সাধারণত পরীক্ষা মানেই ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটা ভীতিকর বিষয়। তারপর আবার বোর্ড পরীক্ষা। সুতরাং একটু নার্ভাসনেস কাজ করাই স্বাভাবিক। তবে নার্ভাস হওয়ার আসলে কিছু নেই। সাধারণত স্কুলে যেমন পরীক্ষা হয়, বোর্ডেও ঠিক একইভাবেই পরীক্ষা হয়। এ ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের যে জিনিসটি বিশেষ প্রয়োজন, সেটি হলো একটু বেশি সিরিয়াসনেস ও সিনসিয়ারিটি। কেননা, বোর্ডে পরীক্ষা খারাপ হলে আর শোধরানোর সুযোগ থাকে না।
ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে এবং পরিকল্পিত উপায়ে অগ্রসর হতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষার আগের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরীক্ষার আগের রাতে একেবারেই দুশ্চিন্তা করা যাবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পড়াশোনা শেষ করে ঘুমাতে যাওয়া উচিত। কেননা, রাতে ঘুম ভালো হলে মাথা ফ্রেশ থাকে। আর ভালো লেখার জন্য অবশ্যই ফ্রেশ থাকা জরুরি। ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরীক্ষার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও জিনিসপত্র যেমন- স্কেল, প্রবেশপত্র, পেনবক্স ইত্যাদি গুছিয়ে রাখতে হবে। বিশেষত প্রবেশপত্র।
কেউ যদি চায় পরীক্ষার আগের রাতে পড়বে, তাহলে সর্বোচ্চ ১০ থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রাত জাগতে পারে। প্রয়োজনবোধে বেশি রাত না জেগে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে পরের দিন ভোরবেলা থেকে পড়া শুরু করা যেতে পারে। এটাই বরং ভালো। কেননা, আগের রাতে ভালো ঘুম পরবর্তী পরীক্ষায় ভালো করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তা ছাড়া পরীক্ষার দিন সকালে দ্রুত পড়াশোনা শেষ করে হাতে একটু বেশি সময় নিয়েই পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে বের হওয়া উচিত। কেননা, পথে বা কেন্দ্রে সমস্যা হতে পারে। বিশেষত, যারা ঢাকার পরীক্ষার্থী তাদের জন্য তো এটি অবশ্যই করণীয়। কেননা, অন্যান্য দিনের চেয়ে এদিন রাস্তায় যানজট একটু বেশি হয়। ফলে পথেই অনেক সময় ব্যয় হয়।
প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর উচিত পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে একবার ঘুরে আসা। অনেক সময় দেখা যায়, পরীক্ষার কেন্দ্র না চেনার কারণে পরীক্ষার হলে দেরি করে পৌঁছাতে হয়। তাই পরীক্ষার আগে কেন্দ্র থেকে একবার ঘুরে এলে এই ভয় আর হয় না।
পরীক্ষার হলে করণীয়
প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর উচিত পরীক্ষা কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগেই যাওয়া। এরপর ধীরে-সুস্থে নিজের আসন খুঁজে কিছুক্ষণ মাথা ঠাণ্ডা করে বসা। তারপর যখন পরীক্ষা কক্ষে খাতা আসবে, তখন না ঘাবড়িয়ে ঠাণ্ডা মাথায় অত্যন্ত সতর্কভাবে প্রবেশপত্র ও নিবন্ধনপত্রের সঙ্গে হুবহু মিল রেখে নাম, রোল, সিরিয়াল নম্বর বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর ইত্যাদি কালো বলপয়েন্ট দিয়ে পূরণ করা।
পরীক্ষার্থী যদি পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত কোনো খাতা নেয়, তাহলে অবশ্যই তাকে ওই অতিরিক্ত খাতাটি মূল খাতার সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সে অতিরিক্ত খাতার সিরিয়াল ঠিক রাখার জন্য অতিরিক্ত প্রতিটি খাতার ওপরে ক্রমিক নম্বর লিখে নিতে পারে। এতে তার খাতা সাজাতে সুবিধা হবে।
পরীক্ষার সময় বণ্টন
সময় বণ্টন পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বস্তুত, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি সঠিকভাবে নম্বর বণ্টন অনুযায়ী গুরুত্বানুসারে সময় ভাগ করে সঠিক সময়ে ভালোভাবে পরীক্ষা শেষ করা যায়, তাহলে ফলাফল অবশ্যই ভালো হবে বলে আশা করা যায়। সময় বণ্টনের ক্ষেত্রে এমন হওয়া উচিত যেন পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ২০ মিনিটি আগেই লেখা শেষ হয়ে যায়। কেননা, পরীক্ষার হলে হাজিরা খাতায় নাম লেখা, অতিরিক্ত খাতায় না লেখা ইত্যাদি কাজে ১৫-২০ মিনিট সময় ব্যয় হয়ে যায়। এ বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন কমন না পড়লে করণীয়
পরীক্ষার হলে অনেক সময় প্রশ্ন কমন না পড়ায় ছাত্রছাত্রীরা ঘাবড়ে যায়। ফলে দেখা যায়, পরীক্ষাটি যতটা খারাপ হওয়ার কথা ছিল না, তার চেয়েও বেশি খারাপ হয়েছে। পরীক্ষার সময় প্রশ্ন কমন নাও পড়তে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বরং সেই মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে কয়টি প্রশ্ন্ন কমন পড়েছে, তার মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি ভালো প্রস্তুতি রয়েছে যেটির সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে লেখা শুরু করা। তারপর ধীরে ধীরে পরের প্রশ্নের উত্তর লিখে শেষ করা এবং সবশেষে আনকমন প্রশ্নে হাত দেওয়া। পরীক্ষায় দেখা যায় অধিকাংশ প্রশ্নই কমন থাকে। হয়তো মাঝেমধ্যে দু-একটি প্রশ্ন আনকমন থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর যদি মূল বোর্ড বই সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকে, তাহলে সে অবশ্যই যেকোনো প্রশ্নের উত্তর প্রদানে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। তাই ভালো ফলাফলের জন্য বোর্ড বই ভালোভাবে পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
Discussion about this post