শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক
যুগোপযোগী শিক্ষাপদ্ধতি।
এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ পদ্ধতি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখবে বলে শিক্ষাবিদদের ধারণা।
গতানুগতিক পরীক্ষাপদ্ধতিতে
শিক্ষার্থীরা সীমিত প্রশ্ন মুখস্থ করতো। ফলে পাঠ্যবইয়ের বিরাট অংশ তাদের জ্ঞানের বাইরেই থেকে যেত। কিন্তু সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠ্যবইয়ের সবখান থেকে প্রশ্ন করার নিয়ম রয়েছে। ফলে ভালো ফল করতে হলে শিক্ষার্থীদের পুরো বইয়ের ওপর ধারণা থাকতে হয়; অন্যথায় পরীক্ষায় ভালো ফল করা সম্ভব নয়। তাই এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর
জ্ঞানের পরিধি আরও বৃদ্ধি পায়। তবে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে ভালো করার কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে পালন করলে সব বিষয়ে এ প্লাস পাওয়া মোটেও কঠিন নয়। শিক্ষার্থীদের জন্য স্বদেশ খবর-এর পক্ষ থেকে নিয়মগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো।
প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের ৪টি স্তর থাকে। স্তরগুলো হচ্ছে জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক, প্রয়োগমূলক ও উচ্চতর দক্ষতামূলক।
সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতের সৃজনশীল পদ্ধতিতে অবশ্য ৩টি প্রশ্নস্তর থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের সাথেই একটি অনুচ্ছেদ দেয়া থাকে। বাংলা, ইসলাম শিক্ষা কিংবা বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ের মতো বিষয়গুলোতে সাধারণত অনুচ্ছেদের সাথে তুলনাস্বরূপ
বিভিন্ন প্রশ্ন দেয়া থাকে। কিন্তু গণিতের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বেশিরভাগ সময়ই গণিতে অনুচ্ছেদের তথ্য ব্যবহার করে প্রশ্নের উত্তর করতে হয়।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার কিছু নিয়ম রয়েছে। কেবল পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখলেই নম্বর পাওয়া যায়, এমনটা ভেবে থাকলে তা নিঃসন্দেহে ভুল। খাতার সৌন্দর্য রক্ষা, বাক্যগঠনে তত্ত্বভিত্তিক
তথ্য উপস্থাপন এবং প্রশ্নোত্তরে স্বচ্ছতা থাকা বাঞ্ছনীয়। সৃজনশীলের ক্ষেত্রে উদ্দীপক ও পাঠ্য বইয়ের সমন্বয় সাধন ইত্যাদির সমন্বয়েই সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর করতে হয়।
একটি সৃজনশীল প্রশ্নের ৪টি অংশের উত্তরের জন্যও ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। এসব নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যেন সম্পূর্ণ সৃজনশীল লিখতে ২০-২২ মিনিটের বেশি না লাগে। ২০ মিনিটের মধ্যেই এক-একটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারলেই পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ লেখা সম্পন্ন হয়ে যাবে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
এই অংশের প্রশ্নের উত্তর সবচেয়ে ছোট হবে। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, এই অংশের প্রশ্নের উত্তর এক লাইনের মধ্যেই শেষ করে দেয়া শ্রেয়। অনেকে জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর এক শব্দে লিখে থাকে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন সাধারণত বই থেকেই আসে। এই অংশের প্রশ্নের সাথে উদ্দীপকের অনুচ্ছেদের মিল থাকে না বলেই ধরে নেয়া যায়। এর জন্য সময় ব্যয় করতে হবে ১ মিনিট।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
এই অংশে কখনও কখনো বই থেকে প্রশ্ন দেয়, আবার কখনও উদ্দীপক হতেও প্রশ্ন আসতে পারে। অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর করতে হবে দুটি অংশে, কেননা এই প্রশ্নের নম্বর বণ্টনও হচ্ছে ২। উত্তরের ২টি অংশ প্যারা আকারে লিখতে হবে। প্যারার প্রথম অংশে প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু জ্ঞানমূলক উত্তর দেয়া যেতে পারে। পরবর্তী অংশে প্রশ্নের মূল উত্তর কিছুটা গুছিয়ে লিখতে হবে।
