওয়ার্নার যেভাবে আউট হয়েছেন, সেটি নিয়েও পরে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। রিপ্লেতে দেখা গেছে বল তার ব্যাটেই লাগেনি! রিভিউ নিলে বেঁচে যেতে পারতেন।
টসভাগ্য সহায় না হলেও ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান ঠিকই তা পুষিয়ে নিয়েছে। উদ্বোধনী জুটিতে বাবর আজম আর রিজওয়ান মিলে করেন ৭১ রান। ৩৯ রানে বাবরকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন অ্যাডাম জাম্পা।
নির্ভরতার প্রতীক বাবর ৩৪ বল খেলে ফিরলেও রিজওয়ান ছিলেন অবিচল। অথচ দুবার ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি! জীবন পাওয়া এই ব্যাটারের কল্যাণেই পরে রান চাকা এগোয় পাকিস্তানের। সঙ্গী ছিলেন ফখর জামান। ৫২ বলে ৬৭ রান করা রিজওয়ানকে ফিরিয়ে স্টার্ক রাশ টেনে ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টুর্নামেন্টে নিষ্প্রভ থাকা ফখর জ্বলে ওঠেন এদিনই। শেষ দিকে তার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়েই পাকিস্তান পায় বড় সংগ্রহ। রিজওয়ান ৩টি চার ও ৪ ছয়ে বিদায় নিলে ফখর হয়ে ওঠেন আরও বিধ্বংসী। ৩২ বলে ৫৫ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তাতে ছিল ৩টি চার ও ৪টি ছয়। মাঝে আসিফ আলী ও শোয়েব মালিক খালি হাতে বিদায় নিলেও সেটি পুষিয়ে দিয়েছেন ফখর।
অজি বোলারদের মাঝে ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। একটি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স ও অ্যাডাম জাম্পা।
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: ম্যাথু ওয়েড
Discussion about this post