খেলাধূলা ডেস্ক
জার্মানিকে হারিয়ে শুরু, এরপর স্পেনকে হারিয়ে মৃত্যুকূপ থেকে রীতিমতো গ্রুপের সেরা হয়েই নকআউটে এসেছিল নীল সামুরাইরা। ক্রোয়েশিয়াকেও দারুণ চোখরাঙানিই দিচ্ছিল হাজিমে মরিয়াসুর দল, এগিয়ে গিয়েছিল শুরুতেই।
বিশ্বকাপের রাউন্ড অফ সিক্সটিনে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধেই সামুরাই ব্লুদের ম্যাজিক। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে নকআউট ম্যাচের প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে যায় সূর্যোদয়ের দেশ। জাপানের হয়ে গোলের মুখ খোলেন ডাইজেন মায়েদা। বিরতির পর শুরুতে ক্রোয়েশিয়াকে ম্যাচে ফেরান পেরিসিচ। ১-১ গোলে শেষ হয় নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা।
ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। অতিরিক্ত সময়েও হয়নি মীমাংসা। ফলে পেনাল্টি শুটআউট। সেখানে জাপানের তিনটি পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দেন ক্রোট গোলকিপার ডোমিনিক লিভাকোভিচ। পেনাল্টি স্নায়ুযুদ্ধে লিভাকোভিচ বীরত্বে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে শেষ আটে উঠে ক্রোয়েশিয়া। শেষ ষোলোতেই সমাপ্ত জাপানের বিশ্বকাপ মিশন।
বড় প্রতিপক্ষ সামনে পেলেই জাপান জ্বলে ওঠে, গ্রুপ পর্বে জার্মানি আর স্পেন সেটা টের পেয়েছে ভালোভাবেই। সেটা আজও দেখা গেল। শুরুতে অবশ্য ক্রোয়েশিয়াই নিয়ন্ত্রণ করছিল ম্যাচটা, তবে সময় গড়াতেই জাপান চলে আসে দৃশ্যপটে। পেয়ে যায় গোলের দেখাও। রিতসু দোয়ানের বাড়ানো ক্রসে মায়া ইয়োশিদা মাথা ছুঁয়ে গিয়ে পড়ে দাইজেন মায়েদার কাছে, জাপানকে এগিয়ে দিতে ভুল করেননি সেল্টিকের এই স্ট্রাইকার।
গোলটা করেই যেন ভুলটাও করে বসল জাপান। হ্যাঁ, ভুলই। নিজেদের শেষ সাত ম্যাচে শুরুতে গোল করে ৪ ম্যাচে হেরেছে নীল সামুরাইরা। বিশ্বকাপের নকআউটে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচ জেতার রেসিপি ক্রোয়াটদেরও অজানা নয়। গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচটা বের করে নিয়েছিল দলটি!
বের করে নিল আজও। গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন যিনি, সেই ইভান পেরিসিচ এগিয়ে এলেন আজও। তার গোলেই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সমতায় ফেরেন লুকা মড্রিচরা।
৫৮ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিল জাপান। ওয়াতারু এন্ডোর শটটি লাফিয়ে বাইরে বের করেন লিভাকোভিচ। বাকিসময় আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ হলে গোলের দেখা পায়নি কোনও দলই। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত গড়ালো। সেখানেও কোন গোল হয়নি ফলে নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে।
মিনামিনোর প্রথম পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন ক্রোয়েশিয়ার কিপার লিভাকোভিচ। ভ্লাসিচ নড়বড় করলেও পেনাল্টিতে গোল হয়। ক্রোয়েশিয়া ১-০ এগিয়ে যায়।
এরপর জাপানের মিতোমার পেনাল্টিও ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ। এরপর গোল করে ক্রোয়িশিয়াকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন ব্রোজোভিচ।
এরপর গোল করেন জাপানের টাকুমা আসনো। ক্রোয়েশিয়ার লিভাজার শট ঠেকিয়ে দেন জাপানি গোলকিপার এস গোন্ডা।
এরপর আবার জাপানের ইয়োশিদার শট ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ। পরে লক্ষ্যভেদ করেন মারিও পাসালিক। পেনাল্টি শুটআউটে ৩-১ গোলে ম্যাচ জিতে নেয় ক্রোয়েশিয়া।
পুরো ম্যাচে দাঁতে দাঁত চেপে জাপানকে রুখে দেওয়া ক্রোয়াট গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ টাইব্রেকারেও দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন যেন। আর জাপান টানা দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এগিয়ে গিয়েও জিততে ব্যর্থ হয়ে বিদায় নিল । গেল বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়েও ৩-২ গোলে হারের গ্লানি নিয়ে বিদায় নিয়েছিল। তবে এবারের আফসোসটা হয়তো বেশিই হবে কোচ মরিয়াসুর, ম্যাচটা জেতা থেকে যে মাত্র তিনটা পেনাল্টির দূরত্বে ছিল তার দল!
Discussion about this post