খেলাধূলা ডেস্ক
বাংলাদেশ ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছিলো। কেউ কি স্বপ্নেও ভেবেছিলো, লালসবুজ আবার জেগে উঠবে ফিনিক্স পাখির মতো! তার পর মেহেদী হাসান মিরাজের অতিমানবীয় সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ২৭১ রান ! শেষ ৫ ওভারে মাহমুদুল্লাহ ও মুস্তাফিজের সমীহ জাগানিয়া অসাধারণ বোলিং ! হতাশার খাদের তলানি থেকে আত্মবিশ্বাসী বিজয়ের হিমালয় চূড়ায়! এখন সবি সম্ভব এই বাংলাদেশী টাইগারদের কে দিয়ে। এই টুকুই বুঝি চাওয়া ছিলো কোটি হৃদয়ের, যারা হারলেও বাংলাদেশ জিতলেও বাংলাদেশ।
ভারতের অবস্থাও শোচনীয় ছিল জবাবে। ৬৫ রানে পড়ে ৪ উইকেট! সেখান থেকে শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেলের ১০৭ রানের জুটি ভাঙলে ম্যাচ হেলে যায় বাংলাদেশের দিকে। তখনও বোঝা যায়নি চোট আক্রান্ত রোহিত শর্মা শেষটায় কতটা রোমাঞ্চ জমিয়ে রেখেছিলেন। হঠাৎ ক্রিজে নেমে বাংলাদেশের জয়ের পথে বাধা হতে চেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু মিরাজের দারুণ ব্যাটিংয়ের পর শেষের ঝলকটা দেখালেন মোস্তাফিজ। তার দুর্দান্ত বোলিংয়েই ভারতীয় অধিনায়ক শেষ বলে আর ৬ রান নিতে পারলেন না। তাতে বাংলাদেশ ৫ রানে জিতে ওয়ানডে সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করেছে।
টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে আগের ম্যাচের উদ্বোধনী জুটিতে বদল আনে বাংলাদেশ। লিটন দাসের সঙ্গী হন এনামুল হক বিজয়। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল আছেন ছন্দে। ফ্লিক করেছিলেন, খেলেছিলেন দৃষ্টনন্দন কাভার ড্রাইভও। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
মোহাম্মদ সিরাজের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। চতুর্থ বলে স্লিপে বিজয়ের ক্যাচ ছাড়েন রোহিত শর্মা। হাতে চোট নিয়ে মাঠও ছাড়তে হয় তাকে। পঞ্চম বল অফ সাইড থেকে কিছুটা সুইং করে প্যাডে লাগে বিজয়ের। সিরাজের এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি বিজয়। ৯ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন লিটন দাস। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
দশম ওভারে সিরাজের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন তিনি। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যেতে হয় বাংলাদেশ অধিনায়ককে। ২৩ বলে কেবল ৭ রান করেন লিটন।
নাজমুল হোসেন শান্ত পজিশন বদলেও বড় রান পাননি। ৩ চারে ৩৫ বলে ২১ রান করেন তিনি। উমরান মালিকের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। সাকিব ফিরে যান ওয়াশিংটন সুন্দরের ওভারে। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয় তার। স্লিপে দাঁড়ানো শেখর ধাওয়ান ক্যাচ ধরেন। ১ চারে ২০ বলে ৮ রান করেন তিনি।
আফিফ হোসেন ও মুশফিকুর রহিমও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ২ চারে ২৪ বলে ১২ রান করে শুরুতে মুশফিক সাজঘরে ফেরত যান ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে একই বোলারের ওভারে বোল্ড হয়ে যান আফিফ।
