অনলাইন ডেস্ক
শিশুরা সবসময় অনুকরণ প্রিয়। বড়রা যা করে; তা দেখে দেখে শিশুদের মাঝে সে অভ্যাস গঠন হয়। তাই শিশুদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য,বাবা-মা অথবা অভিভাবকের আচরণ মার্জিত, সুন্দর এবং শিক্ষণীয় হওয়া আবশ্যক।
শিশুদের সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না; যা তাদেরকে বিপথগামী করে বা তাদের কচি মনে কোনো অযাচিত প্রশ্নের উদ্রেক হয়।
এ বিষয়ে মুসলিম শিশুদের বেড়ে ওঠায় অভিভাবকদের করণীয় সম্পর্কিত ১৮টি টিপস তুলে ধরা হলো-
১. সন্তানের প্রশংসা করুন যদিও সে কোনো কাজে ১০-এর মধ্যে ৪ পায়। এমনকি অন্যদের সামনেও সন্তানের প্রশংসা করুন।
২. আপনার সন্তানকে কখনোই ভাবতে দিবেন না যে, তার কাজ করার যোগ্যতা নেই। কখনোই আপনার সন্তানের সামনে অন্যের সন্তানকে বড় করে না দেখা বা দেখানো।
৩. সবসময় আপনি সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। কথা বলুন মায়া-মমতা ও স্নেহের সঙ্গে। যেমন তাকে বলুন- ধন্যবাদ, শুকরিয়া ইত্যাদি। কখনো তাদের সঙ্গে অভদ্র ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করবেন না। যেমন- কোনো জিনিস চেয়ে বলবেন না যে, দে, যা ইত্যাদি। বরং তাদের সঙ্গে বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে বলুন- দাও, যেতে পার, খেয়ে নাও ইত্যাদি।
৪. আপনার সন্তান যখন বড় হতে থাকবে তখনো ছোটবেলার মতো তাকে সমানভাবে সঙ্গ দিন। তারা বড় হয়েগেছে ভেবে তাদের খেলাধূলাসহ সব কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা থেকে বিরত থাকুন। যদি তাদের এড়িয়ে চলেন, তবে সে মানসিকভাবে বিরূপ মনোভাবাপন্ন হয়ে যাবে।
৫. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সন্তানকে সহায়তা করুন। সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঠিক উপায় আপনার কাছ থেকেই শিখবে। তাকে প্রতিশ্রুতি বা দিক-নির্দেশনা দিন, গাইড বা সঠিক নির্দেশক হিসেবে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। যদি তারা কোনো কিছু করতে চায় বা কোথাও যেতে চায় তবে তাদের পরিকল্পনায় সহযোগিতা করুন।
৬. আপনি যখন কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নিবেন তখন সন্তানের মতামত জানুন। যেমন- আপনি একটি গাড়ি ক্রয় করবেন। সেক্ষেত্রে সন্তানের কাছ থেকে জানতে চেষ্টা করুন কি ধরণের গাড়ি তার পছন্দ ইত্যাদি। এতে তাদের মাঝে পরমর্শসূলভ অভ্যাগ গড়ে ওঠবে।
৭. যদি সম্ভব হয় ঘরের একটা জায়গা তাদের জন্য নির্ধারিত করে দিন। যেখানে তাদের অর্জনগুলো তারা প্রদর্শন করতে পারে। সেখানে তাদের নাম লিখা থাকবে। যেমন- কোনো প্রতিযোগিতায় অর্জিত স্মারক বা উপহার সামগ্রী প্রদর্শন করে রাখার জন্য একটি শোকেস বা জায়গা নির্ধারণ করে দিন। যাতে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে যে, তারাও ভালো কিছু করতে পারে।
৮. আপনার সন্তানকে নামাজের শিক্ষা দিন। গা ছাড়া ভাবে অর্থাৎ অবহেলা করে তাদের নামাজের কথা না বলে বরং জোর দিয়ে বলুন- তুমি নামাজ পড়; তোমার নামাজ পড়া আবশ্যক। আপনার এ দায়িত্ববোধ আপনার সন্তান জীবনভর মনে রাখবে।
