খেলাধূলা ডেস্ক
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তার জবাবে সমালোচকদের আয়নায় মুখ দেখার কথা বলেছিলেন। নিন্দুকদের অজস্র ভুল খুঁজে পেলেও মুশফিকরা কি নিজেদের ভুল খুঁজে পাচ্ছেন না? দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে সিনিয়র ক্রিকেটারদের হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর এটাই এখন বাস্তবসম্মত প্রশ্ন। এবারও নিজেদের ভুলগুলো ঠিকঠাকভাবে খুঁজে না পেলে ভবিষ্যতেও একই ঘটনা ঘটতে থাকবে। সুতরাং মুশফিকদের আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে ভুলগুলোকে!
সফরকারী যেকোনও দলের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন বরাবরই কঠিন। তারপরও কঠিন কন্ডিশনে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জিতে ইতিহাস তৈরি করেছে বাংলাদেশ। প্রত্যাশা ছিল টেস্ট সিরিজেও ভালো করবে। এমন স্বপ্ন দেখার কারণও আছে। স্বাগতিক দলের নিয়মিত ৬ ক্রিকেটার আইপিএলের কারণে ছুটি নিয়েছেন। তাই তো খর্বশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ভালো করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল মুমিনুল হকের দলের সামনে।
কিন্তু ডারবানে জয়ের সুযোগ হারানোর পর ঐতিহাসিক ভেন্যু পোর্ট এলিজাবেথেও বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। মুমিনুলদের ফলোঅন না করিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে প্রোটিয়ারা। সব মিলিয়ে ৪১৩ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে খেই হারায় মুমিনুলের দল। তিন সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম-মুশফিক-মুমিনুলের দায়িত্বহীনতায় ৮০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং শেষে মুশফিকরা কি নিজেদের ভুলগুলো আয়নায় দেখতে পাচ্ছেন?
পোর্ট এলিজাবেথে টস হার দিয়েই কঠিন পথ পড়ি দেওয়া শুরু বাংলাদেশের। এই মাঠে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা ভয়ানক কঠিন। বল প্রচুর উঁচু-নিচু হওয়ার পাশাপাশি অনেক টার্ন করে। ফলে ব্যাটারদের জন্য ঐত্যিহাসিক ভেন্যুর উইকেট যেন মরণফাঁদ। সোমবার এই ফাঁদে পড়েই সর্বনাশ হয়েছে বাংলাদেশের! তবে ম্যাচটা নিজেদের প্রথম ইনিংসেই কঠিন করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেখানে দায়টা বেশি অভিজ্ঞ তিন ক্রিকেটার- তামিম, মুশফিক ও মুমিনুলেরই।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৫৩ রানে অলআউট করে নিজেদের প্রথম ইনিংস শুরু করেছিল বাংলাদেশ। শুরুতেই প্রোটিয়া পেসার ডুয়ান অলিভিয়েরের আক্রমণে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে ছয় ম্যাচ পর টেস্টে ফেরা তামিম দারুণ এক ইনিংস খেলেন। ৫৭ বলে ৪৭ রান নিয়ে হাফসেঞ্চুরির কাছেই ছিলেন এই ওপেনার। কিন্তু পুরনো ভুলে আরও একবার এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লেন। উইয়ান মুল্ডারের ইনসুইং বল লেগে ঘোরাতে চেয়েছিলেন ৬৫ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা থাকা এই ওপেনার। কিন্তু বল ব্যাটে না গেলে সরাসরি পায়ে, আর তাতেই সাজঘরের পথ দেখে ফেলেন এই ওপেনার।
তামিমের ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে পুরো দলকেই। প্রথম ইনিংসে তার ফেরার পর ১৮ রানের ব্যবধানে মুন্ডারের ইনসুইংয়ের কাছে পরাস্ত হয়ে বিদায় নেন মুমিনুল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ওই ইনিংসেই সবচেয়ে বড় ভুল করে ফেলেন মুশফিক!
