করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালু রাখতে টেলিভিশন ও অনলাইনে শুরু হয়েছে বিশেষ শ্রেণি কার্যক্রম। এই ধারাবাহিকতায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্যও অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেছে বিউটিফুল মাইন্ড স্কুল। রাজধানীর উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের এই প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ শামীম মতিন চৌধুরী ও উপাধ্যক্ষ মমতাজ সুলতানার তত্ত্বাবধানে এই অনলাইন সেবাটি চালু করা হয় গত ৩০ মার্চ।
বিউটিফুল মাইন্ড স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় অফিস-আদালত ছুটি দেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়েছে। এর ফলে সাধারণ শিশুদের মতো ঘরবন্দি হয়ে গেছে বিশেষ শিশুরাও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ শিশুদের পাঠক্রম এগিয়ে নিতে সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে ক্লাস চালু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনলাইনেও ক্লাস চালু করেছে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই তাদের কথা চিন্তা করে অনলাইনে বিশেষ ক্লাস চালু করেছে বিউটিফুল মাইন্ড স্কুল।
স্কুলটি বিশেষ শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে গত ৩০ মার্চ থেকে চালু করে এ অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিদিনি অনলাইনে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে বিশেষ শিশুদের শ্রেণি কার্যক্রম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রতিদিন শ্রেণি কার্যক্রমের সুবিধা পাচ্ছে শিশুরা। স্কুলটির দুই শতাধিক বিশেষ শিশু এই সেবাটি পাচ্ছে।
জানতে চাইলে উপাধ্যক্ষ মমতাজ সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শ্রেণি শিক্ষক ও থ্যারাপিস্টসহ সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষকের সহায়তায় বিশেষ শিশুদের জন্য অনলাইন ক্লাস চালু করেছি। দীর্ঘ ছুটির এই সময় বিশেষ শিশুদের বাবা ও মা বাসায় থাকায় অনলাইনে শিক্ষা দেওয়া সহজভাবে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। ছুটির সময় অভিভাবকরা এটি ভালোভাবে নিয়েছেন। আমরা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
উপাধ্যক্ষ আরও জানান, অভিভাবকদের সহায়তায় বিশেষ শিশুরা ঘরে বসেই যাতে স্কুলের নিয়মিত কাজগুলো করতে পারে অনলাইন ভিডিও ক্লাসে সে বিষয়গুলোই শেখাচ্ছেন শ্রেণি শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বাড়িতে বসে হাতের কাছে যা কিছু সহজলভ্য উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো ব্যবহার করেই শিশুদের প্রতিদিন নতুন নতুন কাজ শেখাচ্ছেন।
শ্রেণি শিক্ষক সাবরিনা মুস্তারী বলেন, ‘বিশেষ শিশুরা যাতে ঘরে বসে যেসব কাজ করতে তার তালিকা তৈরি করে দিচ্ছি সব শিক্ষকরা। অভিভাবকদের সহায়তায় নিয়ে দিনভর সেসব কাজ করছে বিশেষ শিশুরা। অভিভাবকদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধানও করে দিচ্ছি। যদি কোনও অভিভাবক ব্যস্ততার কারণে তাৎক্ষণিক অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হতে না পারেন তাহলে ভিডিও টিউটোরিয়াল ও হোম ওয়ার্ক দিচ্ছি অভিভাবকদের। হোম ওয়ার্কের তালিকা অনুযায়ী পাঠানো ভিডিওর মাধ্যমে তার সন্তানকে সেবা দিতে পারবেন।’
তিনি আরও জানান, প্রতি সন্ধ্যায় এসব হোমওয়ার্ক একইভাবে ওই শিক্ষকের কাছে জমা দেন অভিভাবকরা। সেসব কাজ শ্রেণি শিক্ষকের সঙ্গে স্কুলের উপাধ্যক্ষ মমতাজ সুলতানা প্রতিদিন মূল্যায়ণ করেন এবং দরকারি নির্দেশনা দেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, অনলাইন থেরাপি ক্লাসে সাপ্তাহিক তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি বিশেষ শিশু ও তার অভিভাবকের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়াসহ দরকারি থেরাপি টিপস নিরলসভাবে দিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের থেরাপিস্টরা। একইভাবে সাইকোলজিস্টরাও বিশেষ তালিকা অনুযায়ী অনলাইন ক্লাসে প্রতিটি শিশুর খোঁজ নিচ্ছেন এবং প্যারেন্টস কাউন্সেলিংসহ গ্রুপ ভিত্তিক বা ওয়ান স্টপ অনলাইন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে থেরাপিস্ট বৃষ্টি বলেন, ‘আমরা নিজেদের শিশুদের মাধ্যমে থেরাপি কারানোর নিয়ম-কানুন ভিডিও করে বিশেষ শিশুদের দেখানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। ভিডিওগুলো অভিভাবকদের পাঠাচ্ছি যাতে তারা সঠিক নিয়মে তা করাতে পারেন। বিশেষ শিশুরা দীর্ঘ ছুটিতে তাদের বাবা ও মাকে একসঙ্গে কাছে পাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের দ্রুত শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটছে।’
বিউটিফুল মাইন্ড স্কুলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিভাবক সানজিদা সাত্তার জিনিয়া। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বাইরে সবকিছু বন্ধ থাকায় ঘরবন্দি বিশেষ শিশুদের অস্থিরতা কমাতে অনলাইন স্কুল বেশ কাজে আসছে। নিয়মিত ক্লাসের বিষয়গুলো আমি আমার আট বছরের শিশুটির জন্য কাজে লাগাচ্ছি। এতে ওর বেশ সুবিধা হচ্ছে।’
স্কুল সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্য বিশেষ শিশুদের সহায়তার জন্য এসব ক্লাসওয়ার্কের ভিডিও স্কুলের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন আপলোড করা হচ্ছে। এছাড়াও ইউটিউবেও এগুলো আপলোড করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান উপাধ্যক্ষ মমতাজ সুলতানা।
Discussion about this post