এম, সারওয়ার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে শুরু হলো ‘ঘরে বসে শিখি’ কর্মসূচি। করোনার প্রকোপে চলমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধকালীন সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (প্রাক প্রাথমিক-৫ম শ্রেণি) শিক্ষার্থীদের জন্য ‘সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন’-এ ৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে বিষয়ভিত্তিক ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষক বাড়ির কাজ দেবেন। শিক্ষার্থীরা স্কুল খোলার পর বাড়ির কাজ জমা দেবে। প্রতিদিন বিকাল ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত প্রতি বিষয়ে ২০ মিনিটের ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি শ্রেণির দুটি ক্লাস প্রচারিত হবে।
এরপূর্বে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য গত ২৯ মার্চ রোববার থেকে সংসদ টিভিতে শুরু হয় ডিজিটাল পাঠদান। ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ নামের এই কর্মসূচী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে।পড়াবিমুখ ইতস্তত কিশোর কিশোরীরা ফিরে যায় পড়ার টবিলে।এর রেশ কাটতে না কাটতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১০০ জন ছাত্রছাত্রীসহ প্রাথমিক স্তরের কোটি কোটি শিশুর জন্য ‘ঘরে বসে শিখি’ নিয়ে এলো এক আনন্দময় শিক্ষার আলো।
প্রথম দিনের ৭ এপ্রিলের রুটিন অনুযায়ী প্রাক প্রাথমিক: ক্রিয়াকলাপভিত্তিক আনন্দদায়ক শিখন (দুপুর ২:০০) প্রথম শ্রেণি: বাংলা (দুপুর ২:২০) দ্বিতীয় শ্রেণি: ইংরেজি (দুপুর ২:৪০) তৃতীয় শ্রেণি: বিজ্ঞান (দুপুর ৩:০০) চতুর্থ শ্রেণি: গণিত (বিকাল ৩:২০) পঞ্চম শ্রেণি: বিজ্ঞান (বিকাল ৩:৪০) ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সেরা শিক্ষকদের
ডিজিটাল পাঠদান শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়কেই মুগ্ধ করেছে।কেবল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় সকল মাধ্যমের প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখন সংসদ টিভির দর্শক। অভিভাবিকা রওশন আরা পারভীন বলেন, শিশুদের জন্য এটি দারুণ এক উদ্যোগ।ছুটির উছিলায় কোনমতেই পড়ার টেবিলে বসানো যাচ্ছিলনা বাচ্চাদের।স্কুলের টিচার পড়া না দিলে আর হোমওয়ার্ক না থাকলে এমনিতেই কোন শিশুই পড়তে চায়না।তাই সংসদ টিভির এই স্কুল সব অভিভাবকদের কাছে চরম স্বস্তিদায়ক মনে হয়েছে।
এ প্রসংগে চট্টগ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো এই ‘ঘরে বসে শিখি’ নামক অনুপম কর্মসূচিটি।কবে স্কুল খুলবে?পরীক্ষা কখন হবে? এমন হাজারো প্রশ্নের জবাবে জর্জরিত হচ্ছিলাম আমরা প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ।এখন অভিভাবকগণ অনেকটা আশ্বস্ত হবেন আশা করি।শিশুরাও স্কুলে আসতে না পারার অবসাদ কাটিয়ে উঠবে।অভিভাবকগণের প্রতি আহ্বান থাকলো যাতে তাঁরা সন্তানদের নিয়মিত ক্লাস দেখার ব্যবস্থা করে দেন এবং বাড়ীর কাজ গুলো করিয়ে রাখেন। স্কুল খোলার পর শিক্ষকদের কাছে তা জমা দিতে হবে এবং আমরা তা পরীক্ষা করবো।
