শিক্ষার আলো ডেস্ক
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ পর্ব শেষে এবারের লক্ষ্যের নাম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।২০৪১ সাল-নাগাদ জ্ঞানভিত্তিক, উচ্চ অর্থনীতির উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।স্মার্ট বাংলাদেশ এর বাস্তব রুপায়নে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব পালনে অগ্রণী এক বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রামের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বিদ্যালয় ‘ সাউথ এশিয়ান স্কুল’(EIIN-138370)।
নগরীর শিক্ষাজোন চকবাজারে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সাউন্ড সিস্টেম, অডিও ভিডিও ক্লিপসের উপস্থাপনায় ডিজিটাল স্ক্রীনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রুপ দিয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর একমাত্র পূর্ণাংগ ডিজিটাল স্কুলের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে এর ফলপ্রসূ পাঠদানের মাধ্যমে সচেতন অভিভাবক মহলের আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়েছে।
আনন্দময় শিক্ষা:
অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ লকিতুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, শিশুদের কাঁধে বইয়ের বোঝা নয়, ওরা শিখবে আনন্দের মাঝে– এই নীতিতেই শিশুবান্ধব ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন,ছবি ও আসবাবপত্রে সজ্জিত ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্লে,নার্সারী এবং কে.জি. (ইংরেজী ভার্সন, ন্যাশনাল কারিকুলাম) শ্রেণীর ক্লাসরুমগুলো সত্যিই নজর কাড়ার মত।
ছোট্ট সোনামণিদের জীবনের প্রথম পাঠটি দেয়ার জন্য রয়েছেন শিশু মনোবিজ্ঞানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ শিক্ষিকাগণ, যারা মাতৃসুলভ মমতায় শিশুদের আপন করে নেন।ছড়া, অভিনয়, আবৃত্তি কিংবা গানের সুরে পড়ানোর সাথে সাথে ছবি, চার্ট, খেলনাসহ নানা শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করেন শিক্ষিকাবৃন্দ।বাংলাদেশে আমরাই প্রথম ক্লাসে এনিমেশন, গেমস,পাজল,স্টোরীর মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছি। ফলে পাঠ্য বইয়ের বর্ণমালা, ছড়া কিংবা ছবিগুলো যখন ডিজিটাল স্ক্রীনে জীবন্ত হয়ে উঠে তখন কোমলমতি শিশুদের কাছে পাঠ্যবিষয়গুলো হয়ে ওঠে সহজতর এবং আকর্ষণীয় । লেখাপড়ার ফাঁকে বিনোদনের জন্য রয়েছে খেলনাসামগ্রীতে ভরপুর আকর্ষণীয় প্লে রুম যেখানে ভীষণ উচ্ছাসে মেতে উঠে ছোট্ট সোনামণিরা।
গেলো বছরে প্রথম শ্রেণির পর এবছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে নুতন কারিকুলামের প্রচলন হতে যাচ্ছে। নতুন কারিকুলামে শিশুদের জন্য রয়েছে মজার মজার সব তথ্য ও শ্রেণিকার্যক্রম।
নুতন এই শিখন কার্যক্রমকে সফল করতে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ ও পরেবেশ আমাদের স্কুলে রয়েছে। আশা করছি এ বছর গত বছরের চাইতেও উৎসাহ ও আনন্দের সাথে ছোট্টমণিরা তাদের পাঠকে উপভোগ করবে।
নতুন কারিকুলামের চ্যালেঞ্জ :
অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ লকিতুল্লাহ এ প্রসংগে বলেন, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পৃথক ক্যাম্পাস।আমরা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ব্যতিক্রমী এক শিখন পদ্ধতি METHOD-69 অনুসরণ করে এসেছি যাতে রয়েছে – মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করে সহজ এবং গবেষণালব্ধ পদ্ধতিতে এনিমেশন, গেমস,পাজল,স্টোরীর মাধ্যমে পাঠদান , ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে গ্রæপ ওয়ার্ক, ছাত্র-ছাত্রীরা কতটুকু অর্জন করল তা যাচাই বাছাই করতে ফিডব্যাক ক্লাস, শিক্ষার্থী তাদের অর্জিত জ্ঞান ক্লাসরুমে সকলের সামনে উপস্থাপন করতে প্রেজেন্টেশন ক্লাস।ব্যতিক্রমী এই শিখন পদ্ধতির সুফল ভোগ করে আসছিলো আমাদের ছাত্রছাত্রীরা।
