বিনোদন ডেস্ক
বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত বর্ষীয়ান চিত্রনায়ক, সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান। নাম আকবর হোসেন পাঠান হলেও সবার কাছে অধিক পরিচিত ফারুক নামে। আজ রোববার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে জমান তিনি(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সোমবার (১৫ মে) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্য হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
তার ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ জানান, ফারুকের মরদেহ মঙ্গলবার ভোরের ফ্লাইটে দেশে আনা হবে।
এই কিংবদন্তি নায়কের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের ওই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন নায়ক ফারুক। উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। পুরোনো বেশ কিছু শারীরিক জটিলতাও ছিল। সবশেষ ২০২১ সালের ৪ মার্চ নিয়মিত চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর যান এই অভিনেতা। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর থেকে দীর্ঘ সময় সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
বর্ণাঢ্য জীবনে চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতির পাশাপাশি নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন ফারুক।
১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমায় তার অভিষেক। প্রথম সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ এ দুটি সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন ফারুক।
অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১৬ সালে ভূষিত হন আজীবন সম্মাননায়।
ফারুক অভিনীত সেরা সিনেমার মধ্যে রয়েছে: খান আতাউর রহমান পরিচালিত আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩), নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিল (১৯৭৪), প্রমোদ কর পরিচালিত সুজন সখী (১৯৭৫), নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত লাঠিয়াল (১৯৭৫), আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ (১৯৭৬), আমজাদ হোসেন পরিচালিত নয়নমনি (১৯৭৬), তাহের চৌধুরী পরিচালিত মাটির মায়া (১৯৭৬), আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত সারেং বৌ (১৯৭৬), আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে,মেহমান, প্রিয় বান্ধবী, দোস্তী, জীবন মৃত্যু, প্রতিজ্ঞা,সহ আরও অনেক ছবি। মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে খ্যাতি পান।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সফল ও সেরা নায়কদের একজন হিসেবে স্বীকৃত।
অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
Discussion about this post