৩য় শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা পড়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে।বিজ্ঞান পাঠে স্লাইডের প্রদর্শন ও বাস্তব ছবির ব্যবহারে মাটি বিষয়ক পাঠটি তার কাছে খুবই সহজবোধ্য হয়ে উঠেছে!তার ভাষায়- ম্যাম দারুণ ভাবে বুঝিয়েছেন্, খুব সুন্দর করে কথা বলেছেন।প্রতিদিন কি এমন ক্লাস হবে? আগ্রহমাখা প্রশ্ন বর্ষার। প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া রাইসার নানু অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা রেজওয়ান আরা বেগম ক্লাসের মান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, রাজধানীর নামকরা একটি কিন্ডারগার্টেনে আমার নাতনি পড়ে। কিন্ত এখানে ক্লাস নেয়া হয় গতানুগতিক পদ্ধতিতে।সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ডিজিটাল বোর্ডে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছেন,ব্যবহার করছেন বাস্তব সব শিক্ষাউপকরণ!সংসদ টিভি না দেখলে এটা বিশ্বাসই করতামনা।এ ধরণের ক্লাস নিয়মিত দেখালে সরকারী প্রাথমিকের ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি প্রাথমিকের সব শিশুরাই উপকৃত হবে।
অবশ্য কিছু অভিযো্গও আছে।বেশ কিছু অভিভাবক বলেছেন, ইংরেজী ক্লাসগুলো সম্পূর্ণ ইংরেজী মাধ্যমে পড়ানো হচ্ছে, যার ফলে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এটি বুঝতে পারবেনা।এ বিষয়ে ইংরেজীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা ইয়াসমিন জানান, এটা ইংলিশ মিডিয়াম এর ক্লাস নয়। বরং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কারিকুলাম এবং পাঠদান পদ্ধতি অনুসরণ করেই ইংরেজি মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।প্রাথমিকে ইংরেজী বিষয়ে পাঠদানের এটাই সঠিক পদ্ধতি।
লক্ষীপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল ইসলাম পাঠদানের মান আরও উন্নতকরণের ইংগিত দিয়ে বলেন,আপনাকে এটা মনে রাখতে হবে যে প্রচুর শিক্ষিত অভিভাবক, বিজ্ঞজনরা এটা দেখছেন। যোগ্যতা সম্পন্ন হাজার হাজার শিক্ষক আছে যাদের কাজে লাগিয়ে আরও উন্নত পাঠদানের ব্যবস্থা করা যায়, যাতে প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থানটা সমুন্নত হয়।
তবে প্রচুর অভিভাবক ফেসবুকে প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়েছেন প্রথমদিনের পাঠদানকারী শিক্ষকদের।বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির বাংলা বর্ণমালা ও শব্দ গঠন ক্লাসের শিক্ষিকা দেবযানী দত্ত এমনভাবে পাঠ উপস্থাপন করেছেন যেন ছাত্রছাত্রীরা তাঁর সামনে বসে আছে।এতে শিশুরা তাঁর প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ঘরে বসেই দিয়েছে।শিশুরা এতে বেশ আনন্দ পেয়েছে।
তৃতীয় শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদানকারী শিক্ষিকা খায়রুন নাহার লিপির স্পষ্ট উচ্চারণে সাবলীল পাঠদান , কার্যকর শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার পাঠদানকে সার্থক করে তুলেছে।জানা গেছে তিনি ঢাকা বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা এবং প্রশিক্ষক।
সবশেষে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তাঁর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন এভাবে- ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে একশ্রেণির মানুষ একসময় ঠাট্টা করতো।আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চরম দূর্যোগে ঘরে ঘরে ডিজিটাল স্কুল স্থাপন করে প্রমাণ করে দিয়েছেন অচিরেই উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছি আমরা।
উল্লেখ্য, সংসদ টিভিতে প্রচারিত ‘ঘরে বসে শিখি’ কর্মসূচির সকল ক্লাস সংসদ টিভির পাশাপাশি শিক্ষার আলো পত্রিকার ফেসবুক পেইজ (shiksharalo.net)-এ সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।পরবর্তীতে সম্পূর্ণ ক্লাসের ভিডিও পাওয়া যাবে পত্রিকায় এবং একই পেইজে।
Discussion about this post