এদিকে প্রথম ইনিংসে ৪৭ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে সাইমন হার্মারের ঘূর্ণিতে কুপোকাপ হন তামিম। প্রথম ইনিংসের মতোই এই বোলারকে উপহার দেন উইকেট। আগেই ধারণা করা হচ্ছিল চতুর্থ ইনিংসে পোর্ট এলিজাবেথের উইকেটে ঘূর্ণি থাকবে। সোমবার সেই ঘূর্ণিতে খাবি খেলেন মুশফিক-মুমিনুল। দিনের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারেই মুশফিক নিজের ভুলে কেশব মহারাজকে উইকেট দিলেন।
মুশফিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলেছেন ৮০ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে। কিন্তু তার এই অভিজ্ঞতার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। অথচ অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে দলকে জয়ের বন্দরে নেওয়ার কথা মুশফিকের। কিন্তু ‘স্বেচ্ছাচারিতা’য় বারবার একই ভুলে তা আর হচ্ছে কই! সুইপ, স্লগ সুইপ, রিভার্স সুইপ, প্যাডেল সুইপ, স্কুপ- এসব খেলতে পারা যেকোনও ব্যাটারের জন্যই দারুণ স্কিলের পরিচয়। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার মুশফিক এই শটগুলোতেই বহু রান করেছেন। আবার এই শটগুলো খেলতে গিয়েই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হয়ে বাংলাদেশ দলকে ফেলেছেন বিপদে। যেমনটি প্রথম ইনিংসে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পুরো দলকে বিপদে ফেলেছেন। ৯২ মিনিট ক্রিজে থেকে ৫১ রানের ইনিংস খেলার পর ম্যাচের পরিস্থিতি ভুলে গিয়ে করলেন রিভার্স সুইপ! তাতেই আউট অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। মুশফিকের আউটের পর ৭ রান তুলতেই বাকি ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এদিকে টেস্ট ক্রিকেটের নেতৃত্ব পাওয়ার পর থেকেই চেনা ছন্দে নেই মুমিনুল। এই সফরে চার ইনিংসের একটিতেও দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। সর্বশেষ ১২ ইনিংসে রান ১৬৬; গড় ১৪! এই ১২ ইনিংসে দুই অঙ্কের ঘরেই মুমিনুল যেতে পেরেছেন মাত্র তিনবার। অন্যদিকে তিনবার রানের খাতা না খুলেই আউট হয়েছেন। এই সময়ে কোনও সেঞ্চুরি নেই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ানের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে মাউন্ট মঙ্গাইনুতে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের ম্যাচে খেলেছিলেন ৮৮ রানের ইনিংস। তাহলে কি অধিনায়কত্ব মুমিনুলের ঘাড়ে চেপে বসেছে? অধিনায়ক হওয়ার আগে তার ক্যারিয়ার গড় ছিল প্রায় ৪১। অন্যদিকে ১৫ ম্যাচ অধিনায়কত্ব করে সেই গড় এখন নেমে এসেছে ৩৪-এ!
যদিও এভাবে ব্যর্থ হয়েও মুমিনুল জানাচ্ছেন তার ‘কোনও দুচিন্তা নেই’। তারা যে আয়নার নিজেদের মুখ দেখেন না, মুমিনুলের এই কথাতেই স্পষ্ট। এভাবে ম্যাচ হারের পরও মুমিনুলদের কাছে সব কিছুই যেন স্বাভাবিক! তাই তো দল হিসেবে পারফরম্যান্স না করতে পারার অজুহাত দিয়ে দিনের পর দিন একই গল্প শোনাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা!
সব মিলিয়ে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে ব্যাটাররা যেভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন, তাতে সর্বশেষ বিশ্বকাপে মুশফিকের করা প্রশ্নই এখন বুমেরাং হয়ে সামনে আসছে। নিজেদের ভুলগুলো মুশফিক-মুমিনুল-তামিমদের আয়নায় কি ধরা পড়ে? সেখানে কি ক্রিকেটপ্রেমী জনতার আবেগ-অনুভূতিগুলো দেখা যায় না? সৌজন্যে-বাংলাট্রিবিউন
Discussion about this post