বিশেষ প্রতিবেদক
গতকাল ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো নগরীর প্রথম ডিজিটাল স্কুল খ্যাত সাউথ এশিয়ান স্কুলের বর্ণাঢ্য বার্ষিক সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ২০২৪। ষোলশহরস্থ এলজিইডি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষক প্রশিক্ষক অধ্যাপক ড.মীর আবু সালেহ শামসুদ্দিন শিশির।স্কুল প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ লকিতউল্লাহর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন ।বিশেষ অতিথি ছিলেন এজিএম নিয়াজ উদ্দীন, সহযোগী অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধ্যাপক মো.আবুল বাসার, উপ-পরিদর্শক (স্কুল), মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, চট্টগ্রাম,স্কুল প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম,অন্যতম পরিচালক ব্যাংকার মো. জিয়াউর রহমান এবং শিক্ষার আলো পত্রিকার সম্পাদক এস,এম. পারভেজ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের পর স্বাগত বক্তব্যে স্কুলের পরিচিতি ও নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সালেহ উদ্দিন। উদ্বোধনী বক্তব্যে ড.শামসুদ্দিন শিশির অভিভাবকবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, শিশুদের অযথা বকাঝকা করবেন না! তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু চাপিয়ে দেবেননা।লেখাপড়ার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেবেন, খেলাধূলার সুযোগ করে দেবেন। শিশুরাও পিতামাতাকে মান্য করে চলবে,তাদের সাহায্য করবে।তবেই সুন্দর সমাজ তথা দেশ গড়ে উঠবে।
উদ্বোধনের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ এই পর্বে ছিলো ইসলামী সংগীত, গান, আবৃত্তি,নাচ,নাটিকা ও ফ্যাশন শো। বিশেষ করে ধন ধান্যে পুষ্প ভরা,আমাদের এই বসুন্ধরা, নোঙর তোলো তোলো এই দেশাত্মবোধক গান দুটিতে ঠোঁট মিলিয়ে উপস্থিত সবাই দেশাত্মবোধে একাত্ম হয়ে পড়েন।
আর এর সাথে ছোট্টমণিদের গানের তালে তালে ওয়েস্টার্ন নৃত্য সবাইকে ভীষণ আনন্দ দেয়।
অন্যদিকে আল্লাহ আমার রব, তোরা দেখে যা আমেনা মায়ের কোলে, যাদের হৃদয়ে আছে আল্লাহর ভয়, এই ইসলামী সংগীতগুলো সবার মন ছুঁয়ে যায়।
জমজমাট সাংস্কৃতিক পর্বের পর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রফেসর মো. কামাল উদ্দিন বলেন, মেধা পাচার হয়না মেধা প্রচার হয়!আপনারা সন্তানকে যেমন দেশীয় শিক্ষা,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চেতনায় গড়ে তোলবেন,তেমনি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সভ্যতার সাথেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেবেন।আপনার সন্তান একদিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে, সেই স্বপ্নই তাদের দেখাবেন।
বাংলাদেশের বৈষম্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের একজন শিক্ষার্থী যে সুবিধা পায়, সরকারী প্রাইমারী স্কুলের একজন শিশু কি তা পায় ?এই বৈষম্য যতদিন দূর না হবে ততদিন আমরা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারবোনা।সাউথ এশিয়ান স্কুল এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সত্যিকারের শিক্ষা প্রদান করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক নেওয়াজ উদ্দীন অভিভাবক এবং শিশুদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, শিশুদের বিকাশে এই সাংস্কৃতিক চর্চা বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মো. আবুল বাসার সাউথ এশিয়ান স্কুলের এই আয়োজনের প্রশংসা করে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, লেখাপড়া করে তোমরা সবাই ডাক্তার বা প্রকৌশলী হবে এমন কোন কথা নেই, আসল কথা হলো ভালো মানুষ হতে হবে। হতে হবে আলোকিত, সৎ একজন মানুষ, যে কিনা বিশ্বমানবতার জন্য কাজ করবে, দেশ ও জাতিকে আলোকিত করবে।যাকে নিয়ে পিতামাতা এবং শিক্ষকগণ গর্ব করবেন।
প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার বিপরীতে একটি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন থেকেই সাউথ এশিয়ান স্কুলের জন্ম।আমরা সুশিক্ষার আলোকে নতুন প্রজন্মকে গড়তে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি প্রচন্ডভাবে। সম্মানীয় অভিভাবকবৃন্দের অকুন্ঠ সহযোগিতা আমাদের চলার পথের পাথেয়।
সাংবাদিক এস,এম, পারভেজ বলেন, সাউথ এশিয়ান স্কুল চট্টগ্রামে পুর্ণাংগ ডিজিটাল স্কুলের সব শর্ত পূরণ করেছে।শিক্ষা মানে শুধু সার্টিফিকেট অর্জন নয়।যে শিক্ষা সামাজিকতা শেখায়না, নৈতিক দৃঢ়তা দেয়না,মানবতার অনুসারী করেনা সে শিক্ষা প্রতিবন্ধী! তাই সাউথ এশিয়ান স্কুল সকল অপূর্ণতা পূরণ করে, অভিভাবকদের সাথে নিয়ে আগামী সময়ে প্রকৃত শিক্ষার আলো ছড়াবে এই আশা রাখি।
বক্তব্য শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকবৃন্দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
সবশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধান শিক্ষক সৈয়দ লকিতউল্লাহ অনুষ্ঠান সফল করার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শামীমা নাসরিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সার্বিক সমন্বয়ে ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সালেহ উদ্দিন, সাংস্কৃতিক শাখার কো-অর্ডিনেটর মো. খোরশেদ মুকুল,কো-অর্ডিনেটর মো. আতাউল্লাহ জিহাদ এবং কো-অর্ডিনেটর মামুনুর রশীদসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।
Discussion about this post