প্রথম প্যারায় জ্ঞানের অংশ অল্প কথায় শেষ করেই দ্রুত দ্বিতীয় অংশে নজর দিতে হবে। ৬-৭ লাইনের মধ্যে পুরো প্রশ্নের উত্তর অনুধাবনের ধাঁচে লিখে শেষ করতে হবে। অনুধাবন প্রশ্নের উত্তরের সাইজ আধা পৃষ্ঠা হলে ভালো হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বেশি সুন্দর করে লিখতে গিয়ে যেন অতিরিক্ত সময় খরচ না হয়। এর জন্য সময় ব্যয় করতে হবে ৪ থেকে ৫ মিনিট।
প্রয়োগমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রয়োগমূলক প্রশ্নোত্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই প্রশ্নের উত্তরের সাহায্যেই পুরো সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরের একটি ধারণা পাওয়া যায়। পুরো সৃজনশীল প্রশ্নকে যদি একটি মানবদেহের সাথে তুলনা করা হয়, তবে প্রয়োগমূলক প্রশ্নের ভূমিকা অনেকটা মূল দেহের মতো। জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনে সাধারণত বইয়ের জ্ঞানের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া হলেও প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মাধ্যমেই উদ্দীপকের সাথে পাঠ্যবই ও তার সাথে প্রশ্নের একটা যোগসূত্র ঘটানো হয়।
এই অংশে মূলত উদ্দীপকের কোনো অনুচ্ছেদের সাথে পাঠ্যবইয়ের কোনো অংশের পার্থক্য কিংবা সাদৃশ্য তুলে ধরতে বলা হয়। এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য নির্ধারিত নম্বর হচ্ছে ৩। সুতরাং এই প্রশ্ন ৩ প্যারায় দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। প্রথম প্যারায় থাকবে যথারীতি কিছু জ্ঞানের সমাহার। দ্বিতীয় প্যারায় মূল ভাব লিখতে হবে। এই অংশে কখনোই উদ্দীপকের বিষয়বস্তু সরাসরি তুলে আনা উচিত নয়। কারণ, এই জিনিসটা প্রথম প্যারার মধ্যেই সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখিত রয়েছে। দ্বিতীয় প্যারায় স্পষ্টভাবে প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে সেদিকে ফোকাস করতে হবে। ৭-৮ লাইনের মধ্যে উদ্দীপকের সাথে বইয়ের পঠিত বিষয়ের অংশের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য তুলে ধরতে হবে। শেষ প্যারা হবে কিছুটা বাংলা রচনার উপসংহারের মতো। এই অংশেই মূলত প্রয়োগের ব্যাপারটা চলে আসবে। এখানে উত্তরের পুরো অংশের একটা ছোট ‘প্রিভিউ’ দিতে হবে এবং সাথে সাথে উদ্দীপকের সাথে গদ্যাংশ-পদ্যাংশের পার্থক্যটাও লিখতে হবে। প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তর সর্বোচ্চ দেড় পৃষ্ঠার মধ্যে সম্পন্ন করাটাই যুক্তিযুক্ত। এর বেশি অহেতুক কথাবার্তা লিখলে তা প্রচুর সময় নষ্ট করবে। এর জন্য সময় ব্যয় করতে হবে ৬ থেকে ৭ মিনিট।
উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নোত্তর
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরে সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া একটু কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এই প্রশ্নের উত্তরের আকার সবচেয়ে বড় হয় বলে নিরীক্ষকেরা অনেক সময় নিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর পরখ করে দেখেন। এই প্রশ্নের ধরনও একটু ভিন্ন ধরনের হয়। অনেক সময় প্রশ্নে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করতে বলা হয়। আবার অনেক সময় প্রশ্নে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে যৌক্তিকতা বর্ণনা করতে বলা হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। তখন মূলত যে সুন্দর করে উপযুক্ত যুক্তি দিয়ে নিজের মতামতটি ব্যাখ্যা করতে পারবে, তার উত্তরই বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।
উচ্চতর দক্ষতার জন্য যে খুব বেশি উচ্চতর দক্ষতা প্রয়োজন তা কিন্তু নয়, শুধু লেখার সময় কয়েকটি ছোট কৌশল অবলম্বন করাই যথেষ্ট। এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য ৪ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। সুতরাং প্রশ্নের উত্তরও ৪ প্যারায় লিখতে হবে। প্রথম তিন প্যারা লেখার ক্ষেত্রে প্রয়োগমূলক স্তরের পন্থা অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ প্রথম তিন প্যারা লেখার সময় প্রয়োগমূলক স্তরের মতো করেই লেখা যেতে পারে। চতুর্থ প্যারা লেখার সময় বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। কেননা এই প্যারার উপকরণগুলোই উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নকে প্রয়োগ থেকে আলাদা করে দেবে।
Discussion about this post