বইয়ের শুরু থেকেশেষ পর্যন্ত মুখস্থ করলেই আদর্শ ্ছাত্র হওয়া যায় না । তার জন্য প্রয়োজন, কতিপয় নিয়ম-কানুন মেনে চলা । কারণ প্রতিটি কাজই সুনির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । ছাত্রদের ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর, সফল ও গৌরবোজ্বল করে গড়ে তুলতে হলে তাদের কতিপয় নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় । তাই আদর্শ ছাত্র হওয়ার জন্য নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে কতিপয় নীতিমালা আলোচিত হলো ।
০১. জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ( Aim of life ) স্থির করণ :
একজন ছাত্রকে শিক্ষাজীবনের শুরুতেই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য কি হবে তা ঠিক করে নিতে হবে । আমি কি হতে চাই ? একজন শিক্ষাবিদ, সুবিজ্ঞ আলেমে দ্বীন, ইতিহাসবেত্তা, অর্থনীতিবীদ, সমাজসেবী, বিজ্ঞানী না অন্য কিছু ? কারণ লক্ষ্যহীনভাবে কোন কাজে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয় ।
০২. দৃঢ় ইচ্ছা ও বিশ্বাস : ( Confidence and strong tendency )
বিশ্বাস
ও দৃঢ় ইচ্ছা হচ্ছে আত্মার খোরাক ।শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে এটি জ্বালানী শক্তি
হিসেবে কাজ করে । বিশ্বাস হতে চিন্তা এবং চিন্তা হতে কার্যের উৎপত্তি । প্রত্যেক
মানবের কার্যই তার বিশ্বাসের অনুরূপ হয়ে থাকে । যে মনে আত্মবিশ্বাস ও উচ্চাকাংখা
নেই সে মনে কোন তেজ ও নেই । বিশ্বাস ও উচ্চাকাংথা দ্বারা কর্মস্পৃহা ও মনোবল
জাগ্রত হয় । বিশ্বাস ও আশা মানুষের মনে কর্মশক্তি যোগায় । সামনে এগোতে করে
অনুপ্রাণীত । হতাশা ও নিরাশা মানুষকে করে হতোদ্যম । কেড়ে নেয় তার কর্ম শক্তি ও
প্রাণচাঞ্চল্য । তাই নৈরাশ্যের চেয়ে বড় রোগ মানব জীবনে আছে বলে আমার জানা নেই ।
কবি
যথার্থই বলেছেন-
“ বিশ্বাস
আর আশা যার নাই যেও না তার কাছে
নড়াচড়া
করিয়াও জ্যান্ত মরিয়া গিয়াছে সে
শয়তান
তার শেষ করিয়াছে , ঈমান
লইয়াছে কেড়ে
প্রাণ
গিয়াছে মৃতপুরীতে ভয়ে তার দেহ ছেড়ে ।”
ডা:
লুৎফর রহমান বলেছেন –“ আমরা যা হতে চাই, তাই হতে পারি । এই
হতে
চাওয়ার ইচ্ছা খুব দৃঢ় ও ইস্পাত কঠিন হওয়া চাই । ”
নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার অনুশীলন করতে হবে ।
জনৈক মনীষী বলেছেন : Nothing is impossible to a willing mind. অর্থাৎ- ইচ্ছার কাছে কোন কিছুই অসম্ভব নয় ।
জর্জ বার্নার্ডস বলেছেন : সুদৃঢ় ইচ্ছা বা আকাংখা হচ্ছে সফলতার পূর্বশর্ত ।
ইউলিয়ম হ্যাজলিট বলেছেন :
if you think you can win, You can win. Faith is necessary to vectory . অর্থাৎ- যদি তুমি মনে কর তুমি জিতবে, তবে তুমি জিতবেই, বিজয়ের জন্য জরুরী হলো বিশ্বাস ।
নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার অনুশীলন করতে হবে ।
ছাত্রকে সর্বদা এ আশা পোষণ করতে হবে যে, যদি কেও পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম হয়, সেটা অবশ্যই আমাকে হতে হবে । শুধু পরীক্ষায় পাশের চিন্তা করলে লিখা-পড়ায় গতি সঞ্চার হবে না ।
০৩.
অধ্যবসায়ী ( Persevering ) হওয়া :
ভাল ছাত্র হতে হলে তাকে অবশ্যই অধ্যবসায়ী হতে হবে ।
অধ্যবসায় বলতে বুঝায়-“ কোন কাজে সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে বা কাংখিত লক্ষ্যে পৌছার লক্ষ্যে নিবিষ্ট মনে অবিরাম গতিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া । ”
অনেকে মনে করেন – মেধাবী ও জ্ঞানী হওয়াটা আল্লাহর দান । কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয় । কারণ, শুধু মেধা থাকলেই হবে না । সে যদি অধ্যবসায়িী না হয়, তবে তার মেধার বিকাশ ঘটবে না।
কবি যথার্থই বলেছেন :
“ হউক
না কোন কাজ যতই কঠিন
ধরিয়া
থাকিলে সিদ্ধ হবে একদিন ।
ঈগল
পাখির মতো তুমি সাহস রাখো বুকে
শিকার
এবং বিজয় দুটো আসবে উৎসুকে ।
ইংরেজিতে
একটি প্রবাদ আছে – Do or die .
