মুশতারী শৈলী
আজ বিজয়ের দিন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতার বিজয় এসেছিলো ১৯৭১ সালে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ও নেতৃত্বে যে বিজয় এসেছিলো তার আজ ৫০ বছর পূর্ণ হলো। এই দিনে সারা দেশে চলছে নানা রকম আয়োজন ও উৎসব। দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনেও দেখা যাচ্ছে সাজ সাজ রব।
এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন সারা দেশের মানুষ। এই চেতনায় অভিনয়ের আঙিনায় গেল ৫০ বছরে কি অর্জন, কি অর্জন হতে পারতো সেই নিয়ে কথা বলেছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী দিলারা জামান। তিনি জানিয়েছেন কেমন বাংলাদেশ চাই সেই প্রত্যাশার কথাও।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের নাটকের জগতে অনেক অর্জন হয়েছে। মঞ্চ নাটক দিয়ে আসলে শুরুটা। সেই যুদ্ধের আগমুহূর্তে তখন বছরে ২/৩ টা নাটক হতো। সে সময়টায় মুসলমানরা কমই অভিনয় করতেন। অন্য ধর্মের যারা ছিলো তারাই মূলত নাটকে কাজ করতেন। সে সময়টায় মুসলমান মেয়েরা কাজ করবে ভাবাই যেতো না।
তখন তেমন কোনো হলও ছিলো না। শুধু রহমত আলী নামে একটি ইন্সটিটিউট ছিলো। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে আমাদের নিজস্ব মঞ্চ ছিলো। ছোট একটি রুম ছিলো সেখানে আমারা নাটক করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরাই করেছিলো সেটা। তখন যেসব নাটক হতো ছেলেরাই মেয়ে সাজতো।
বলতে গেলো নাটকের উত্তরণ হয় স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে। বিরাট এক বিপ্লব ঘটেছিলোও মঞ্চ নাটক জগতে। সালটা ১৯৭৩-১৯৭৪, আমরা শুধু ঢাকাতেই নাটক করিনি। বিভিন্ন জায়গাতে যেতাম দল নিয়ে। তখন মানুষ নাটক দেখতে ভিড় জমাতো। তখনকার সময়ে নাটক সরাসরি টেলিকাস্ট হতো। যে কারণে মঞ্চ নাটকের আবার ভয়ও ছিলো। তখন সরাসরি দর্শক আমাদের দেখতো, এটা বড় একটা ব্যপার, ভুল হয় কি না সেটাও বড় একটা ব্যপা। মঞ্চ নাটকের মূল বিষয় আপনার ভয়েজ, যদি কেঁপে যায় তাহলে তো শেষ।
১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে টেলিভিশন আসার পর টেলিভিশনে নাটক শুরু। অভিনয়ের আঙিনায় সবচেয়ে বড় বিপ্লব হয়ে গেল। আমার জীবনে প্রথম নাটক শুরু করি ৬৫ সালে। সেটা সরাসরি টেলিকাস্ট হয়, কি যে ভয়ে ছিলাম তখন। তখন থেকে শিল্প এবং কাজের এক পরিবর্তন ঘটে। স্বাধীনতার পর এই বিটিভি হয়ে উঠেছে আমাদের সবার প্রিয় মাধ্যম। নাটক বা অভিনয় পেশা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল। ধীরে ধীরে আজকে ৫০ বছরে এসেছি আমরা।
মনে পড়ে, আমরা নাটক করার জন্য রাজু ভবনের ছোট একটি ঘর ছিলো আমাদের ফিক্সড স্টুডিও, সেখানে জড়ো হতাম। নাটক রাতে হলে আমরা রিহার্সালের জন্য দুপুরেই চলে আসতাম সেখানে। যাতে ভালো মতো রিহার্সাল করতে পারি। সেখান থেকে আজকে আমরা অনেক উন্নত হয়েছি। আমাদের কাজের পরিসীমা বেড়েছে। আমরা যখন কলকাতায় যেতাম সেখানের দর্শকরা বলতো দিদি আপনাদের নাটক আমরা দেখি। বাংলাদেশের নাটক তখন ভারতেও জনপ্রিয় ছিলো।
ভারতে তখন তারা বাঁশের মাথায় এ্যান্টেনা লাগিয়ে দেখতো। এতটা বছরে মঞ্চ, টেলিভিশন জগতের এক উত্তরণ হয়েছে। বড় হতে থাকে ইন্ড্রাস্টি, কাজের জায়গারও এক বড় পরিসর ঘটে। শুধু আমরা শিল্পীদের যে পরিবর্তন হয়েছে তা নয় আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা ছিলো তাদেরও কাজের জায়গা হলো। আমরা বিনোদনের জায়গা থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।
আক্ষেপ বা অপূর্ণতা
আমি বলবো আক্ষেপ নেয়। প্রাপ্তি অনেক বেশি । তাই ছোট ছোট আক্ষেপগুলো আমরা না মনে রাখি । আমরা কি পেয়েছি কতটুকু এগিয়ে গিয়েছি এবং এ মাধ্যমটকে আমরা কতটুকু সমৃদ্ধ করতে পারবো। এখন তো সব কিছু হাতের মুঠোয় চলে গিয়েছে যার কারণে আমরা তুলনাও করতে পারছি। তার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভুলগুলো জানতে পারি।
আগামীর বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান
আমরা নিজের যেমন উন্নতি চাই তেমন বাংলাদেশেরও উন্নতি চাই। সুন্দর সমৃদ্ধ এবং নিজেকে যেমন সুখী দেখতে চায় তেমনই দেশকে সুন্দর দেখতে চায়। আমাদের শিল্পটার আরও উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি বড় পরিসরে রুপান্তরিত হয় সেটা চাই।
আমাদের ভালো, মন্দ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি যেনো ধরে রাখতে পারি এবং আমাদের নাটক-সিনেমার ভেতর দিয়ে আমাদের সমাজকে, দেশের সংস্কৃতিকে প্রতিফলন ঘটাতে পারি। তাহলেই আমাদের আগামী প্রজন্ম দেশকে ভালোবাসার মন্ত্র নিয়ে বেড়ে উঠবে। ভালোবেসেই লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, স্বাধীন পতাকার জন্য। আর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের ভালোবেসেই প্রাণ দিয়েছেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সেই আদর্শ নিয়েই দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা সেই আর্দশেই দেশকে ভালোবাসবো, আমাদের নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করবো, করতে চাই।
Discussion about this post