মীর সামী
আসাদুজ্জামান নূর। অভিনেতা, আবৃত্তিকার, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ। এত পরিচয়ের মধ্যেও তিনি নিজেকে একজন আত্মপ্রত্যয়ী মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। ১৯৪৬ সালের এই দিনে তিনি নীলফামারী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ৭৫তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হলো তার সঙ্গে-
আপনার ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সমকালের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। দিনটি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কেমন?
ধন্যবাদ। জন্মবার্ষিকী নিয়ে কখনও কোনো পরিকল্পনা করিনি। এবারও ছিল না। কিন্তু এবার যেহেতু ৭৫তম জন্মবার্ষিকী, সে কারণে আমার সাংস্কৃতিক বন্ধুরা মিলে একটু ঘটা করে জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে চাইল। আমি নিষেধ করতে পারিনি। আহকাম উল্লাহ, গোলাম কুদ্দুছ, অনুপম সেন সবাইকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির মূল মিলনায়তনে একটি আয়োজন থাকছে। আমাকে শুধু সেখানে যেতে বলা হয়েছে। এর বাইরে আর কিছুই করা হচ্ছে না। যদিও অনেকেই আমার জন্মদিন উপলক্ষে নানা আয়োজনের কথা বলেছিলেন, কিন্তু আমি তাদের নিরুৎসাহিত করেছি।
আর আপনার বাড়িতে…
ছোটবেলা থেকেই মা-বাবা আমার জন্মদিন ঘটা করে পালন করেননি। যতদূর মনে পড়ে, সে সময় আমাদের নীলফামারী শহরে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা যায়- এ ভাবনাও ছিল না। আর সেখানে জন্মদিনের কেকও পাওয়া যেত না। বিশেষ কিছু যা হয়, তা পরিবারের মধ্যেই। কাছের বন্ধুরা বাসায় আসে শুভেচ্ছা জানাতে। এবারও ঠিক তেমনটাই হবে। আর হোস্টেল জীবনের ইমপ্রুভমেন্ট নাইট বলে একটা কথা ছিল- সেদিন বেশ ভালোমন্দ খাওয়া-দাওয়া হতো। আমার বিষয়টিও ঠিক তেমন। একটু ভালো খাওয়া-দাওয়া হয় আর কি [হাসি]।
জীবনের এই প্রান্তে এসে পেছনে ফিরে দেখলে কী মনে হয়?
একসময় ছাত্র রাজনীতি করতাম, তারপর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলাম, ফিরে এসে রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে চাকরির পাশাপাশি অভিনয় শুরু করলাম। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমাকে আবারও রাজনীতিতে নিয়ে এলেন। চাকরি, অভিনয়, রাজনীতি যখন যা করেছি, মনোযোগ দিয়ে করেছি। তারপরও মাঝেমধ্যে মনে হয়, সময়টা ঠিকমতো কাজে লাগাইনি। হয়তো আরও অনেক কিছু করার ছিল। আবার এটাও মনে হয়, যা পেয়েছি, সেটাও কি আমার পাওয়ার কথা ছিল? এই দেশ, আমার বাংলাদেশ আমাকে অনেক দিয়েছে। এই ঋণ শোধ করি কী করে! তাই তো আমি মনে করি, আমার এই এক জীবনে প্রাপ্তি অনেক বেশি। আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই।
শৈশবের কোনো ঘটনা এখনও মনে পড়ে?
একটা সময় এলে মনে হয়, মানুষের শৈশবের নানা কথা মনে পড়ে। জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে আমার জন্মস্থান নীলফামারীতে। সেখানে আমার লেখাপড়া, খেলাধুলা, স্কুল-কলেজে পড়ার সময়গুলোর কথা মাঝেমধ্যে মনে পড়ে। এটা বার্ধক্যের লক্ষণ কিনা, সেটা বুঝতে পারছি না [হাসি]।
রাজনীতি, অভিনয় ও ব্যবসা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। এত কিছু কী করে সম্ভব?
প্রতিটি কাজের জন্য যদি আলাদাভাবে সময় ভাগ করে নেওয়া হয়, তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাই আমি প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা সময় ভাগ করে নিয়েছি। আমি যেখানেই থাকি না কেন, আগের দিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠিক করে নিই পরের দিন কী কী করব। পরদিন তা অনুসরণের চেষ্টা করি। অনেক সময় হয়তো আগের দিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব হয় না। কিন্তু বেশির ভাগই হয়। বাকিগুলো আবার পরের দিনের তালিকায় রাখি। এভাবেই প্রতিটি কাজের সঙ্গে নিজের সময় সমন্বয় করে নিই।
অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরকে মিস করেন না?
খুব মিস করি। সত্যি বলতে কি, প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়ানোর পর অভিনয়ে সময় দেওয়াটা ধীরে ধীরে কমে গেছে। যদিও মাঝেমধ্যে আগের মতো অভিনয় না করতে পারাটা কষ্ট দেয়। সে কারণেই হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও চেষ্টা করি বছরে দু-তিনটা নাটকে অভিনয়ের। দীর্ঘদিন পর মঞ্চেও অভিনয় শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে তা আপাতত বন্ধ। এরই মধ্যে দুটো ছবিতে অভিনয় করব বলে মনস্থির করেছি। এখন দেখা যাক।
আপনার আবৃত্তি চর্চার কী খবর…
আবৃত্তি এখন নিয়মিত করা হয়। যখন সময় পাই, তখনই আবৃত্তি চর্চা করি।
কোনো কারণে হতাশা বোধ করেন?
না, আমি হতাশা বোধ করি না।
জীবনে সাফল্যের জন্য কী প্রয়োজন?
আমি মনে করি, জীবনে সাফল্যের জন্য সততা, পরিশ্রম আর লক্ষ্য- এই তিনটি থাকলে মানুষ ঠিকই সফল হবে।
সৌজন্যে- সমকাল
Discussion about this post