অর্থাৎ-
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীরের পতন ।
কথায় বলে যে,
“তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপক্ষী সহজেই পশুপক্ষী, কিন্তু মানুষ প্রাণপন চেষ্টায় তবেই মানুষ । ”
আলক্বুআনে বর্ণিত হয়েছে : وان ليس للانسان الا ما سعى অর্থাৎ- চেষ্টা ছাড়া কোন কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয় ।
কথায় বলে – “ Industry is the mother of good luck. ” অর্থাৎ- পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ।
ডা: লুৎফর রহমান বলেছেন : যে সমস্ত মানুষ ব্যর্থতাকে ভয় করে না, জয়ী হবে এ বিশ্বাসে কাজ করে , তারাই জয়ী হয় ।
পন্ডিত বোপদেবের ঘটনা :
পন্ডিত বোপদেব বা্ল্যকালে মেধাবী ছিলেন না । লিখা-পড়ায় খারাপ হওয়ায় তার শিক্ষকগণ প্রায়শই তাঁকে মারধর ও ভৎর্সনা করতেন । বাড়িতেও পিতা-মাতা সুনজরে দেখতেন না । মনের দু:খে বাড়ি ছেড়ে অজানা পথে পাড়ি জমালেন । পথিমধ্যে আহার করার জন্য এক পুকুর ঘাটে বসে পড়লেন । হটাৎ দেখতে পেলেন, জনৈকা মহিলা পুকুর হতে কলসে পানি ভর্তি করে সেই কলসটি একটি পাথরের উপর রাখলো । কিছুক্ষণ পর সেই মেয়েটি সেখান থেকে প্রস্থান করলে বোপদেব দেখতে পেলেন , মটির কলসে ক্রমাগত ঘর্ষণে কঠিন পাথরেও গর্ত হয়ে গেছে । সেই দৃশ্য অবলোকন করে বোপদেবের চেতনা ফিরে এলো । তিনি আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য নবচেতনা ও বিশ্বাস ফিরে পেলেন । তিনি চিন্তা করতে লাগলেন : আমিও যদি কলসের ঘর্ষনের ন্যায় আমার তথাকথিত পচাঁ ব্রেনটাকে অধ্যবসায়ের ঘর্ষণ দিতে পারি , তাহলে আমার প্রতিভারও বিকাশ ঘটতে পারে । এরপর অবিরাম গতিতে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে সত্যি তার আশা পূর্ণ হলো । এর ফলশ্রুতিতে তিনি বিশ্ব খ্যাত পন্ডিত বোপদেব বলে খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হন ।
০৪. রুটিন মাফিক পড়াশুনা করা : ( Study by rutine )
ছাত্রকে প্রতিদিন রুটিন মাফিক পড়াশুনা করতে হবে । পাঠ্যপুস্তক সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পূর্ণভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে একটি রুটিন প্রনয়ন করত: তা পড়ার টেবিলের সামনে লটকিয়ে রাখতে হবে । দিন-রাতের সময়গুলোকে ভাগ করে নিয়ে রুটিন তৈরী করতে হবে । রুটিন মাফিক পড়াশুনা করলে সবগুলো বিষয় পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে।
০৫. নিয়মানুবর্তিতা ( Punctuality ) :
শিক্ষাজীবনে নিয়মানুবর্তিতার অনুসরণ করা অতিব জরুরী । এটি আদর্শ ছাত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । ২৪ চব্বিশ ঘন্টার সময়গুলোকে ভাগ করে সঠিকভাবে তা ভাগ করতে হবে । রুটিন মাফিক পড়াশুনা করা, সময়মত শিক্ষা প্রতিস্ঠানে গমন ও প্রত্যাগমন, শারীরিক ব্যায়াম বা খেলা-ধুলা,পানাহার, বিশ্রাম ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতার অনুসরণ করতে হবে ।
০৬.
হাতের লেখা ভাল করা বা ( Writing skill ) আপগ্রেড করা :
পরীক্ষায় বেশী নম্বর পাওয়ার জন্য হাতের লেখা সুন্দর করা আবশ্যক । কারণ পরীক্ষক যখন উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন , ঐ সময় যদি তার চোখের সামনে উজজ্বল , সুন্দর ও ঝকঝকে লেখা ভেসে ওঠে , তখনসত্যিই তার মনের মাঝে আনন্দের দোলা দেবে । খুশিতে ভরে উঠবে তার মন । ঐসময় পরীক্ষক আনন্দের আতিশয্যে নম্বর ও দেবেন বেশি । তাই বলে উত্তর অপ্রাসঙ্গিক বা ভুল হলে শুধু ভাল লেখায় কাজ হবে না ।
উল্লেখ্য যে, যার হাতের লেখা ভাল ,তার লেখার অনুকরণ করলে লেখা সুন্দর করা যায় ।
Discussion about this post