মজার বিষয় হলো নতুন প্রবর্তিত কারিকুলামের নতুন শিখন কার্যক্রম এর সাথে আমাদের পাঠদান পদ্ধতির অনেক মিল রয়েছে। ফলে আমাদের শিক্ষকগণের কাছে নতুন কারিকুলামের প্রশিক্ষণ বেশ গ্রহণযোগ্য হয়েছে এবং বিভিন্ন স্কুলে অনেকে অনেক সমস্যায় পড়লেও আমরা গত একবছর ক্লাসে অত্যন্ত সফলভাবে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রথমবারেই আমাদের শিক্ষকগণ নতুন কারিকুলামের উপর সরকারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।যেহেতু বর্তমানপাঠক্রম একটি দক্ষতা-ভিত্তিক পাঠ্যক্রম।তাই নতুন শিখন অভিজ্ঞতা অর্জন করাতে গিয়ে নতুন শিখন কৌশল রপ্ত করতে হয়েছে শিক্ষকদের।
খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাসের পাঠ ক্লাসেই শেষ করতে পারে, যাতে করে বাড়ির কাজ বা হোমওয়ার্ক কমানো সম্ভব হয়,তাও নিশ্চিত করি আমরা।সবশেষে প্রায়োগিক দক্ষতা কতটুকু লাভ করলো তা মূল্যায়ন করেন অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ।আমাদের প্রতিটি ক্লাসে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকায় দলগত কাজ বা মূল্যায়ন সেশন কার্যকর ভাবে ফলপ্রসূ হয়।
আইসিটি ও বিজ্ঞান শিক্ষক খোরশেদুল আলম মুকুল বলেন, নতুন এই শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভর লেখাপড়ার চর্চা থেকে বেরিয়ে আসবে শিক্ষার্থীরা ।শিক্ষাক্রমে তথ্য মনে রাখার ক্ষমতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এবং তথ্য ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতার উপর। আমরা বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্লাসে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট তথ্য তুলে ধরি এবং প্রাসংগিক উপকরণ প্রদর্শন করি।দলগত কাজে হাতে কলমে বিভিন্ন প্রকল্প উপস্খাপনের মাধ্যমে যে কোন জটিল বিষয় অত্যন্ত উপভোগ্য ও সহজবোধ্য হয়ে ওঠে।
বিশেষ যত্ন ও অভিভাবকের স্বস্তি :
দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী কর্তৃক বিজ্ঞানসম্মত স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে পাঠদানের ফলে ডিজিটাল ক্লাসরুম এ ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ হয়। শ্রেণীশিক্ষক ছাড়াও রয়েছেন প্রতি ৩০ জনের জন্য একজন করে গাইড শিক্ষক, যিনি শিক্ষার্থীর বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করেন।সের পর প্রয়োজনে রয়েছে অতিরিক্ত ক্লাস যেখানে পড়িয়ে, শিখিয়ে, লিখিয়ে পড়া আদায় করা হয়।
এছাড়া লেখাপড়ায় দূর্বল প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একজন শিক্ষক।পরন্তু সাউথ এশিয়ান স্কুলের শিক্ষকদের নিজ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ।তাই ক্লাসেই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে পাঠ আদায়ে সচেষ্ট থকেন শিক্ষক।ফলে কোন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে হয় না।
Daily Auto SMS Alert System এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্কুলে উপস্থিতি ও স্কুল ত্যাগের বিষয়টি সময় উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক অভিভাবকের মোবাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে দেয়া হয়। অভিভাবকের মোবাইলে সংযুক্ত করা হয়েছে বিশেষ এ্যাপস যার মাধ্যমে স্টুডেন্ট ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করে জানতে পারেন তার সন্তানের শিক্ষাসংক্রান্ত সকল তথ্য।ফলে অভিভাবক থাকেন দুশ্চিন্তামুক্ত!
