লিখেছেন – ডাঃ মারুফা আক্তার
চোখের ভাষা পাল্টাতে সুন্দর চোখে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভ্রু আনে অনন্য মাত্রা। আইব্রো পোষ মানাতে প্লাক যে করতেই হবে তা কিন্তু নয়। তবে তা অসুন্দর, এলোমেলো হলে অবশ্যই দরকার প্লাকিং, থ্রেডিং কিংবা পশ্চিমা ঢংয়ে ওয়্যাক্সিং। প্রয়োজনে ছেলেরাও আইব্রো প্লাক করেন। আইব্রো নিয়ে টুকিটাকি জানাতেই আজকের এই লেখা। জেনে নিন আইব্রোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ৫টি করনীয় সম্পর্কে।
আইব্রোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে করনীয়
১.আকৃতি
আইব্রোর প্রধান বিষয় হল যুতসই আকৃতি। নতুনেরা অবশ্যই ভালো স্যালনে গিয়ে মানানসই শেপ করে নিবেন। মুখের কাটিং অনুযায়ি বিভিন্ন রকম শেপ মানায়। যেমন-
- গোলগাল মুখে রাউন্ড শেপ।
- লম্বাটে মুখে ভি বা কর্নার স্ট্রেইট শেপও ভালো মানায়।
- বড় চোখে সরু ভ্রু মানায়।
- টানাটানা চোখে স্ট্রেইট শেপ করা যায়।
- চোখ ছোট হলে আইব্রো একটু মোটা রাখুন।
২. ধরন
কারো কারো আইব্রো কম বা পাতলা। ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি, রোগের উপসর্গ অথবা বংশগতভাবেও আইব্রো পাতলা হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি রাতে ক্যাস্টর অয়েল ও আলমন্ড অয়েল মিশিয়ে আইব্রোতে লাগান। প্রয়োজনে স্কিন স্পেশালিস্ট-এর পরামর্শ নিন। বাদামি আই পেনসিল দিয়ে আইব্রো এঁকে নিলে ভরাট লাগে। স্থায়ীভাবেও আইব্রো আঁকা বা সেটিং করা যায়, যা খানিকটা ব্যায়বহুল।
মোটা আইব্রো শেপ করতে তেমন ঝক্কি পোহাতে হয় না। জোড়া ভ্রুর মাঝে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। তবে কেউ কেউ জোড়াটাই পছন্দ করেন।
কতদিন পর পর করবেন
আইব্রো বেড়ে ওঠার সময় ও পরিমানের ওপর নির্ভর করবে প্লাকের সময়সীম। অনেকে আইব্রোর সাথে সাথে আপার লিপ, লোয়ার লিপ এমনকি পুরো মুখও থ্রেডিং করে থাকেন। এতে তেমন কোন সমস্যা নেই বরং অবাঞ্চিত লোম তুলে ফেললে ঠোঁটের শেপ সুন্দর হয়।
সমস্যা
আইব্রো প্লাক বা থ্রেডিং-এর পর পরই ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বাড়তি যত্ন দরকার। যেমন-
- অ্যালার্জির কারণে প্লাক বা থ্রেডিং শেষে ত্বক লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ঠান্ডা পানিতে তুলা ভিজিয়ে বা বরফ নিয়ে আলতোভাবে লাগাতে হবে। এরপর অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লাগাতে পারেন।
- র্যাশ বা পিম্পল দেখা দিলে প্রতিবার প্লাকের ৫/৭ মিনিট আগে ও শেষে তুলায় বরফ নিয়ে চেপে চেপে লাগান।
- তৈলাক্ত ত্বকে থ্রেডিং বা প্লাকের আগে পাউডার ও পরে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লাগাতে পারেন। শুস্ক ত্বকে প্লাক বা থ্রেডিং শেষে দরকার ময়েশ্চারাইজার ক্রিম দিয়ে হালকা ম্যাসাজ।
৩. আইব্রো পিয়ার্সিং
বডি পিয়ার্সিং সারাবিশ্বের সর্বসাধারণের কাছে স্বীকৃত এবং নন্দিত। আমাদের সংস্কৃতিতে নাক এবং কান ছিদ্র করার প্রচলন সমাদৃত। ফ্যাশন সচেতন মেয়েরা নাক এবং কানের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ছিদ্র করে। ফ্যাশন নিয়ে বৈচিত্র্যময় ভাবনা মাথায় রাখলে কিংবা হালের ফ্যাশন ট্রেন্ড একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে এখন আইব্রো পিয়ার্সিং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
৪. মেকআপ তোলার নিয়ম
আইব্রোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে আইব্রো বা আইল্যাশের মেকআপ অনেক যত্নের সাথে তুলতে হয়। মেকআপ তোলা নিয়ে খুব বেশি জোড়াজুড়ি করলে আইল্যাশ বা আইব্রো ঝড়ে যেতে পারে। প্রথমে কোন ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন দিয়ে চোখের উপরের মেকআপ একটু নরম করে নিতে হবে। এরপর মেকআপ রিমুভার তুলাতে নিয়ে আইব্রো ও আইল্যাশের মেকআপ তুলে নিতে হবে। এরপর ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এরপর হালকা করে অলিভ অয়েল লাগানো যেতে পারে। মনে রাখতে হবে মেকআপ তোলার সময় বেশি জোরে ঘষা যাবে না বা মেকআপ রিমুভিং টিস্যু দিয়ে কখনো আইল্যাশে ডলাডলি করা যাবে না। টিস্যুর ঘষা খেয়ে আইল্যাশ ঝরে যেতে পারে।
৫. যত্ন
- আইব্রো ও চোখের নিচে আন্ডার আই ক্রিম, ভিটামিন ই ক্রিম, নরমাল ক্রিম বা বেবি ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
- আইব্রোর লোম ঝড়লে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
- টুইজার দিয়ে একসাথে অনেক লোম না তুলে একটা একটা করে তুলুন।
- রাতে ঘুমানোর আগে কাজলসহ যাবতীয় মেকআপ ভালোভাবে তুলে নাইট ক্রিম ব্যবহার করুন।
- আইব্রোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে নিয়মিত আইব্রো ব্রাশ করুন।
টিপস
১) কম বয়সে আইব্রো প্লাক করা উচিত নয়।
২) সম্পুর্ন মুখে থ্রেডিং না করাই ভালো। কারন এতে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
৩) থ্রেডিং পরিহার করতে ব্লিচ না করে ফেয়ার পলিশ অথবা স্কিন পলিশ করুন।
৪) একবার প্লাক করার পর আইব্রো মোটা হয়ে যায়, ধারণাটি একদম ভুল। প্লাক করার পর আগের অবস্থায় ফিরে গেলে তুলনামূলকভাবে তা মোটা মনে হয়।
৫) নিজে নিজে টুইজার দিয়ে আইব্রো তোলা ঠিক নয়। টুইজারের খোঁচায় কিংবা চাপে ত্বক এমনকি চোখেরও ক্ষতি হতে পারে।
৬) আইব্রো ব্রাশ না থাকলে পুরনো পরিষ্কার টুথ ব্রাশ ব্যাবহার করতে পারেন।
৭) ত্বকে সরাসরি নয়, তুলা দিয়ে বরফ লাগান।
৮) আইব্রোর পাশাপাশি আইল্যাশ ঘন দেখানোর জন্য মাশকারা লাগাতে পারেন। তবে মাশকারা লাগানোর আগে কাজল পেনসিল দিয়েও আইল্যাশে ঘনত্ব অ্যাড করা যেতে পারে।
Discussion about this post