খেলাধূলা ডেস্ক
সোমবার ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় শুরু হয়েছে একাদশ এশিয়া কাপ হকি। প্রথম দিনে বাংলাদেশ খেলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। এই ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি গড়েছেন অনন্য এক রেকর্ড। জিমির দাবী- এশিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি খেললেন ‘ষষ্ঠ এশিয়া কাপ হকি’।
এশিয়া কাপে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। সেটিই ছিল তার জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক আসর। প্রথম ম্যাচ তিনি খেলেছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। মজার বিষয় হলো বাবা আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়ার হাত ধরেই তার জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল। ওই এশিয়া কাপে সোনা মিয়া ছিলেন জিমিদের কোচ।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ মাহবুব হারুন বলেছেন, ‘জিমি ১৯ বছর ধরে জাতীয় দলে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। আমার জানা মতে, এশিয়ার তো কেউ নয়ই, ইউরোপের কোন খেলোয়াড়ও এতদিন হকির জাতীয় দলে সার্ভিস দিতে পারেননি। এত বছর জাতীয় দলে খেলা অসাধারণ একটা বিষয়। এশিয়া কাপের ৬ আসর খেলার রেকর্ড তো অবশ্যই আরো কারো নেই।’
জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক আরিফুল হক প্রিন্সের দাবি, ‘আমি এই অঞ্চলেরই নয়, এশিয়ার হকি খেলোয়াড়দেরও খোঁজ খবর রাখি। আমি শতভাগ নিশ্চিত কোনো হকি খেলোয়াড়ের ৬টি এশিয়া কাপ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। বড়জোড় কারো দুই তিনটা হতে পারে।’
এতদিন জাতীয় দলে খেলা কী করে সম্ভব হলো? সেই রহস্যের ঝাঁপিও খুলে দিলেন রাসেল মাহমুদ জিমি। জাকার্তা থেকে জাগো নিউজকে বললেন, ‘১৯ বছর ধরে খেলি। প্রথমে আমি বলবো এটা বাবা-মার দোয়া। ফিটনেস ধরে রেখেছি। খেলায় নিবেদিত ছিলাম। আমার প্রতিজ্ঞা ছিল- যতদিন খেলবো নিজের সেরাটা খেলবো। নিজের ফিটনেস যতদিন থাকবে ততদিন খেলে যাবো।’
আপনার বাবার হাত ধরে জাতীয় দলে ২০০৩ সালে অভিষেক। সেই এশিয়া কাপে শুরু করে সম্ভবত এবার শেষ এশিয়া কাপ খেলছেন। আপনার বাবা থাকলে নিশ্চয়ই অনেক বেশি খুশি হতেন। জিমি বলছিলেন, ‘আজ আমার বাবাকে বেশি মনে পড়ছে। অবশ্যই তিনি থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন, ফোন দিয়ে অভিনন্দিত করতেন। এ বছর বাবা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার (২০১৬ সালের জন্য) পেয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকলে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ও আমার এই অর্জনে অনেক খুশি হতেন। আমি এই অর্জন বাবাকে উৎসর্গ করছি।’
আর কতদিন জাতীয় দলে খেলতে চান? জিমির জবাব, ‘যতদিন ফিটনেস ধরে রাখতে পারবো ততদিনই খেলে যাবো। তবে ইচ্ছা আছে আগামী এশিয়ান গেমসে খেলে ইতি টানার। সেক্ষেত্রে এটাই হবে আমার শেষ এশিয়া কাপ। পরের এশিয়া কাপ চার বছর পর। হয়তো আমার পক্ষে আর খেলা সম্ভব নাও হতে পারে।’
তার অর্থ, বিদায়ের একটা সুর এরইমধ্যে শুরু আপনার মধ্যে। বিদায় নিয়ে কী ভাবছেন? ‘বিদায় বলে দিলে আমার ক্যারিয়ার নিয়ে কোন আফসোস থাকবে না। তবে খারাপ লাগবে লাল-সবুজ জার্সিতে আর খেলতে পারবো না সেটা ভেবে। কিন্তু দলের জন্য হয়তো কিছুদিন পর ছেড়ে দিতে হবেই। এটা কষ্ট লাগে। আবার যদি ১০ বছর পেছনে গিয়ে খেলতে পারতাম ভালো লাগতো। দেশের জন্য আর জার্সিটা পরতে পারব না এটাই কষ্টের’- বলছিলেন দেশের হকি ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড।
এই প্রজন্মের খেলোয়াড়দের অনেকেই বলে থাকেন- জিমির মতো হতে চাই। এটা আপনার কেমন লাগে? জিমি এজন্য নিজেকে গর্বিতই মনে করেন, ‘আমি নিজেকে এমনভাবে গড়েছি। অন্যরা আমাকে দেখে শিখতে চায়, অনুসারী হতে চায়, অবশ্যই এটা ভালো লাগার ব্যাপার। গর্বেরও ব্যাপার। আমি নিজেকে এই অবস্থানে নিতে পেরেছি এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমি চাই আমার চেয়ে অনেকে ভালো খেলুক। আমাকে ছাড়িয়ে যাক। আমার চেয়ে ভালো খেলোয়াড় ৮-১০ জন থাকুক বাংলাদেশে। তাহলেই আমি বেশি খুশি হবো। আমি যেন বলতে পারি কখনো আমার চেয়ে ভালো খেলোয়াড় দেখতে পেয়েছি।’
দীর্ঘ ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে পারফরম্যান্সের কারণে কখনো জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েননি জিমি। কেবল ২০১৪ সালে তিনি শৃঙ্খলাজনিত কারণে এক বছর নিষিদ্ধ ছিলেন। ওই বছর তিনি খেলতে পারেননি ইনচন এশিয়ান গেমসে।
৬টি এশিয়া কাপের মধ্যে দুইবার অধিনায়কত্বও করেছেন রাসেল মাহমুদ জিমি। দুটি হ্যাটট্রিকও আছে তার। ২০০৭ সালে চেন্নাই এশিয়া কাপে তিনি হ্যাটট্রিক করেছিলেন হংকং ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। ম্যাচ অব দ্য ম্যাচও হয়েছিলেন দুইবার।
ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও শেষ এশিয়া কাপটা কি হলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে? জিমি বলছিলেন, ‘আমরা সাধারণত ষষ্ঠ বা সপ্তম হয়ে এশিয়া কাপ শেষ করি। এবার যদি পঞ্চম হয়ে শেষ করতে পারি সেটা হবে আমার রেকর্ডের ও শেষ এশিয়া কাপের বড় অর্জন।’
Discussion about this post