শিক্ষার আলো ডেস্ক
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগেই। শ্রাবন্তী সুলতানা বর্ষার মা বিউটি খাতুন স্থানীয় একটি সেমাই মিলে কাজ করে সংসার চালান। বছরখানেক আগে থানায় হাজির হয়ে শ্রাবন্তী সুলতানা বর্ষা নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছিল। সেই সাহসী কিশোরী এবার মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা শহরের ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল শ্রাবন্তী। ওই বিদ্যালয় থেকে ১৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছে।
শ্রাবন্তী বাল্যবিবাহ আয়োজন ঠেকাতে সদর থানায় আবেদন করেন। এতে তিনি বলেন, ‘আর্থিক দুরাবস্থার কারণে বিয়ে দেওয়া সব সমস্যার সমাধান নয়, বরং বাল্যবিবাহের কারণে আমাদের দেশে হাজারও মেয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং একপর্যায়ে অপমৃত্যুর শিকার হয়। তাই বাল্যবিয়ে নয়, আমি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আপনারা সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করলে কেউই আমার উচ্চশিক্ষা ঠেকাতে আর পারবে না।’
পরে ওসি মেয়েটির মা সহ পরিবারের সদস্যদের ডেকে বিয়ের আয়োজন বন্ধ করেন। শ্রাবন্তী মায়ের সঙ্গে সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নে নানাবাড়িতে থাকে। তার বাবা ও বড় ভাই থাকেন যশোরে।
বর্ষা বলেন, ‘রেজাল্ট পাওয়ার পর এতো খুশি হয়েছি, যে বলার ভাষা নেই। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে এ পর্যন্ত এসেছি। বাবা থেকেও নেই, অনেক সংগ্রাম করেছি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জোর করে মামা-খালারা আমার বিয়ে ঠিক করেন। তাদের জোরাজুরিতে আমার মা অসহায় ছিলেন। যাদের বাল্যবিয়ে হয়েছে, তাদের কেউ সুখে-শান্তিতে নেই। পড়াশোনা শিখে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করতে চাই। ইচ্ছে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।’
মেয়ের সাফল্যে মা বিউটি খাতুন আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমার যত কষ্টই হোক, মেয়েকে সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে, যা যা করার সবই আমি করব।’
শ্রাবন্তীর এই সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শ্রাবন্তীর সহপাঠীরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘সে নিজের ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে। মূলত আর্থিক সমস্যার কারণে বাল্যবিয়ে হয়ে থাকে। আবার কখনও সামাজিক কারণেও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে থাকে। যদিও আমাদের দেশে বাল্যবিয়ে সাংবিধানিক ও সামাজকিভাবে একটা অপরাধ। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও এটি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। তবে শ্রাবন্তীর এই সাফল্য ও সাহসী মনোবল অনেক মেয়ের সামনে বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
Discussion about this post