খেলাধূলা ডেস্ক
পুরো দলের সংগ্রহ ২৯৮। তার একার রানই প্রায় অর্ধেক, ১৩৭ রান। আর এমন এক ইনিংস উপহার দিয়েই এখন পাদপ্রদীপের আলোয় মাহমুদুল হাসান জয়। তার ব্যাটিং বিশেষ করে ধৈর্য্য, মনোযোগ ও মনোসংযোগ সবার নজর কেড়েছে। পুরো দেশ জয়ের ধৈর্য্য আর মনোসংযোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সবার একটাই কথা, এত অল্প বয়সে দলের সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কি অসীম ধৈর্য্যটাই না দেখালেন এ ২১ বছরের এই যুবা ওপেনার!
ভাবছেন, এত প্রশংসার কি আছে! এর আর এমন কি! টেস্টে এর চেয়ে অনেক বড়বড় ইনিংস খেলার রেকর্ড আছে টাইগার ব্যাটারদের। রানের হিসেবে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাট থেকে আসা ১৩৭ রানের ইনিংসটি ২১ নম্বরে।
আর সময়ের হিসেবেও মাহমুদুল হাসান জয়ের ইনিংসটি দীর্ঘ ইনিংসগুলোর সেরা পাঁচে নেই। জয় ৪৪২ মিনিট ক্রিজে থেকে ৩২৬ বলে এ ইনিংসটি সাজিয়েছেন। এর চেয়ে বেশী সময় উইকেটে থেকে শতরানের ইনিংসও আছে বেশ কয়েকটি।
সময়ে হিসেবে ২০১৮ সালের নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি (৪২১ বলে ২১৯) আর আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালের নভেম্বরে অভিষেক টেস্টে ৫৩৫ মিনিট উইকেটে থেকে ৩৮০ বলে ১৪৫ রানের ইনিংস দুটিই দীর্ঘতম।
এরপর দ্বিতীয় দীর্ঘতম ইনিংসটি নাজমুল হোসেন শান্তর। গত বছর শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে লঙ্কানদের বিপক্ষে ৫৩৩ মিনিট উইকেটে থেকে ১৬৩ রান করেছিলেন শান্ত। এরপর দীর্ঘতম ইনিংস মোহাম্মদ আশরাফুলের। তিনি ২০১৩ সালের ৮ মার্চ গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৯৩ মিনিট উইকেটে থেকে করেছিলেন ১৯০ রান।
এছাড়া জাভেদ ওমরের পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০৩ সালের ২২ আগস্ট পেশোয়ারে ৪৯৩ মিনিটে ১১৯ এবং তামিম ইকবালের যথাক্রমে ৪৭৩ ও ৪৪৮ মিনিটে টেস্ট শতক আছে।
তাহলে জয়ের ইনিংসটি নিয়ে এত হইচই কেন? তার জবাব দিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক এবং নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। জাতীয় দলের অন্যতম নির্বাচক ডারবানের কিংসমিডে বসে জয়ের ইনিংস দেখে মুগ্ধ।
জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক জয়ের ইনিংসটিকে অনেক উচ্চ প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। তার চোখে এটা বাংলাদেশের ব্যাটারদের অন্যতম সেরা টেস্ট ইনিংস। শনিবার রাতে মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটিং নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে মুঠোফোন আলাপে সুমন জানান, বাংলাদেশের ব্যাটারদের খেলা আমার দেখা অন্যতম সেরা একটি টেস্ট ইনিংস।
কেন তিনি এ ইনিংস দেখে পুলকিত? বাশার বলেন, ‘প্রথম কথা হলো এটা হলো এক আদর্শ ও যথার্থ টেস্ট ইনিংস। সবচেয়ে বড় কথা পরিবেশ ও পরিস্থিতি ছিল পুরোপুরি প্রতিকুল। দল ধুঁকছে। এ প্রান্তে কিছুক্ষণ পরপর উইকেট পড়েছে। এমন অবস্থায় জয় অবিচল আস্থায় একদিক আগলে রেখেছে হিমালয়ের দৃঢ়তায়। ধৈর্য্য, সংযমের প্রতিমূর্তি জয় চাপের মুখে খেই না হারিয়ে দেখিয়েছে যথার্থ টেস্ট ইনিংস কিভাবে খেলতে হয়।’
‘কোনরকম তাড়াহুড়ো করেনি। ঠান্ডা মাথায় একদিক আগলে রাখার কাজটি করেছে। পরিস্থিতি ভাল ছিল না। অন্য প্রান্তে সে অর্থে তেমন সাপোর্ট মেলেনি; কিন্তু জয় একাই দায়িত্ব নিয়ে ঠিক নিজের কর্তব্য পালন করেছে। সব চাপ সামলে নিয়ে খেলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট, ম্যাচ কন্ডিশন আর সবকিছু বিচার বিবেচনায় আমার চোখে এটাই বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও সত্যিকার টেস্ট ইনিংস।’
Discussion about this post