শিক্ষার আলো ডেস্ক
শিক্ষকদের টানা ১৭ দিন আন্দোলনের পর শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরারের সঙ্গে বৈঠকের পর নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একথা জানিয়েছে সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদ।
বুধবার (১২ মার্চ) থেকে এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. সেলিম মিঞা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সব জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করে সরকারকে এমপিওভুক্তির আহ্বান জানিয়েছিলাম।
নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের এই প্রধান সমন্বয়ক জানান, সরকার আমাদের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ১৭ দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি করেছি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে দুজন নন-এমপিও শিক্ষক আর্থিক অভাব-অনটনে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। কর্মসূচি চলাকালীন রোজা ও তারাবির নামাজ, ইফতার, সেহরি ও রাতে অবস্থান করে অনেক শিক্ষক কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুনঃ ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির প্রস্তাবের ফাইলে বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টার স্বাক্ষর !
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন উল্লেখ করে অধ্যক্ষ সেলিম মিঞা বলেন, সর্বোপরি আমরা চেয়েছি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর ধরে বেতনহীন শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে তাদের বেতনের ব্যবস্থা করা হোক। আজ একই দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়ে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করি। সেসময় পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবির বিষয়ে আলোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাই।
তিনি আরও বলেন, আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ও আরেকজন যুগ্ম সচিব। নন-এমপিওদের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। সেখানে বেশকিছু বিষয়ে আলোচনা হয়। তারা আমাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সচল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন। ফলে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি জানান, শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব অভিমত পোষণ করে মঙ্গলবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রাথমিক কাজ শুরু হবে এবং আগামী মে মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত আকারে এমপিওর তালিকা প্রকাশ করা হবে। সরকার আমাদের এমপিও করণের দাবি মেনে নেওয়ায় সমন্বয়ক পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হলো। আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী নন এমিপও শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে হতে যারা আহত, অসুস্থ হয়েছেন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা ও দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অভাব অনটনের জন্য সুচিকিৎসা না পাওয়ায় আমাদের ৯ জন শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. দবিরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ নাজমুস শাহাদাৎ আজাদী, সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মনিমুল হক, যুগ্ম সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ ইমরান বিন সোলায়মান, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. সাজ্জাদ হোসেন, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সালাম প্রমুখ।
Discussion about this post