বিনোদন ডেস্ক
ঢাকা-গাজীপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা হলো টঙ্গী। সেখানকার আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছেন যুবরাজ শামীম। প্রায় সব অলিগলিই তার চেনা। শুধু একটি এলাকায় যাওয়া হয়নি কখনো। ব্যাংক মাঠ বস্তিটি। সেখানে সমাজের অবহেলিত, কথিত নিম্ন শ্রেণির মানুষের বসবাস কিনা তাই যাওয়া হয়নি। অথচ এই বস্তিতে সিনেমা বানিয়েই তিনি জয় করলেন মস্কো !
যে ঢালিউডে এখন শত কোটি টাকা বাজেটের গল্পও শোনা যায়, সেই বাজারে টঙ্গী থেকে মস্কো জয় করতে যুবরাজ শামীমের খরচ হয়েছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা! যে টাকার জোগান দিয়েছেন ৫১ জন সিনেমাপ্রাণ মানুষ।
দিন কয়েক আগে রাশিয়ার মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪৪তম আসরে সিলভার জর্জ অ্যাওয়ার্ড (স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড) এবং নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে যুবরাজ শামীম নির্মিত সিনেমা ‘আদিম’। দেশের সিনেমার জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় অর্জন।
মস্কো জয় করে দেশে ফেরার পর নিজের অনুভূতি ও ‘আদিম’ জার্নির গল্প শুনিয়েছেন যুবরাজ। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সেমিনার হলে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন ‘আদিম’ সিনেমার অভিনেত্রী সোহাগী, অভিনেতা দুলাল মিয়া ও চিত্রগ্রাহক আমির হামযা।
‘আদিম’ হলো যুবরাজের প্রথম সিনেমা। সুতরাং তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বটে। মজার ব্যাপার হলো, এই সিনেমার চিত্রগ্রাহক এবং অভিনয়শিল্পীরাও একেবারে আনাড়ি। ফলে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হয়ে শামীমকেই সবকিছু এগিয়ে নিতে হয়েছিল।
এ বিষয়ে নির্মাতার কাছে প্রশ্ন ছিল, কীভাবে এই গল্পটা তার মাথায় এসেছিল? আর কেনই বা তিনি আনাড়ি শিল্পী বেছে নিলেন তাঁর সিনেমার জন্য। জবাবে যুবরাজের ভাষ্য, ‘আমি তখন নিয়মিত ট্রেনে চড়ে নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করতাম। সেই সুবাদে দুদিন দুটি ব্যতিক্রম মানুষ আমার নজরে পড়েন। একজন স্টেশনের কাউন্টারের ঠিক সামনে ভিক্ষা করেন। আরেকজন মানুষকে দেখেছিলাম বিমানবন্দর এলাকায়, শীতের ভোরে, খালি গায়ে! এই দুটি চরিত্র থেকেই গল্প ভাবতে শুরু করি। এরপর ওই শ্রেণির মানুষের জীবনব্যবস্থা জানতে বস্তিতে গিয়ে ঘর ভাড়া নিলাম। সেখানে থাকতে শুরু করলাম। বাইরে থেকে আমরা বস্তির মানুষকে যেমনটা ভাবি, ভেতর থেকে আসলে তারা একেবারে ভিন্ন। ফলে আমার গল্পটা বস্তিতে গিয়ে পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন নতুন করে গল্পটা সাজিয়েছি।
যে সিনেমা মস্কো জয় করে এলো, সেটির আসলে বাজেট কতো? যুবরাজের তথ্য, ‘এটি গণমানুষের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। মোট ৫১ জন মানুষ আমাদের সিনেমার শেয়ার ক্রয় করেছেন। নির্মাতার সম্মানি ছাড়া সিনেমাটি বানাতে এবং মস্কো উৎসবে জমা দেওয়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।’
‘আদিম’ শিল্পীদের দেওয়া তথ্যমতে, এই সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে তারা অনেক বাধার মুখোমুখি হয়েছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দৌরাত্ম্য যেমন ছিল, তেমনি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ। এমনকি নির্মাতা যুবরাজ শামীমকে তারা আটক করেও নিয়ে গিয়েছিল। বিস্তারিত জানার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সব সংগ্রাম-কষ্ট নিমিষেই মুছে গেছে যুবরাজের, যখন তিনি মস্কোর উৎসবে নিজের নাম ঘোষণা শুনতে পান।
স্বপ্নবাজ এই নির্মাতার একটাই কথা, ‘টাকা-লবিং মোটেও বড় বিষয় নয়, বরং কনটেন্টের শক্তিই আসল। মেরিট থাকলে সেটার স্বীকৃতি আসবেই।’
এদিকে নিজের দ্বিতীয় সিনেমার কাজও অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছেন শামীম। সেটির নাম ‘অতল’। মস্কো যাওয়ার আগেই সিনেমাটির অর্ধেকের বেশি শুটিং সম্পন্ন করেছেন। বাকিটা শিগগিরই সেরে নেবেন বলে জানান বাংলা সিনেমার এই যুবরাজ।
Discussion about this post