খেলাধূলা ডেস্ক
দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্ন দিয়েই হয়েছিল রীতিমতো। স্কোরবোর্ডে ২৪ রান তুলতেই নেই হয়ে গিয়েছিল ৫ উইকেট। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে ছিল খাদের কিনারে, চোখরাঙানি দিচ্ছিল লজ্জার সব রেকর্ড। তবে শেষমেশ সে লজ্জার মুখে বাংলাদেশকে পড়তে হয়নি মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাসের কল্যাণে। দু’জন মিলে ভেঙেছেন ৬৩ বছরের পুরোনো রেকর্ড, অপরাজিত আছেন এখনো। তাতেই লজ্জার চোখরাঙানি এড়িয়ে বাংলাদেশ ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটা শেষ করল দারুণভাবে।
ঢাকা টেস্টে চরম বিপর্যয়ের মুখে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়েছে লিটন-মুশফিক জুটি। আজ (সোমবার) বাংলাদেশের দুই ব্যাটারের রেকর্ড জুটিটি ২০০ ছাড়ানো। বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেটে আগের ১৯১ রানের জুটি ভেঙে ২৫৩ রানে অবিচ্ছিন্ন আছেন দুই উইকেটকিপার ব্যাটার।
আগের ম্যাচে কাসুন রাজিথা কনকাশন বদলি হয়ে মাঠে নামার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাট হাতে এগিয়ে চলছিল বেশ। রাজিথা এসেই বিপদে ফেলেছিলেন স্বাগতিকদের। সেই রাজিথাকে এই ম্যাচে মূল একাদশে নিয়েই দ্বিতীয় টেস্ট শুরু করে শ্রীলঙ্কা। দারুণ এক স্পেলে শুরুতেই বাংলাদেশকে টলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সকালে ক্রিজের ব্যবহার করে স্টাম্প লক্ষ্য করে দারুণ সফলতাই পেয়েছেন তিনি। ব্যাটসম্যানদের দোষও ছিল বৈকি! দুয়ের মিশেলে রাজিথা শুরুর চার ওভারে তুলে নিলেন তিন উইকেট।
বাংলাদেশ খুইয়ে বসল ৫ উইকেট, মিরপুরে তখন দর্শকরা ঠিকঠাক ধাতস্থ হয়ে বসতেও পারেননি। পারবেন কী করে, ম্যাচের যে তখন ঠিকঠাক ৮ ওভারও শেষ হয়নি! ২৪ রান তুলতে ৫ উইকেট নেই, এমন পরিস্থিতিতে দুই অঙ্কের রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও ভালোভাবেই তাড়া করে ফিরছিল বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় ৬৬ রান নিয়ে।
পরের সেশনে উঠল ৮৭ রান। এই সেশনে ৬৩ বছরের পুরোনো একটা বিশ্বরেকর্ডও ভেঙে ফেলেন লিটন আর মুশফিক। ২৫ রানের কমে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের কীর্তিটা এতদিন ছিল পাকিস্তানের দখলে। ১৯৫৯ সালে ঢাকার বুকেই পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেই ম্যাচে ২২ রানে ৫ উইকেট খোয়ানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে ওয়ালিস ম্যাথিয়াস আর সুজাউদ্দিন তুলে ফেলেন ৮৬ রান। যা পরের ৬৩ বছর ছিল অক্ষত। সেই রেকর্ডটাকেই লিটন আর মুশফিক পাঠিয়ে দেন সাজঘরে।
ফিফটির আগে জীবন পাওয়া লিটন অবশ্য আর পেছন ফিরে তাকাননি। আগের টেস্টে পুড়েছিলেন সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে। এদিন আর সে ভাগ্যবরণ করতে হয়নি তাকে। শেষ ১৪ ইনিংসে ৩য় সেঞ্চুরিটা তুলে নেন তিনি। এরপর তার দেখানো পথে আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকও তুলে নেন সেঞ্চুরি।
তৃতীয় সেশনেও একটা রেকর্ড ভাঙেন দু’জনে মিলে। বাংলাদেশের হয়ে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা এতদিন ছিল মুশফিক আর আশরাফুলের। ২০০৭ সালে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই দু’জন মিলে করেছিলেন ১৯১ রান। সেই রেকর্ডটাকেও লিটন-মুশফিক ফেলেন পেছনে। প্রথমবারের মতো ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে দেন ২০০ রানের জুটির স্বাদ। থামেননি সেখানেই, পরে এই জুটি ছুঁয়েছে ২৫০ রানের মাইলফলকও। জুটিতে ২৫৩ আর স্কোরবোর্ডে ২৭৭ রান নিয়ে দিন শেষ করে এসেছেন দুজনে।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বিশ্বরেকর্ডটা ৩৯৯ রানের। ছয় বছর আগে জনি বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে এই রানের জুটি গড়েছিলেন বেন স্টোকস। লিটন-মুশফিক তা থেকে আছেন ‘মাত্র’ ১৪৬ রানের দূরত্বে। খাদের কিনারা থেকে যেভাবে দলকে টেনে তুলেছেন, এরপর যে আধিপত্য নিয়ে ব্যাট করেছেন আজ, সেটা ধরে রাখতে পারলে যে দ্বিতীয় দিনে সেই রেকর্ডটাও পড়ে যেতে পারে হুমকিতে, তা বলাই বাহুল্য।
এই জুটির প্রশংসা করে প্রধান কোচ ডমিঙ্গো বলেছেন, ‘এটা আমার টেস্ট কোচিংয়ে দেখা অন্যতম সেরা জুটি। আমরা ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিলাম। আমাদের চাপ ছিল, কিন্তু দুই ব্যাটারের অসাধারণ প্রচেষ্টা ছিল। অবশ্যই আমরা শুরুটা ভালো করতে পারিনি। সকালে দ্রুত উইকেট হারিয়েছি কিছু ভালো ডেলিভারিতে। টেস্ট ক্রিকেট খুব কঠিন, তার মধ্যে দুই ব্যাটার অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে আমাদের ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে।’
Discussion about this post