আরও পড়ুন-ইংরেজী ভার্সানে ডিজিটাল বিদ্যাপীঠ ‘SCHOOL OF SCIENCE , BUSINESS & HUMANITIES ’
এস এস সি পরীক্ষার্থীর বিশেষ যত্ন
প্রতি বছর এস এস সি পরীক্ষায় ৫০% A+ সহ শতভাগ পাশের রেকর্ডধারী সাউথ এশিয়ান স্কুলে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সৃজনশীল পদ্ধতিতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষকবৃন্দ পাঠদান করে থাকেন। প্রতিটি পাঠ শেষে চলে সৃজনশীল প্রশ্নের অনুশীলন এবং দেয়া হয় কোর্সপ্ল্যানভিত্তিক লেকচারশীট এবং প্র্যাকটিস শীট।শিক্ষকগণ মূল বইয়ের উপর বেশী জোর দেন এবং পড়ান প্রতিটি লাইন ধরে ধরে।দুর্বল শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে One To One Teaching Support ।এরপর নিয়মিত Daily test ও Quiz শিক্ষার্থীকে বহুনির্বাচনী প্রশ্নোত্তর সমাধানে পারদর্শী করে তোলে।
আই টি প্রশিক্ষণ
ডিজিটাল এই স্কুলে কম্পিউটার ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে জনপ্রতি একটি কম্পিউটারসমৃদ্ধ অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব এবং বিজ্ঞানাগার।শিশুশ্রেণী হতে উচ্চশ্রেণী সবার জন্য কম্পিউটার ক্লাস বাধ্যতামূলক।উপরন্তু সিলেবাসের বাইরেও ষষ্ট থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের C+, JAVA,Web Design এর মত এডভান্স কোর্স শেখাচ্ছেন আই টি প্রকৌশলীবৃন্দ।
সহশিক্ষা কার্যক্রম
সহকারি প্রধানশিক্ষক মো.সালেহউদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীর সুপ্ত মেধার বিকাশ ও সৃজনশীল প্রতিভা বৃদ্ধির জন্য একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরিচালনায় রয়েছে বিজ্ঞান ক্লাবে অংশগ্রহণের সুযোগ এবং স্পোকেন ইংলিশ, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, খেলাধুলা (আউটডোর/ইনডোর), শরীরচর্চা ও ম্যাগাজিন প্রকাশ।এবছর থেকে সপ্তাহের প্রতি শনিবার স্ব স্ব বিষয়ে পারদর্শী প্রশিক্ষক দ্বারা আয়োজন করা হবে নিয়মিত চিত্রাংকন, আবৃত্তি, নাচ , গান ও বিতর্ক চর্চা!
মহান একুশে, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ সকল জাতীয় দিবস উদযাপিত হয় সাড়ম্বরে।এছাড়াও বিজ্ঞান মেলা, স্পেলিংবী,গণিত অলিম্পিয়াড,রসায়ন অলিম্পিয়াড,রেবোটিকস কর্মশালা,বিজ্ঞান কর্মশালা,ফল উৎসব, বৈশাখী উৎসব ইত্যাদির আয়োজনও হয় উৎসাহের সাথে।প্রতি বছর শিক্ষাসফর ছাড়াও রয়েছে শ্রেণিভিত্তিক আউটিং প্রোগ্রাম।নৈতিক শিক্ষা ও পবিত্র কোরআন শিক্ষার জন্য রয়েছে অভিজ্ঞ মাওলানা দ্বারা কোরআন প্রশিক্ষণ,যা অনেক অভিভাবকের কাছে একটি বাড়তি পাওনা।
পরিশেষে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আনজুমান আরা বেগম বলেন, “আমরা শিক্ষাকে একটি ব্রত ও সামাজিক দায়িত্ব মনে করি।আপনার সন্তানকে দেশীয় সংস্কৃতি,ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে ধারণ করে আধুনিক শিক্ষার আলোয় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ একজন পূর্ণাংগ মানুষরুপে গড়ে তুলতে আমাদের প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি থাকবেনা।তবে এই পথচলায় আপনাদের সহযোগিতাই আমাদের একমাত্র পাথেয়”।
বিস্তারিত জানতে গুলজারের পশ্চিমে, ১০১ ,চট্টেশ্বরী রোড, চকবাজার এই ঠিকানায় এবং ০১৬৪৭–৪৭৯৩৩৪, ০১৬৪৭-৪৭৯৩৩২ ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। লগ ইন করতে পারেন www.sas.edu.bd সাইটে।
Discussion about this post