শিক্ষার আলো ডেস্ক
বন্যাকবলিত এলাকায় সহযোগিতার জন্য বন্যার্তদের ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) প্রাঙ্গণে চলছে ত্রাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রবেশপথের পাশে ‘গণ-ত্রাণ সংগ্রহ’ বুথ বসানো হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষ এসে নানা ধরনের ত্রাণ এখানে দিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো পৌঁছানো হবে বন্যাকবলিত এলাকায়।যেকোনও দুর্যোগ পরিস্থিতিতে তরুণ সমাজের এগিয়ে আসার যে আগ্রহ, দলীয় ছাত্রদের উপস্থিতি না থাকায় এবার তা অন্যরূপে হাজির হয়েছে। যে যেখান থেকে পেরেছে বন্যাকবলিত মানুষকে সহযোগিতার জন্য ছুটে গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে জড়ো হচ্ছেন সেখানে।ত্রাণ সংগ্রহ বুথে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন। যার কাছে যা কিছু আছে তাই বন্যার্তদের জন্যে দিচ্ছেন তারা। রিকশা ও পিকআপে করে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসছেন। কেউ কেউ নিয়ে এসেছেন নগদ অর্থ।যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক মাসের বেতনসহ তার মন্ত্রণালয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) মধ্যরাত পর্যন্ত নগদ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা।শুক্রবার নগদ অর্থের পাশাপাশি সংগ্রহ করা হয়েছে শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন ও পোশাক। এছাড়াও সংগ্রহ করা হয়েছে গবাদি পশুর খাবারও। এদিন যে পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী উঠানো হয়েছে, তা বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে পৌছাতে ৩০টির মতো ট্রাক লাগবে।
গতকাল সারাদিন ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়। সন্ধ্যা নামার পরে ত্রাণ দেয়া মানুষের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এদিকে তৃতীয় দিনের মতো আজ শনিবার সকাল ৮টায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়ে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
জমা দেওয়া ত্রাণের মধ্যে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুটসহ শুকনা খাবার, স্যালাইন, স্যানিটারি প্যাডসহ জরুরি ওষুধ, মোমবাতি, দেশলাই, গুড়, চানাচুর, চাল-ডাল, খই, নানারকম পোশাক, বিশুদ্ধ পানি এবং পানি শুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য জরুরি দ্রব্যাদি রয়েছে। এর মধ্যে শুকনো কাপড়সহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং শুকনো খাবার টিএসসি ক্যাফিটেরিয়ায় স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। খেজুর-গুড়সহ অন্যান্য কয়েকটি দ্রব্য অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া কক্ষে রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন ঃ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৫ জন, প্লাবিত ১১ জেলা
টিএসসিতে সেচ্ছাসেবকগণ বলেন, এত মানুষ টিএসসিতে ত্রাণ নিয়ে আসছে। একটি অভূতপূর্ব ব্যাপার। দেশের মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখে আমরা অবাক হয়ে গেছি। বিত্তবান থেকে নিম্নবিত্ত সবাই নিজের সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ জমা দিচ্ছেন। এই টিএসসি দেশপ্রেমের আইকনে পরিণত হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হলের উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা নগদ অর্থ ও শুকনো কাপড় সংগ্রহ করছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকগুলো দল ইতোমধ্যে ফেনী ও নোয়াখালীতে উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ শনিবার ভোরে ফেসবুক লাইভে বলেছেন, দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণত্রাণ সংগ্রহ চলবে। এতে মানুষ অভূতপূর্ব সাড়া দিচ্ছেন। এটাকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দল-মত নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করছেন। এ টাকা খরচের পর সংগৃহীত টাকার হিসাব দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ভারতীয় ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে বন্যা কবলিত হয়েছে দেশের ১২টি জেলা। গত বুধবার (২১ আগস্ট) থেকে ফেনীসহ আট জেলায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। তবে এর কয়েকদিন আগে থেকেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে অনেক জেলায়। এরপর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে বৃহস্পতিবার আরও চার জেলার অনেক জায়গা তলিয়ে যায়।
Discussion about this post