অনলাইন ডেস্ক
পৃথিবীর সকল বাবা-মা নিজের সন্তানদের সফল হিসেবে দেখতে চান। সেজন্য বাবা-মা তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়, অর্থ, শ্রম ও সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা বিনিয়োগ করেন সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার পেছনে।তবে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সন্তানরা সম্মুখীন হয় নানাবিধ জটিলতায়।এক্ষেত্রে তাদের পাড়ি দিতে হয় বহু বন্ধুর পথ। যা বিভিন্ন সময় তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। সেই মুহূর্তে একজন সন্তানের প্রয়োজন মাথার ওপর একটি বিশ্বস্ত ও ভরসার হাত। কিন্তু অনেক সময় বাবা-মার অসচেতনতার কারণে তারা নিজের ওপর বিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলে। কখনো আবার বিপথগামী হয়ে পড়ে। তাছাড়া আত্মবিশ্বাস ছাড়া সফলতা অর্জন প্রায় অসম্ভব।
তাই বাবা-মা হিসেবে সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন-
যেসব কাজ করবেন:
১. সন্তানের ভালো বন্ধু হোন:
আত্মবিশ্বাসের ভিত তৈরি হয় একেবারে ছোট বয়সে। আর সেই ভিত তৈরি করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে বাবা-মা, পরিবার। শুরু থেকেই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো সহজ আচরণ করুন। সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখুন। ভালো, খারাপ সবকিছু আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে পারলে কঠিন মুহূর্তেও ভেঙে পড়বে না আপনার সন্তান। যা তাকে দারুণ আত্মবিশ্বাসী করে তোলবে।
২. সন্তানের ওপর বিশ্বাস রাখুন:
সন্তানের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং তাকে জানান আমি বা আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি। এটি তাকে শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী করবে। একইসঙ্গে বাবা-মায়ের বিশ্বাসের পরিপন্থী কোনো কাজ করতেও তারা দুবার ভাববে।
৩. উৎসাহিত করুন:
আপনার সন্তান সবসময় ভালো নাও করতে পারে। কাঙ্ক্ষিত ফল না এলে কিংবা কোনো কাজে ভুল করলে তাদের চাপ প্রয়োগ না করে উৎসাহিত করুন। পরেরবার আরো ভালো চেষ্টা করার জন্য বলুন, বলুন তুমি পারবে। এটি তাকে সাময়িক ব্যর্থতা ঝেড়ে দ্বিগুণ ভালো করার আত্মবিশ্বাস জোগাবে।
৪. সন্তানের মনকে বুঝুন:
সবসময় আপনি যা চান, যেভাবে চান সেটা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বোঝার চেষ্টা করুন আপনার সন্তান কী চায়, সে অনুযায়ী গাইড করুন। সন্তানকে নিজের কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দিন। এতে নিজের প্রতি তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সন্তানের চাওয়াতে ভুল কিছু থাকলেও এমনভাবে বলুন যাতে সে আত্মবিশ্বাস না হারায়।
৫. ইতিবাচক চিন্তাধারা রাখুন:
যেকোন নেতিবাচক চর্চা থেকে বিরত থাকুন। অহেতুক কাজ এবং কথা থেকে বিরত থাকুন। ভালো-মন্দ যাই ঘটুক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মোকাবেলা করুন, সন্তানকেও সে শিক্ষা দিন। এটি যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের মনোবল দৃঢ় রাখতে সহায়ক হবে।
৬. সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করুন:
সন্তানের মানসিক অবস্থা বুঝার চেষ্টা করুন, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। তাদের সামনে চিৎকার চেঁচামেচি ও ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া অনুচিত। পরিবারের সবার পারস্পরিক সুস্থ সম্পর্ক মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে। তাই বাড়িতে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
৭. নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ নিতে শেখান:
সন্তানকে বাস্তবতা থেকে দূরে রাখবেন না। তাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে দিন। ব্যর্থতায় হতাশ হলে কিংবা উদ্যম হারিয়ে ফেললে পাশে থাকুন। পুনরায় চেষ্টা করতে বলুন। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে দারুণ কার্যকর হবে। যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে শেখাবে। যা দীর্ঘমেয়াদি সফলতার জন্য কাজে দেবে।
৮. সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করুন:
আপনার সন্তানের আগ্রহ ও মনোযোগের ক্ষেত্র খুঁজে বের করুন। তারা কোনো কিছুতে ভালো করলে সেসবের প্রশংসা করুন। সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহিত করুন যা তাদের আত্মবিশ্বাসী করবে। বিতর্ক, গান, নাচ, খেলাধুলা কোনটি সে ভালো করে বুঝুন। সেগুলোতে নিরুৎসাহিত না করে উৎসাহ জোগান। এটি কোনো নির্দিষ্ট কাজে তাদের পারদর্শী করে তোলবে।
যেসব কাজ করবেন না:
১.অন্যদের সাথে তুলনা করবেন না:
সন্তানের সঙ্গে অন্য কারোর বা কিছুর তুলনা করবেন না কখনোই। ‘অমুক এটি পারলে তুমি কেন পারবে না’ এসব কথা ভুলেও উচ্চারণ করবেন না। এতে তারা ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগতে পারে। সন্তানের ভালো চাইলে তাকে তথাকথিত প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেবেন না। তার ভুলগুলো ধরিয়ে ভালো করার পথ বাতলে দিন। এতে আপনার সন্তান নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে শিখবে এবং ধীরে ধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবে।
২. ভূলেও রাগারাগি করবেন না:
সন্তানের সঙ্গে রাগ দেখাবেন না। রাগারাগি কোনো সমাধান নয়, উল্টো এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। রেগে গিয়ে কটু কথা বলা কিংবা মেজাজ খারাপ করে কথা বলা ক্ষতিকর। এটি তাকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয়। যা আত্মবিশ্বাস তৈরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৩. কখনো অবহেলা করবেন না:
সন্তানের খারাপ ও কঠিন সময়ে পাশে থাকুন। তাদের উপেক্ষা না করে সময় দিন। ব্যর্থতা, বিপর্যয়ে ভেঙে পড়লে কোনোভাবেই অবহেলা করা ঠিক না। বরং পাশে থাকুন, মনোযোগ দিন সবসময়। আপনার সন্তান যেন মনে না করে আপনি তাদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
৪. থামিয়ে দিবেন না:
আপনার সন্তান কিছু বলতে চাইলে মন দিয়ে আগে তা শুনুন। তাকে সবসময় থামিয়ে দেবেন না। সে হয়তো এমনকিছু বলতে চায় যেটা আপনার জানা দরকার। এতে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে। যা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি ও এগিয়ে যাওয়ার পথে মারাত্মক বাধা।
Discussion about this post