শিক্ষার আলো ডেস্ক
রতন আর রুমন যমজ দুই ভাই।রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে তারা ভর্তি হয়েছেন অর্থনীতি বিভাগে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের নাজমুল হকের ছেলে তারা। ওদের বয়স যখন এক বছর সেই সময় বাবা নাজমুল হক হঠাৎ মানসিক রোগী হয়ে পড়েন। তখন থেকেই তারা নানা বাড়িতে থাকেন।
মা লাইজু বেগম, নানা ছাদেক আলী আর বড় ভাই নুর আলমের অক্লান্ত চেষ্টায় শিক্ষা জীবনের পথে ওরা বয়ে এনেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সাফল্য। বিস্ময়করভাবে প্রথম শ্রেণি থেকে বর্তমান পর্যন্ত তাদের শিক্ষা জীবনের সব জায়গায় সাফল্য ছিল জোড়ায় জোড়ায়। চেহারায় দু’জনের যেমন মিল, তেমনি শৈশব থেকে সবকিছুতেই রয়েছে এক অন্যরকম মিল। চলতি বছর একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে দু’ভাই ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাদের এমন জোড়ায় জোড়ায় সাফল্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীরাও।
সম্প্রতি কথা হয় তাদের দু’ভাইয়ের সাথে। তারা জানান তাদের সাফল্যের কাহিনি। বলেন,‘আমাদের সাফল্য যেমন জমজ আকারে এসেছে, তেমনই ব্যর্থতাও জীবনে এসেছে জমজভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য অনেক কিছুর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো কোচিং করার সুযোগ পাইনি। এমনকি আমরা কোনো ক্লাসেই কোচিং-প্রাইভেট পড়ারও সুযোগ পাই নাই। আমাদের দুইজনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পযর্ন্ত প্রায় ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধের জন্য জমি বন্দক রেখেছি ৫০ হাজার টাকা। বাদবাকি টাকা নানা, মামা, খালাদের সহযোগীতায় পরিশোধ করেছি।’
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ভর্তি পরীক্ষায় দুই ভাই এক সাথে ভর্তির সুযোগ পান। সেগুলো হলো— রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রফেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে তারা রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
তারা আরও বলেন, ‘বাবার অসুস্থতার পর থেকে আমাদের দাদা বাড়ি থেকে আমরা প্রায় সকল কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা যেন প্রতিষ্ঠিত হতে না পারি সেই জন্য অনেকই বাঁধাও দেন। আমরা তিন ভাই চাই, প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ ও সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে।’
ভাই নূর আলম বলেন, ‘দুই ভাইয়ের জমজ সাফল্যে নিজেও বিষ্মিত হই। দুই ভাইয়ের জন্য সকলের দোয়া প্রার্থনা করি।’
নানা ছাদেক আলী বলেন, ‘আমার নানু ভাইয়েরা সুশিক্ষিত হয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করুক এই কামনা করি।’
মা লাইজু বেগম বলেন, ‘আমি এখন অনেক খুশি— আমার দুই ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। আমার খুব শখ ওদের মানুষের মতো মানুষ করার। এখন যদি ওরা একটা বৃত্তির সুযোগ পেত তাহলে ওদের জন্য অনেক সুবিধা হতো।’
Discussion about this post