হুট করে ১৭ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচে নায়ক হয়ে ম্যাচ জেতানো মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ সব শটের সঙ্গে তিনি খেলছিলেন দায়িত্ব নিয়েও। তার সঙ্গে এই ইনিংসের সবচেয়ে বড় হাইলাইট মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রানে ফেরা।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বেশ কয়েকবার। এখনও দলে থাকার মতো সক্ষমতা আছে কি না, কথা উঠেছিল এ নিয়েও। সবকিছুর প্রমাণ যেন মাঠেই দিতে চাইলেন রিয়াদ। মিরাজের সঙ্গে তার ১৪৭ রানের জুটি ভাঙে ৪৭তম ওভারে এসে।
উমরান মালিকের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৭ চারে ৯৬ বলে ৭৭ রান করেন রিয়াদ। তিনি সাজঘরে ফেরার পরও দলকে টেনে নেন মিরাজ। উইকেটের সামনে, পেছনে; বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে পেয়ে যান শতকের দেখা। নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২ হাজার রান ও দুইশ উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেন এই অলরাউন্ডার।
মিরাজের অসাধারণ ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত থেকেছে অপরাজিতই। ৮ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংসে ৮৩ বলে ১০০ রান করেন মিরাজ। রোমাঞ্চকর অপেক্ষা শেষে ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে পূর্ণ করেন শতক। শেষ পাঁচ ওভারে দলের রান হয় ৬৮। বাংলাদেশ পায় ২৭১ রানের সংগ্রহ।
জবাব দিতে নামা ভারতকে বল হাতে চাপে ফেলেন মিরাজ-এবাদতরা। রোহিত শর্মা ক্যাচ নিতে গিয়ে আঙুলের চোটে পড়েন। ওপেনিংয়ে নেমে বিরাট কোহলি ৫ রান তুলে এবাদতের বলে বোল্ড হন। পরেই মিরাজ তুলে নেন শিখর ধাওয়ানকে। চারে নামা ওয়াশিংটন (১১) এবং পাঁচে নামা কেএল রাহুল (১৪) রান পাননি। ৬৫ রানে ভারত হারায় ৪ উইকেট।
সেখান থেকে ১০৮ রানের জুটি দেন তিনে নামা শ্রেয়াস আয়ার ও ছয়ে নামা অক্ষর প্যাটেল। ওই জুটি ভাঙেন মিরাজ। ছয় চার ও তিন ছক্কায় ৮২ রান করা আয়ারকে ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। এরপরই আউট হন ৫৬ রান করা অক্ষর। ম্যাচ চলে আসে বাংলাদেশের হাতে। কিন্তু অবাক করে নয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন রোহিত শর্মা।
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ তিন ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪০ রান। আর সেই কঠিন সময়েই ১৮তম ওভারে মোস্তাফিজ একটি রানও নিতে দেননি। শেষ ১২ বলে লক্ষ্য থাকে একই। তবে মাহমুদউল্লাহর প্রথম বলে ছক্কা মেরে ব্যবধান কমাতে সমর্থ হন রোহিত। পরের বলে আসে অতিরিক্ত চার রান। তিন নম্বর বলে রোহিতকে জীবন দেওয়ার বিলাসিতাও করেন এবাদত। জীবন পেয়ে পরের বলে আবারও ছক্কা মেরে রোহিত ম্যাচ বাঁচিয়ে রাখেন। ভাগ্যও তখন সহায় ছিল তার। পঞ্চম বলে আবারও ক্যাচ উঠলে এবার সেটি হাতছাড়া করেন এনামুল। শেষ বলে সিরাজকে ক্লিন বোল্ড করেন মাহমুদউল্লাহ। ততক্ষণে শেষ ওভারে নতুন লক্ষ্য দাঁড়িয়ে গেছে ২০। তার পরেও মোস্তাফিজের ওভারে ভয় ধরিয়ে দেন রোহিত। দুটি চার ও একটি ছক্কা মেরে জয়ের প্রায় কাছে চলে এলেও শেষটায় ইয়র্কার মেরে সব সম্ভাবনার ইতি ঘটান মোস্তাফিজ।
বাংলাদেশের হয়ে পেসার এবাদত তিনটি এবং মিরাজ ও সাকিব দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। ভারতের হয়ে স্পিনার সুন্দর তিনটি এবং পেসার সিরাজ ও উমরান মালিক দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
Discussion about this post