খেলাধূলা ডেস্ক
মেসি! মেসি !! মেসি !!! তিনি খেললেন , খেলালেন ! ওই মেসি ম্যাজিকেই কাতার বিশ্বকাপের শেষ আটে পৌঁছে গেলো আর্জেন্টিনা। শনিবার দিবাগত রাতে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আলবেসিলেস্তরা। আর্জেন্টিনার হয়ে অপর গোলটি জুলিয়ান আলভারেজের। অস্ট্রেলিয়ার গোলটিও আর্জেন্টিনার বদৌলতে পাওয়া। আত্মঘাতী গোল করেন এনজো ফের্নান্দেজ। তাতে অবশ্য জিততে সমস্যা হয়নি আর্জেন্টিনার। এই জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস।
আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম থেকেই বলের দখল আর্জেন্টিনার। ছোট ছোট পাসে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেন মেসিরা। রক্ষণ মজবুত রাখায় নজর বেশি ছিল সকারুদের। শুরু থেকেই শারীরিক ফুটবল খেলারও চেষ্টা তাদের।
১৮ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণ থেকে একবার আর্জেন্টিনার বক্সে ঢোকে অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলাররা। কিন্তু গোলে শট মারার আগেই বল গোললাইন অতিক্রম করে চলে যায়। আর্জেন্টিনার কাছে বলের দখল বেশি থাকলেও তখনও গোলমুখী শট নিতে পারেননি মেসিরা।
২২ মিনিটের মাথায় ম্যাচের প্রথম কর্নার পায় তারা অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সেখান থেকে কোনও বিপদ তৈরি হয়নি। আর্জেন্টিনার মাঝমাঠ ও আক্রমণ ভাগের মধ্যে দেওয়াল তৈরি করে অস্ট্রেলিয়া। ফলে থ্রু বলে সামনে এগোতে পারেননি মেসিরা। ডি মারিয়া না থাকায় প্রান্ত ধরে আক্রমণও কম হয়।
৩৫ মিনিটে দেখা মিললো গোলের। বিশ্বকাপের নকআউটে প্রথম গোল করলেন লিওনেল মেসি। কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে আর্জেন্টিনার ফুটবলারকে ফাউল করায় ফ্রিকিক পায় আর্জেন্টিনা। ফ্রিকিক থেকে সরাসরি গোল না হলেও ফিরতি বল পান মেসি। ডি পলের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের মাটি ঘেঁষা শটে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। চলতি বিশ্বকাপে এটি মেসির তৃতীয় গোল।
গোল খেয়ে আক্রমণে কিছুটা জোর দেয় অস্ট্রেলিয়া। ফলে রক্ষণ ছেড়ে উঠে আসতে বাধ্য হচ্ছিল তারা। সেই ফাঁকে আক্রমণে ওঠে আর্জেন্টিনাও। কিন্তু প্রথমার্ধে আর গোল আসেনি। ১-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
প্রথমার্ধে হাই প্রেসে আর্জেন্টিনার নাভিশ্বাস তুলছিল অস্ট্রেলিয়া। বিরতির পর সেই এক মুহূর্তের হাই প্রেসেই সকারুদের জালে দ্বিতীয় গোলটা জড়াল কোচ লিওনেল স্ক্যালোনির দল।
ম্যাচের ৫৭ মিনিটে বলটা গিয়েছিল অজি গোলরক্ষক ম্যাথিউ রায়ানের পায়ে। সঙ্গে সঙ্গে মাঝমাঠ থেকে ছুটে এসে তাকে চেপে ধরেন রদ্রিগো ডি পল, তার চাপেই রায়ান বলের দখল হারান অন্য পাশ থেকে ছুটে আসা অ্যালভারেজের কাছে। বলটা আয়ত্বে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি শট নেন অস্ট্রেলিয়ার গোলমুখে, অজি রক্ষণকে দর্শক বানিয়ে বলটা গিয়ে জড়ায় জালে। আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ২-০ গোলে।
এর আগে অস্ট্রেলিয়া শুরু থেকে দারুণ প্রেসে আর্জেন্টিনাকে নড়বড়ে করে রেখেছিল। লিওনেল স্ক্যালোনির দল যে নিচ থেকে খেলা গড়ে ওপরে উঠবে, সে সুযোগটাও দিচ্ছিল না অজিরা। হাইপ্রেসে নড়বড়ে করে দিচ্ছিল দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নদের। ৩৫ মিনিটে গোলের আগে একটাও লক্ষ্যে শট নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। বলার মতো কোনো আক্রমণও গড়তে পারেননি মেসিরা। এ থেকেই বোঝা যায়, রক্ষণ কতটা আঁটসাঁট আর্জেন্টিনাকে রুখে রেখেছিল কোচ গ্রাহাম আরনল্ডের দল।
ম্যাচের ৭৬ মিনিটে আত্মঘাতী গোল খেয়ে বসে আর্জেন্টিনা। বক্সের বেশ বাইরে থেকে গোল মুখে শট নিয়েছিলেন গডউইন। এনজো ফের্নান্দেজে মাাথায় লেগে বল জড়িয়ে যায় জালে, আত্মঘাতী গোল। তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না এমিলিয়ানো মার্টিনেজের।
এক গোল পরিশোধের পর আরও মরিয়া হয়ে ওঠে অজিরা। ম্যাচের ৮০ মিনিটে প্রায় সমতায় ফিরেই যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। আজিজ বেহেচি শট নিয়েছিলেন গোলপোস্টে মার্টিনেজের গায়ে লেগে বল চলে যায় বাইরে।
শেষ ১০ মিনিটে আক্রমণের বন্যা বইয়ে দেয় অজিরা। ম্য়াচের একদম শেষ মুহূর্তে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন তারা। মার্টিনেজকে গোলপোস্টের নিচে একাই পেয়েছিলেন কুলো। শট নিয়েছিলেন সোজাসুজি। বল ঠেকিয়ে দেন মার্টিনেজ, বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয়ে শেষ আটে মেসিরা।
Discussion about this post