শিক্ষার আলো ডেস্ক
সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনা তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ—বিআরটিএ। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কার্যক্রমের অগ্রগতিও হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, সব পক্ষের সহযোগিতা পেলে দ্রুতই তহবিল চূড়ান্ত হবে। বিধিমালা প্রণয়ন হওয়ার পর এটি কার্যকর হবে। এজন্য সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে ক্ষতিপূরণের অর্থের মূল যোগানদাতা হবেন যানবাহনের মালিকরা। প্রস্তাবটি সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৫৪(১) উপধারা অনুযায়ী সরকার ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ৩১ অক্টোবর বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিআরটিএ ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে ট্রাস্টি বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন বিধিমালা চূড়ান্ত হওয়ার আগপর্যন্ত তহবিল গঠনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি টাকা সরকারি অনুদান পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, মোটরযানে দুর্ঘটনার ফলে কোনও ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা মারা গেলে তিনি বা ক্ষেত্রমত তার উত্তরাধিকারীদের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হবেন। এজন্য বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। বোর্ড ওই আবেদন যাচাই করে ক্ষতিপূরণ দেবে।
ক্ষতিপূরণের উৎস
আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনের উৎস হবে— সরকারি অনুদান, মোটরযান মালিকের চাঁদা, সড়ক পরিবহন আইনের অধীন জরিমানার অর্থ, মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের অনুদান এবং অন্যান্য বৈধ উৎস।
প্রথম আবেদন
এরইমধ্যে আব্দুল হামিদ নামের একজন চালক ক্ষতিপূরণ চেয়ে কমিটির কাছে আবেদন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গাড়ি চালক। তার অভিযোগ—গত ৪ এপ্রিল দুপুর ২টার সময় বিদেশি ১৪ জন নাগরিককে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথে মুন্সীগঞ্জের তেতৈতলা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে লাকসামগামী তিশা পরিবহনের একটি বাস তার বাসটিকে আঘাত করে। এতে বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আব্দুল হামিদও গুরুতর আহত হন। তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়।
ক্ষতিপূরণের পরিমাণ
প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন বিধিমালা অনুযায়ী দুর্ঘটনায় নিহত হলে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে এককালীন অন্যূন ৫ লাখ টাকা। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে অন্যূন ৩ লাখ টাকা। গুরুতর আহত ও চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে অন্যূন ৩ লাখ টাকা, গুরুতর আহত কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে অন্যূন এক লাখ টাকা। তবে সরকারের অনুমোদনক্রমে ট্রাস্টি বোর্ড প্রয়োজনে এর পরিমাণ কমাতে-বাড়াতে পারবে।
কোন পর্যায়ে আছে সড়ক পরিবহন বিধিমালা?
সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২১ এর খসড়া ইতোমধ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরে প্রস্তাবিত খসড়ায় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণ পাঠায়। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সংশোধন করতে বিআরটিএ সচিবকে সভাপতি করে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়। পর্যবেক্ষণগুলোর সংশোধনের জন্য প্রস্তাবসহ বিআরটিএর চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন দেয় কমিটি। ওটা আবার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে। সেখানে অনুমোদন পেলে বিধিমালা চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।
ট্রাস্টি বোর্ডের আলাদা জনবল কাঠামো
ট্রাস্টি বোর্ডের জন্য পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে ও এতে কী কী করা হবে তা নিয়ে কাজ করছে বিআরটিএ। আপাতত বনানীর বিআরটিএ অফিসটিই ট্রাস্টি বোর্ডের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হবে। স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য রাজউক থেকে পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তিনমাসে অন্তত একবার বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বোর্ডের সদস্য যারা
১২ সদস্যের কমিটিতে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান, যিনি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা হলেন- জননিরাপত্তা বিভাগের অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার বিভাগের অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক মনোনীত অন্যূন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মনোনীত একজন কর্মকর্তা, সরকার কর্তৃক মনোনীত সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের একজন করে প্রতিনিধি, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং সদস্য সচিব হবেন বিআরটিএ সচিব।
শ্রমিকদের প্রশ্ন
ট্রাস্টি বোর্ডের তহবিলে মালিকরা কেন টাকা দেবে, সেটার যৌক্তিকতা জানতে চান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। তিনি বলেন, শ্রম বিভাগের কল্যাণ তহবিলে তারা টাকা দিচ্ছেন। ট্রাস্টি বোর্ডেও টাকা দিলে সেটা ওভারল্যাপিং হয়ে যায়। মূলত মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো ইন্স্যুরেন্সের বিকল্প হিসেবে ট্রাস্টি বোর্ডকে দেখতে চায়।
বিধিমালায় এ সংক্রান্ত সংশোধনী আনার জন্য তাদের প্রস্তাবও গৃহীত হয়নি। বাস মালিকরা ইন্স্যুরেন্স, কল্যাণ তহবিল ও ট্রাস্টি বোর্ড এই তিন জায়গায় টাকা দিতে রাজি হবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ওসমান আলী।
যা বলছে বিআরটিএ
এ প্রসঙ্গে বোর্ডের সভাপতি ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের কাজ বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইনের ওপর ভিত্তি করেই হবে। তবে একাধিক জায়গায় টাকা দেওয়ার যে সমস্যা, তা নিয়ে আরও কাজের প্রয়োজন আছে। ওভারল্যাপিং নিরসনে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো কী প্রস্তাব করেছিলেন, কোন সংস্থায় কত চাঁদা দিচ্ছেন, তাদের প্রস্তাবগুলোর বর্তমান অবস্থা কী, এসব নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকলে সংশ্লিষ্ট ফোরামে তা উপস্থাপন করা হবে।
এ নিয়ে নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আমরা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন চূড়ান্ত করেছি। কীভাবে বোর্ড চলবে, জনবল কেমন হবে, কোথায় অফিস হবে এসব চূড়ান্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে বোর্ডে একটি সভাও হয়েছে। বিধিমালা প্রণয়ন হলেই এটি কার্যকর হবে।
Discussion about this post