অনিন্দ্য মামুন
করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে ঢাকাই সিনেমা ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত বলে জানালেন ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নায়ক বাপ্পি চৌধুরী। সেইসঙ্গে সিনেমার সুদিন ফেরাতে নিজের সাধ্যমতো যা যা করা প্রয়োজন সেটা করবেন বলেও জানালেন তিনি।
বাপ্পি চৌধুরী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বই আজ স্থবির হয়ে আছে। সেইসঙ্গে বিশ্ব চলচ্চিত্রের অবস্থাও ভালো নয়। আর আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা তো করোনার আগে থেকেই খারাপ যাচ্ছে। তাই এ সময়ে প্রতিটি চলচ্চিত্রযোদ্ধাদের এক হয়ে কাজ করা উচিত। ঢাকাই সিনেমা বাঁচাতে, সিনেমার সোনালী দিন ফেরাতে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমি আমার পক্ষ থেকে সিনেমার জন্য ছাড় এবং চেষ্টার সর্বোচ্চটাই দেবো।’
শনিবার অনলাইনে সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলেন ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবি দিয়ে অভিষেক হওয়া আলোচিত এ নায়ক। করোনা ভাইরাসের আগে থেকেই দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়ে আসছেন অনেকেই। হল কমে আসছে শূণ্যের কোঠায়। যে ৬০ থেকে ৭০টি হল সচল ছিলো সেগুলোও করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ এখন। এই পরিস্থিতিতে বলিউড ও হলিউডে ছবি বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে মুক্তি পেলেও ঢালিউডের ছবি তেমন কোন প্লাটফর্মে মুক্তির প্রক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং ঈদের মতো বড় উৎসবেও বিগ বাজেটের ছবিগুলো মুক্তি পিছিয়ে থমকে রয়েছে। এমনটি চলতে থাকলে ঢাকাই চলচ্চিত্র করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতিতেই বিলীন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য এ চলচ্চিত্র নায়কের।
বাপ্পি চৌধুরী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতেও হলিউড ও বলিউডে শুরু হয়েছে শুটিং। আমাদের ইন্ডাষ্ট্রিতেও সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছে। আমি নিজেও একটি ছবির শুটিং শুরু করেছি। চিন্তার বিষয় হচ্ছে হল তো এখন বন্ধ রয়েছে। ছবির শুটিং শুরু হলেও ছবিগুলো দেখাবে কই? হল ছাড়া তো ছবিগুলো দেখানোর বিকল্প কোন প্লাটফর্ম নিয়ে আমরা চিন্তা করছিনা। আমার মনে হয় হল মালিক, প্রযোজক, পরিচালক ও আর্টিস্টদের এটা নিয়ে দ্রুতই ভাবা উচিত। সম্মিলিতভাবে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমের মতো বিকল্প কোন প্লাটফর্মে ছবি মুক্তি দেয়ার উপায় বের করতে হবে আমাদের। না হলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবোনা। শুধু পিছিয়েই যাবো। চলচ্চিত্রও আর ঘুরে দাঁড়াবেনা।’
এ কথা সত্যি ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে দুয়েকটা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছাড়া তেমন কোন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নেই। তবুও হাল ছাড়া যাবেনা। করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাসায় বসে আছি। একেবারেই যে বসে আছি তা কিন্তু না। বাসায় বসে বসে শুধু সিনেমা নিয়ে চিন্তা করলে তো হবেনা। কাজও করতে হবে। এই সময়ে নিজের মতো করে সবকিছু গোছাচ্ছি, পরিকল্পনা করছি। বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে গল্প নিয়ে আলাপ করছি। প্রযোজকদের সঙ্গে অনলাইন মিটিং করছি। চলচ্চিত্রের প্রতি যে প্রতিষ্ঠানগুলোর ভালোবাসা রয়েছে তাদেরকে প্রযোজনায় আনতে চেষ্টা করছি। এই চেষ্টাটা যদি সবাই একত্রে করি তাহলেও ভালো কিছু সম্ভব বলেই আমি মনি করি। যোগ করে বলেন বাপ্পি চৌধুরী।
সিনেমার জন্য ছাড় দিতে চাইলেন? এই ছাড়টা কেমন জানতে চাইলে বাপ্পি বলেন, ‘এই ছাড় মানে হচ্ছে পরিশ্রমের সবটুকু দিয়ে কাজ করা। এখন সিনেমার বাজেট কম হলেও সিনেমা বানাতো হবে কোয়ালিটিফুল। না হলে সেটা থেকে দর্শক মুখ ঘুরিয়ে নেবে। সিনেমার প্রস্তাব এলে গল্প ভালো হলে ‘সান টু সান’ শুটিং করে দ্রুত সিনেমা শেষ করবো। পারিশ্রমিকের দিকে নজর দেবোনা। আগে তো সিনেমা ইন্ডাষ্ট্রি বাঁচুক।’
বাপ্পি চৌধুরী সর্বশেষ সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘সিক্রেট এজেন্ট’। ছবিটির শুটিং শেষ করার পর নতুন কোন ছবির শুটিংয়ে অংশ নেননি। মাঝে রুমান রুনির একটি ছবি শুটিং করার কথা থাকলেও সেটার শুটিং পিছিয়েছেন করোনারভাইরাস আতকঙ্কের জন্য। পাশাপাশি গত ২০ মার্চ মুক্তির পাওয়ার কথা ছিলো তার অভিনীত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’ ছবিটি। সেটির মুক্তিও বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে টানা প্রায় আড়াই মাস গৃহবন্দি জীবন যাপনের পর গত ২৭ মে শুটিং শুরু করেছে বাপ্পি। করোনা ভাইরাস নিয়ে নিয়ে ছবিটির নাম ‘কোভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ’। নির্মাণ করছেন সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড।
ছবিটি নিয়ে বাপ্পি বলেন, ‘ ছবিটির গল্প করোনা ভাইরাস নিয়ে। সুন্দর একটি টাচি গল্প। তাই এই সময়ে কিছুটা ঝুকি নিয়ে হলেও শুটিংয়ে রাজি হয়েছি। সবাই যথাযথ সচেতন হয়েই শুটিং করছি। করোনার ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো হবেনা। কাজে নামতেই হবে। করোনাকে সঙ্গী করেই যতটা নিরাপদে থাকা যায় সেটা থেকেই শুটিং করতে হবে। না হলে তো আমাদের সিনেমার ইন্ডাষ্ট্রির সাথে হাজার হাজার পরিবার সম্পৃক্ত। তারা না খেয়ে মারা যাবে। শুটিং হলেই ওই পরিবারগুলো ভালো থাকবে।’
Discussion about this post