খেলাধূলা ডেস্ক
ইউরোপসেরা ইতালি আর দক্ষিণ আমেরিকার সেরা আর্জেন্টিনার লড়াই। ধ্রুপদী এক দ্বৈরথেরই আশা করা হচ্ছিল। তবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা সেটা হতে দিলো কই? শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় পুরোটা সময় ইতালির ওপর একপ্রকার আধিপত্য বিস্তারই করেছে আলবিসেলেস্তেরা। ৩-০ গোলে ইউরোপসেরাদের হারিয়ে জিতে নিয়েছে ফিনালিসিমার আর্তেমিও ফ্রাঞ্চি ট্রফিটাও।
ফিনালিসিমার শুরু থেকেই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের আশপাশ চলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দখলে। ৯০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামের একটা আসনও ফাঁকা যায়নি। শুরু থেকেই উত্তাপটা টের পাওয়া যাচ্ছিল বৈকি।
২৮ বছরের ট্রফি খরা গত বছরই কাটিয়েছে তারা। ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছে আর্জেন্টিনা। তাতে লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে আন্তমহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নেমেছিল তারা। শক্তিতে আর্জেন্টিনা দেখিয়ে দিলো শুধু লাতিন নয়, ইউরোপেও সেরা। দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি গোল পাননি। তবে লাউতারো মার্তিনেসকে দিয়ে প্রথম গোলটি তারই করানো। দিবালার দেওয়া শেষ গোলের উৎসও তিনি। তাছাড়া প্যারিস সেন্ত জার্মেই সতীর্থ গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোনারুম্মা বাধার দেয়াল হয়ে না দাঁড়ালে গোল উদযাপন তারও করা হতো!
ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলিতে শুরু থেকে বল দখলে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। আক্রমণও কম করেনি। মেসি-দি মারিয়া-মার্তিনেসরা মিলে আজ্জুরিদের রক্ষণ তছনছ করে ছেড়েছেন। গোল ব্যবধান আরও বাড়তে পারতো। কিন্তু ফিনিশিং ঠিকঠাক না হওয়ার সঙ্গে দোনারুম্মার দুর্দান্ত সব সেভে ৩-০ ব্যবধান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে।
ম্যাচের শুরুর দিকে মেসির ফ্রি কিক রক্ষণে বাধা পায়। পরের দুটি আক্রমণ ইতালির। রক্ষণ সামলে ১৯ মিনিটে ইতালি আক্রমণে যায়। ফের্নান্দিসের পাসে বেলোত্তি বল ধরার আগে আর্জেন্টিনার রোমেরো ‘ক্লিয়ার’ করেন। দুই মিনিট পর সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে বেলোত্তির হেড গোলকিপার লাফিয়ে উঠে তালুবন্দি করেন।
একটু পর আর্জেন্টিনা আবারও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে। ২৭ মিনিটে সতীর্থের কাছ থেকে পাস পেয়ে মেসির জোরালো শট গোলকিপার তালুবন্দি করলে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের হতাশ হতে হয়।
কিন্তু পরের মিনিটে আর্জেন্টিনাকে আর আটকানো যায়নি। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে মেসি নিচু ক্রস বাড়িয়েছিলেন লাউতারোর দিকে, পোস্টের একদম সামনে থেকে এই স্ট্রাইকার বল জালে জড়াতে ভুল করেননি। মেসির সঙ্গে ডিফেন্ডার লরেঞ্জো সেঁটে থাকলেও আটকাতে পারেননি।
বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে আর্জেন্টিনা ব্যবধান দ্বিগুণ করে। লাউতারোর পাসে দি মারিয়া ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে চিপে আগুয়ান গোলকিপারের ওপর দিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।
২ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতির পর আর্জেন্টিনা আক্রমণে ঝড় বইয়ে দেয়। যদিও গোলের দেখা পাচ্ছিল না। এরই একফাঁকে সুযোগ আসে ইতালির সামনে। ৫৯ মিনিটে লোকাতেল্লির জোরালো শট এক ডিফেন্ডারের শরীরে লেগে পোস্টে ঢোকার মুহূর্তে গোলকিপার তালুবন্দি করেন।
পরের মিনিট থেকে মেসি-দি মারিয়াদের ঝলক শুরু। শুরুতে দি মারিয়ার জোরালো শট গোলকিপার হাত দিয়ে দূরে ঠেলে দেন। ৬২ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে দি মারিয়ার সাইড ভলি গোলকিপার প্রতিহত করেন। এর দুই মিনিট পর মেসির ক্রস থেকে লাউতারো প্লেসিং করতে পারেননি। অন্য প্রান্তে লো সেলসো শট নিলেও তা বাইরের জাল কাঁপায়।
৬৫ ও ৬৭ মিনিটে মেসির শট প্রতিহত করে গোল ব্যবধান বাড়তে দেননি দোনারুম্মা। তবে যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে দিবালা গোল করে সমর্থকদের মুখে আবারও হাসি ফোটান।
এই গোলের উৎসব শেষ হতে না হতেই রেফারির শেষ বাঁশি। এরপর আর্জেন্টিনার ‘আসল’ উৎসব শুরু। লাতিন আমেরিকা জয়ের পর ইউরোপ জয়!
Discussion about this post