আপনার সন্তানের বয়স যখন ৭ বছর হবে তখন থেকেই তাকে নামাজের তাগিদ দিন। যখন এ বয়সে তাকে নামাজের তাগিদ দিবেন তখন তারা বয়ঃসন্ধিকালে সে এ কথা উপলব্দি করবে যে, তাদের জন্য নামাজ পড়া জরুরি।
৯. আপনার সন্তানকে মতামত প্রদানের বা দ্বিমত পোষনের পদ্ধতি শিক্ষা দিন। তাদেরকে সামনে কখনো কথায় কথায় শপথ বাক্য বলা যাবে না। অথবা আক্রমনাত্মক কোনো শব্দ ব্যবহার করা যাবে না; যা তাদের মধ্যে এর কুপ্রভাব পড়ে। কেননা সন্তানরা সব সময় অনুকরণ প্রিয়।
১০. আপনার সন্তানের জানার আগ্রহকে বাড়িয়ে দিতে প্রশ্ন করার প্রতি উৎসাহিত করুন। সন্তানের করা প্রশ্নের সুন্দর তথা ইতিবাচক উত্তর দিন। অন্যথায় তারা ভুল উত্তর গ্রহণের প্রতি ঝুঁকে পড়বে। তাদের প্রত্যেকটি প্রশ্নের প্রসংশা করুন।
১১. সব সময় সন্তানের সঙ্গে করা প্রতিটি ওয়াদা বা প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করুন। সন্তানের সঙ্গে এমন কোনো ওয়াদা বা প্রতিজ্ঞা করবেন না, যা করতে আপনি অপারগ।
১২. আপনার সন্তানকে শিখান, কিভাবে একটি দলের সদস্য হিসেবে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হয়। দলগতভাবে সফলতা লাভ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে তার জীবনের সুপ্ত প্রতিভা খুঁজতে সহায়তা করে।
১৩. আপনার সন্তানের জন্য দোয়া করুন। এমনকি যদি আপনার সন্তান পথহারা হয়ে যায় বা বিপথে যায়। তারপরও সন্তানের কল্যাণে দোয়া করুন।
১৪. সন্তানকে বলুন- তুমি যদি কোনো বিষয়ে সফল না হও। তথাপিও হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাকে শিখান কিভাবে ব্যর্থতার বিপরীত সফল হওয়া যায়।
১৫. যদি আপনি কোনো ভুল করে বসেন তবে তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করুন। তাদেরকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি শিক্ষা দিন। এ ভুল নিয়ে তার সঙ্গে বাড়াবাড়ি না করাই উত্তম। তাহলে সন্তান অন্যের সঙ্গে এর রকম বাড়াবাড়ি আচরণ করা শিখবে। তার মধ্যে অনুশোচন ফিরে আসবে।
১৬. বাড়িতে তার ভালো কাজের জন্য আপনার সন্তানকে পুরস্কৃত করুন। তার ভালো কাজের ব্যাখ্যা করে জানিয়ে দিন যে, তাকে কোনো ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করেছেন।
১৭. আপনার সন্তানের সাধ্যানুযায়ী পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ পড়তে তাকে প্রশিক্ষণ দিন। এবং প্রতিদিন কুরআন পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
১৮. আপনার সন্তানকে কতবেশি ভালো বাসেন তা তাকে বার বার বলুন। তাদেরকে বুঝান তারা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে জড়িয়ে আদর করুন। তাঁদেরকে চুমু খান। এটা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব অভিভাবককে তাদের শিশু সন্তানের সঙ্গে সব সময় উত্তম আচরণ ও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে তাদের নৈতিক শিক্ষা ও উন্নত মনোভাব গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Discussion about this post