ক্রীড়া ডেস্ক
ব্রায়ান চার্লস লারা। সুন্দর ক্রিকেট আর লারা যেন সমর্থক শব্দ। আর এই দুইয়ে মিলে ক্যারিবিয়ান তো বটেই বিশ্ব ক্রিকেটেই অসাধারণ কিছু মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে। আজ (২ মে) কীর্তিমান ওয়েস্ট ইন্ডিজে ব্যাটসম্যানের জন্মদিন। ৫১ বছরে পা রাখলেন লারা। ১৯৬৯ সালের এই দিনে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে জন্মেছিলেন তিনি।
বাঁহাতি তারকা এ ব্যাটসম্যানেকে অন্য অনেক ইনিংসের বাইরে সব থেকে আলাদা করে রেখেছে তার ঐতিহাসিক অপরাজিত ৪০০ রানের মাইলফলক। ২০০৪ সালে অ্যান্টিগা টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ইনিংসটি সাদা পোশাকের ইতিহাসে ব্যক্তিগত ইনিংস হিসেবে এখনও বিশ্ব রেকর্ড।
২০০৪ সালের ১২ এপ্রিলই বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন লারা। মজার ব্যাপার অ্যান্টিগার সেন্ট জোনসেই দুবার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। প্রথমবার ১৯৯৪ সালে স্বদেশি স্যার গ্যারি সোবার্সের ৩৬৫ রানের ইনিংস ৩৬ বছর পর ভেঙে করেন ৩৭৫ রান। তবে এর ৯ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথিউ হেইডেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পার্থ টেস্টে ৩৮০ করে সেই রেকর্ড নিজের করে নেন। তবে ৬ মাস পরেই ফের রেকর্ডের মালিক বনে যান লারা। আর এতে প্রতিপক্ষ হিসেবে দুবারই কান্না করতে হয় ইংল্যান্ডকে।
সেদিন সিরিজের চতুর্থ টেস্টে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে নেমেছিল উইন্ডিজরা। তবে আগের তিন টেস্টে মাত্র ১০০ রান করা লারার ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। কিন্তু বাঁহাতি এই কিংবদন্তি যে নিজেকে প্রমাণে বেশি সময় নেন না তা আবারও বুঝিয়ে দিলেন। টস জিতে ক্যারিবীয়রা ব্যাটিং নিলে ক্রিস গেইল ঝড়ো শুরু এনে দেন। কিন্তু এই ওপেনার আউট হওয়ার পরই মাঠে নামেন লারা। আর প্রথম দিন স্বাগতিকরা লারার ব্যাটে ভর করেই ২ উইকেট হারিয়ে ২০৮ রান করে। ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন লারা।
দ্বিতীয় দিন লারা ৩০০ রান করে ফেলেন। আর উইন্ডিজ ৫ উইকেট হারিয়ে ৫৯৫ রান করে। যেখানে তৃতীয় দিন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে। ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কোয়াড্রাপল (৪০০) করেন এই কিংবদন্তি। তিনি প্রায় ১৩ ঘণ্টার মতো ব্যাটিং করে ৪৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৮২ বলে নিজের ইনিংস সাজান। ক্যারিবীয়রা প্রথম ইনিংস ৭ উইকেট হারিয়ে ৭৫১ রানে ঘোষণা করে।
লারার কল্যাণেই সেই টেস্টে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর সেই সঙ্গে প্রায় ১৬ বছর হতে চললো তার রেকর্ডটি এখনও অক্ষুণ্ন রয়েছে।
মজার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও বিশ্ব রেকর্ডটি লারার দখলে। ১৯৯৪ সালে এজবাস্টনে ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে ডারহামের বিপক্ষে ৫০১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলা লারা ক্যারিয়ারে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ২২ হাজার ৩৫৮ রানে শেষ করেছেন। রয়েছেন ৫৮টি সেঞ্চুরি।
লারার দখলে যৌথভাবে টেস্টে এক ওভারে সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ডও রয়েছে। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকাতেই স্পিনার রবিন পিটারসেনের ওভারে ২৮ রান তুলেছিলেন।
এর আগে ১৯৯০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডেতে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়েছিল লারার। যেখানে ক্যারিয়ার শেষে খেলেছেন ১৩১টি টেস্ট ও ২৯৯ ওয়ানডে। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তিনি ৩৪টি সেঞ্চুরিসহ ১১ হাজার ৯৫৩ রান করেছেন। আর ৫০ ওভারের ম্যাচে ১৯টি সেঞ্চুরিসহ ১০ হাজার ৪০৫ রান করেছেন।
Discussion about this post