ক্রীড়া ডেস্ক
১৮৭ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় ১৩৬ রানেই ৯ উইকেট নেই বাংলাদেশের। উইকেটে ব্যাটার বলতে ১১ নম্বরে নামা মুস্তাফিজুর রহমান আর মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরপুরের পরিপূর্ণ গ্যালারি তখন একদম নিশ্চুপ। জেতার আশা একদম ছেড়েই দিয়েছিলেন মাঠে থাকা দর্শকদের অনেকে। ম্যাচের এমন এক পরিস্থিতিতে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মিরাজ।
সবচেয়ে বেশী শঙকা ছিলো বোলার মোস্তাফিজকে নিয়ে! একজন বোলার কি পারবেন এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে ? মিরাজেরও ভয় ছিলো নিজেকে নিয়ে নয়, মোস্তাফিজকে নিয়ে ! কিন্তু এ যেনো অন্য এক মোস্তাফিজকে দেখলো বাংলাদেশ ! রান মাত্র ১০ কিন্তু ক্রিজ আগলে রাখলেন পাহাড়ের মতন! মিরাজকে বলেছিলো,‘ আমাকে নিয়ে টেনশন করিসনা , আমি আউট হবোনা ! যেভাবেই হোক আমি টিকে থাকবো।’
তার সুবাদেই ৪১ রানের এক সাহসী ইনিংস খেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর তাতেই রোহিত-কোহলিদের হতাশার সাগরে ডুবিয়ে নাটকীয় এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
মিরপুরের শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার ভারতের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মিরাজের বীরত্বে এক উইকেটে জিতেছে লিটন দাসের দল।
শেষ উইকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি গড়েছেন, মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে জিতিয়েছেন খাদের কিনারায় যাওয়া দলকে।
রেকর্ড কিংবা সংখ্যায় এই লড়াই বুঝানো কঠিন। ১৩৪ রানে যখন আফিফ হোসেন ফিরলেন, তখনই স্বপ্নের সীমানা পৌঁছে গেছে প্রায় শেষ প্রান্তে। প্রায় অর্ধেক দর্শকই ছেড়ে গেছেন গ্যালারি। নবম ব্যাটার হিসেবে দুই রান পর ফিরেছিলেন হাসান মাহমুদও। জয়ের সব সম্ভাবনার শেষ হয়ে গিয়েছিল সেখানেই।
কিন্তু ‘শেষ’ হয়ে যাওয়া লড়াইয়ে পূর্ণতা দিতে পারলেই তো ইতিহাসের নায়ক হওয়া যায়। মিরাজ যে এই ম্যাচের জন্য হলেও হচ্ছেন তা, তাতে সন্দেহ থাকার কথা কম। এই ব্যাটার কী করেননি!
ঠাণ্ডা থেকেছেন, ভারতের বোলারদের বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সচল রেখেছেন রানের গতি। তার সঙ্গী মোস্তাফিজুর রহমানও ছিলেন একই রকম। বাউন্ডারি এসেছে তার ব্যাট থেকেও। সংখ্যার সীমানা ছাড়িয়ে তারা ঢুকেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল এক ইতিহাসে। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে এনে দিয়েছেন ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়।
অনেক দিন পর খেলা গড়ানো মিরপুরের উইকেট আজ বেশ স্লো ছিল। প্রথমে ব্যাট করে ভারত তুলতে পারে মোটে ১৮৬ রান। অবশ্য তারা ৫০ ওভার পুরোটা খেলতে পারেনি। সাকিব আল হাসানের ঘুর্ণিতে তারা আলআউট হয়ে যায় ৪১ ওভার ২ বলেই। সাকিব নেন ৫ উইকেট।
জবাবে বাংলাদেশের শুরুটাও ততটা ভালো হয়নি। প্রথম বলেই আউট হয়ে যান ওপেনার শান্ত। এরপর বিজয় ও লিটন ছোট করে জুটি বাঁধেন। ১০ম ওভারে বিদায় নেন বিজয়।
সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের ৪৮ রানের জুটি এগোচ্ছিল ধীরে ধীরে। কিন্তু হুট করেই সাদামাটা আউট হয়ে যান লিটন। সুন্দরের টার্ন করা বল গ্লাভসে লাগে তার। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৬৩ বলে ৪১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান লিটন।
কিছুক্ষণ পর আউট হয়ে গেছেন সাকিবও। সুন্দরের বল কাভারের উপর দিয়ে তুলে মারতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এক্সট্রা কাভারে দাঁড়িয়ে এক হাতে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেন কোহলি।
দুই ব্যাটারকে হারানোর পর আশার আলো হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। এই দুই ব্যাটার ধীরস্থির খেলছিলেন, তাতেও কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু উইকেটে টিকতে পারেননি তারা।
প্রথমে শার্দুল ঠাকুরের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩৫ বল খেলেও কোনো বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে কেবল ১৪ রান করেন তিনি। এরপর ৪৫ বলে ১৮ রান করা মুশফিক ফেরেন মোহাম্মদ সিরাজের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে। তার ব্যাট থেকেও কোনো বাউন্ডারি আসেনি।
১২ বলে ৬ রান করা আফিফ হোসেনের দারুণ এক ক্যাচ ধরেন মোহাম্মদ সিরাজ। এরপর হার ছিল নিয়তি। কিন্তু মিরাজ হাল ধরেন তখন। মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে গড়েন ৫১ রানের জুটি। বাংলাদেশের হয়ে শেষ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ। ৪ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৩৯ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। তার সঙ্গী মোস্তাফিজ ২ চারে ১১ বলে ১০ রান। অবিশ্বাস্য এক জয়ের সাক্ষী হয় ক্রিকেট বিশ্ব।
Discussion about this post