বিশেষ প্রতিবেদক
টাঙ্গাইলের সখিপুরের কৃতী সন্তান তানভীন আহমেদ এবার ২০২০-২১ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন । পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৮৭ নম্বর। এসএসসি ও এইচএসসিতে ২৮৭ স্কোরধারী এ কৃতী শিক্ষার্থী ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। তাঁর এ কৃতিত্বে সখিপুরজুড়ে চলছে খুশির আমেজ। অসাধারণ ফলাফল টাঙ্গাইলের পাহাড় কাঞ্চনপুরের ঐতিহ্যবাহী বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজকে সারাদেশে আরও একবার আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
টাঙ্গাইল জেলার সখিপুরে নলুয়ার আলারিপাড়াতেই তানভীনের বেড়ে উঠা ।তার বাবা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট। পরিবারের মোট সদস্য পাঁচজন। দুই ভাই, এক বোন ও বাবা-মা। তানভীন সবার বড়, ছোট ভাই বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীতে পড়ে এবং ছোট বোন পড়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ।
এইবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশে দ্বিতীয় হওয়ায় তানভীনের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম বা দ্বিতীয় হবো এমন ভাবনা কারো থাকে না। নির্বাচিত হওয়া এবং পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারাই মূল লক্ষ্য থাকে। রাতে ফলাফল দেখে আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমার লক্ষ্য ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ডিএমসি) চান্স পাওয়া। যখন রেজাল্ট দেখলাম ডিএমসি এবং মেধা তলিকায় দ্বিতীয় তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। শুধুমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমে এ অবস্থায় যাওয়া সম্ভব না, সবটাই আল্লাহর অশেষ রহমত।
অসাধারণ এই ফলাফলে তার পরিবারের অভিব্যক্তি কী ছিল এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আব্বু-আম্মুর চোখে পানি চলে এসেছিল। তাঁদের আশা ছিল, এত পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি হয়তো ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাবো। কিন্তু ঢামেকে মেধা তালিকায় অবস্থান দেখে তারা অবাক হয়েছেন। আমি মফস্বলে বড় হয়েছি। আমরা শহরাঞ্চলেও থাকি না যে আমাদের আশার পরিমাণটা এত উচ্চ হবে। আমার ফলাফল দেখে তাঁরা খুবই খুশি হয়েছিল।
প্রস্তুতির বিষয়ে তানভীনের স্পষ্ট উত্তর, আমি চেষ্টা করেছি আমার সময়টা ব্লক করতে। আমি যদি অন্য কোনো কাজে সময় দেই, তাহলে আমি অবশ্যই পিছিয়ে যাবো। আমার সময় যেনো নষ্ট না হয়, সেদিকে সব সময় সতর্ক থেকেছি। এ বছর পরীক্ষার্থী ও প্রতিযোগিতা দুটিই বেশি ছিল। তাদের থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকার চেষ্টা করেছি। আমি ডায়েরিতে সময় ভাগ করে রাখতাম এবং সেই অনুযায়ী পড়াশোনা করতাম। কোচিং থেকে যা পড়া দিতো সে অনুযায়ী নিয়মিত পড়াশোনা করতাম। এভাবে নিয়মিত অধ্যয়ন করেছি। পরীক্ষার সময় যতো এগিয়ে এসেছে আমি ততো পড়াশোনার সময়টা বাড়ানোর চেষ্টা করেছি।আর আমার পড়াশোনায় সব থেকে বেশি সহযোগিতা করেছে নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াত। এতে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেয়েছি, পাশাপাশি সময়কে সুন্দরভাবে ভাগ করতে সক্ষম হয়েছি।
এছাড়া আমার মা-বাবা এবং ভাইবোন আমাকে সাহায্য করেছেন, বিশেষত আমার ভাই। কলেজের স্যাররা সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তারা আল্লাহর উপর ভরসা ও পরিশ্রম করে যেতে বলেছেন। এছাড়া কোচিংয়ের ভাইয়েরা যেহেতু অভিজ্ঞ। তাঁরা যেহেতু অতীতে এ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন, তারা জানেন কী করতে হবে। তারা দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তারাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
“মেডিকেলে পড়া আমার লক্ষ্যই ছিল না। আমার লক্ষ্য ছিল পাইলট হওয়া, পরে তা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্থানান্তরিত হয়। তবে প্রথম থেকেই আম্মুর ইচ্ছে আমি মেডিকেলে পড়বো, চিকিৎসক হবো। আমাকে চিকিৎসক হিসেবে দেখাটাই আম্মুর স্বপ্ন ছিল। আম্মুর ইচ্ছায় আমার ইচ্ছেতে পরিণত হলো।তাই আম্মুই আমার অনুপ্রেরণা ”।
পেশাগত জীবন নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে তানভীন জানায় ,সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার সিদ্ধান্তগুলো অনেক বেশি পরিবর্তন হয়েছে। আমার আব্বুর হার্টে সমস্যা রয়েছে, তাই এখন মনে হচ্ছে আমি কার্ডিওলজিস্ট হবো। হয়তো ভবিষ্যতে অন্য কোনো বিভাগও ভালো লাগতে পারে। স্বপ্নটা আসলে বিস্তৃত। মেডিকেলে ভবিষ্যত লক্ষ্য এখনও স্থির করতে পারিনি, নেওয়া হয়নি নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা। আব্বুর অসুস্থতার জন্য কার্ডিওলজির উপর টান রয়েছে। তবে সবকিছু প্ল্যান অনুযায়ী হয় না। আল্লাহই সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।
তানভীনের সখ হলো ক্রিকেট খেলা । অবসর এবং সখ বলতে সে ক্রিকেটকেই বুঝে। ক্রিকেট খেলতে প্রচণ্ড রকম ভালবাসে সে। একাডেমিক পড়াশোনা করলেও গল্প বা উপন্যাস খুবই কম পড়া হয়। গত কয়েক মাসে মেডিকেল প্রস্তুতির জন্য তা একদম হয়ে উঠেনি।
Discussion about this post