নিজস্ব প্রতিবেদক
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে সমালোচনার মুখে ক্ষমা ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ।
আজ সোমবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দুঃখ প্রকাশ করেন।
নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে আইন বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় মুজিবনগর সরকার গঠনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা, ১০ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন এ সরকারের কর্মপরিকল্পনা এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করি। আলোচনাকালে মুজিবনগর সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তা উল্লেখ করি এবং মুজিবনগর সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
তিনি বলেন, আমার বক্তব্যের এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কুলাঙ্গার এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তীকালে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী বঙ্গবন্ধুর খুনী খন্দকার মোস্তাক আহমেদের প্রতি আমি আমার ব্যক্তিগত ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করি। আমি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব প্রদানকালে সর্বদা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে নিকট অতীতে সুনামগঞ্জের শাল্লা, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী চক্র ও ঘোলাজলে মাছ শিকারি তথাকথিত রাজনৈতিক অপশক্তির অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিসহ জনমত গঠনে আমার ভূমিকা গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়েছে।
নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক দাবি করে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আমি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নীল দল থেকে প্রথমবারের মত লেকচারার ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হই।এরপর থেকে অদ্যাবধি আমি বহুবার নীল দল থেকে মনোনীত হয়ে সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব প্রদানকালে সর্বদা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছি।”
তিনি আরো বলেন, গতকালের আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে আমি যদি অজ্ঞতাবশত কোন শব্দ/বাক্য উচ্চারণ করে থাকি তা নিতান্তই আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। একই সঙ্গে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে যেন কোনো ধরনের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী সকলের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রোববার টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ তার বক্তব্যে মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
একাত্তরে মুজিবনগর সরকার গঠনের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে ছিলেন খন্দকার মোশতাক। তবে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার কথা বলে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
রোববারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ তাৎক্ষণিকভাবে ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান এবং তা এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান। পরে উপাচার্য আখতারুজ্জামান ওই বক্তব্যের অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করেন।
Discussion about this post