বিশেষ প্রতিবেদক
বাবা বেসরকারি কোম্পানিতে ছোট্ট একটি চাকরি করেন, মা গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। এমন একটি পরিবার থেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে প্রথম হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পাবনার মিশোরী মুনমুন।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় চার হাজার ৩৫০ জন ভর্তিচ্ছু নির্বাচিতের মধ্যে সবাইকে টপকে মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের এ শিক্ষার্থী। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় মিশোরী পেয়েছেন ৮৭ দশমিক ২৫। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ২৮৭.২৫। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে শিক্ষক, বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন সবার প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। গত ২ এপ্রিল তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
মুনমুনদের বাড়ি পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লার নারায়ণপুরে। তাঁর বাবা মো. আব্দুল কাইয়ুম স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজে প্রোডাকশান হেল্পার পদে কাজ করেন। মা মুসলিমা খাতুন গৃহিণী। মুনমুনের বড় বোন চিকিৎসক। তিনি চুয়াডাঙ্গায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মেজো বোন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে রসায়ন বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষে পড়ছেন।
পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লার নারায়ণপুর এলাকার ইসামতি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে একাডেমিক পড়ালেখার হাতে খড়ি মিশোরী মুনমুনের। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে তৃতীয় শ্রেণী থেকে এসএসসি পর্যন্ত পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। সেখান থেকে ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি এবং ২০২০ সালে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন মিশোরী মুনমুন।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় আপনার অনুভূতি জানতে চাইলে মুনমুন বলেন, এটি আসলে বলে বোঝানোর মতো না। যখন খবরটি পেলাম সেই মুহূর্তটা একেবারেই অন্যরকম অনুভূতি জোগায়। সব থেকে যে বিষয়টি আমার শিহরণ দিয়েছে সেটি হচ্ছে, ওই মুহূর্তে আমার পরিবারের সবাই এক সাথে কেঁদে দিয়েছে। ওই মুহূর্তটা আমার চোখের সামনে সবসময় ভেসে থাকে। আমি, আমার পরিবার, শিক্ষক, প্রতিবেশী স্বজনসহ সবাই অনেক খুশি।
সফলতার পেছনে কার অবদান বেশি এর জবাবে মুনমুন বলেন, অবদানের ক্ষেত্রে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় এমন ক্রমানুসরে বলা যাবে না। সবাই আমার জীবনে অবদান রেখেছেন। তবে আমার অন্যতম অনুপ্রেরণা মা–বাবা। সর্বক্ষণ তাঁরা আমার খেয়াল রেখেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। এ ছাড়া আমার কলেজের শিক্ষক, গৃহশিক্ষকসহ সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন, সাহস দিয়েছেন। এটাই অনুপ্রেরণা ছিল।
বলতে গেলে ছোট বেলা থেকে সবারই স্বপ্ন থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট একটি বড় স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে আমার শিক্ষকরাই আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। তারাই আমাকে বারবার উৎসাহিত করেছেন। তারা সব সময় আমাকে বলতেন, তুমি অবশ্যই পারবে। ফলে পরিশ্রম করার আকাঙ্ক্খা সেখান থেকেই আমার মাঝে তৈরি হয়েছে। বলতে গেলে সবাই আমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দেশে জন্মেছি সে জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আর সবই আল্লাহর রহমত। পুরোটাই আল্লাহর অনুগ্রহ।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে মুনমুন জানান, ইন্টারমিডিয়েটে যখন পড়ি মূলত তখন থেকেই শিক্ষকরা আমাকে মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করতেন। তখন থেকেই মূল বইটা বুঝে পড়ার প্রতি লক্ষ্য নির্ধারণ করি। কারণ এইচএসসিতে বেইজ ভালো না থাকলে পরবর্তীতে ভর্তি প্রস্তুতির সময় অনেক বেশি খাটনি করতে হয়। ফলে ইন্টারমিডিয়েট থেকে একটু একটু করে প্রস্তুতি নিলে ভর্তি প্রস্তুতির সময় কিছুটা কষ্ট কমে যায়। শিক্ষকসহ, অন্যান্য যারা সিনিয়র রয়েছেন তাদের কাছ থেকে সাজেশনের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়েছি। মূল বইটা ভালো করে পড়েছি, এর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্নব্যাংক সমাধান করেছি। প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করার সময় নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় এই ভেবে যে, এই ধরনের প্রশ্নগুলো আসলে অবশ্যই আমি পারবো।
লেখালেখির পাশাপাশি বই পড়তে মুনমুনের ভালো লাগে। মূলত ইসলামি বই পড়তেই বেশী ভালো লাগে।
Discussion about this post