এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা ২০২০ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সোমবার (২ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব স্বাক্ষরিত এ নীতিমালা প্রকাশিত হয়।
এ নীতিমালা ‘মেডিকেল/ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা-২০২০’ নামে অভিহিত হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমএন্ডডিসি) প্রণীত এই নীতিমালা দেশের সব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস-বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এসব কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা
আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। কেবল সরকার কর্তৃক বিদেশিদের সংরক্ষিত আসনের জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৯ পয়েন্ট হতে হবে। সব আদিবাসী ও পার্বত্য জেলার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা দুটিতে মোট জিপিএ কমপক্ষে ৮ পয়েন্ট হতে হবে। তবে এককভাবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ পয়েন্টের কম গ্রহণযোগ্য নয়।
এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় অবশ্যই ফিজিক্স (পদার্থ বিজ্ঞান), কেমিস্ট্রি (রসায়ন) ও বায়োলজি (জীব বিজ্ঞান) থাকতে হবে। বায়োলজিতে ন্যূনতম জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ পয়েন্ট থাকতে হবে।
যে শিক্ষাবর্ষের জন্য মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করবে সেই ইংরেজি বর্ষ বা পূর্ববর্তী ইংরেজি বর্ষে প্রার্থীকে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে তার এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাসের পূর্ববর্তী দুই ইংরেজি বছরের মধ্যে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস করতে হবে।
‘ও’ লেভেলের জন্য তিনটি বিষয় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি থাকতে হবে এবং সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত পাঁচ বিষয় এবং অতিরিক্ত বিষয়ে জিপিএ ২ পয়েন্টের অতিরিক্ত প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে জিপিএ নির্ধারণ করা হবে। সর্বোচ্চ জিপিএ ৫ পয়েন্ট এর বেশি হবে না । ‘এ’ লেভেলের জন্য স্থানীয় তিনটি বিষয় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি থাকতে হবে। কিন্তু জিপিএ নির্ধারণের জন্য সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত যেকোনো তিনটি বিষয় বিবেচনায় আনা হবে। অতিরিক্ত বিষয়ে জিপিএ ২ পয়েন্টের অতিরিক্ত প্রাপ্ত নম্বর যোগে করে জিপিএ নির্ধারণ করা হবে। তবে সর্বোচ্চ জিপিএ ৫ পয়েন্ট এর বেশি হবে না।
প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া
এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ মোট ২০০ নম্বর হিসাবে নির্ধারণ করা হবে। এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ এবং ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। কোনো শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস/বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি পরীক্ষায় সদ্য উত্তীর্ণদের মোট (Aggregated) নম্বর (এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ এর ১৫ গুণ + এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ এর ২৫ গুণ + ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর)-এর ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। পূর্ববর্তী বৎসরের এইচএসসি পাস প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৫ নম্বর এবং পূর্ববর্তী বছরের সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৭ দশমিক ৫ নম্বর কেটে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।
সরকারি ও বেসরকারি সব মেডিকেল কলেজের জন্য একইসঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মেডিকেল কলেজে ভর্তির পর সরকারি ও বেসরকারি সব ডেন্টাল কলেজ এবং ডেন্টাল ইউনিটের জন্য একই সঙ্গে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করা ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হবে।
লিখিত ভর্তি পরীক্ষা ১০০টি প্রশ্নের প্রতিটি এক নম্বর করে মোট (এইচএসসি বা সমমান সিলেবাস অনুযায়ী) ১০০ নম্বরের বিষয়ভিত্তিক বিভাজন পদার্থবিদ্যা ২০, রসায়নবিদ্যা ২৫, জীববিজ্ঞান ৩০, ইংরেজি ১৫ ও সাধারণজ্ঞান (বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ) ১০ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি ভুল উত্তর প্রদানের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হবে। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের কম পেলে অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
মেধাতালিকা ও প্রার্থী নির্বাচন
অনুচ্ছেদ ২.১ অনুযায়ী শুধু ভর্তি (লিখিত) পরীক্ষায় কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের জাতীয় মেধাতালিকা (বিশেষ কোটা যদি থাকে উল্লেখসহ) প্রকাশ করা হবে।
সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতি ও পার্বত্য অঞ্চলের অ-উপজাতীয়দের জন্য নির্ধারিত আসন বাদে অবশিষ্ট আসনে জাতীয় মেধায় ৮০ শতাংশ এবং জেলা কোটায় (সংশ্লিষ্ট জেলার প্রার্থীদের মেধা অনুসারে) ২০ শতাংশ প্রার্থী নিবাচন করা হবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ/ডেন্টাল কলেজগুলোতে প্রাপ্ত আবেদনকারীদের জাতীয় মেধাতালিকার ক্রম অনুযায়ী বিন্যাস করে একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করবে। এ তালিকা থেকে ভর্তির জন্য শিডিউল প্রস্তুত করবে। এ তালিকা ও শিডিউল সংশ্লিষ্ট কলেজের ওয়েবসাইট, জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও দৃশ্যমান স্থানে প্রকাশ করবে। প্রকাশের দিন থেকে ন্যূনতম পাঁচ কর্মদিবসের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পরে শূন্য আসনে একইভাবে ন্যূনতম তিন কর্মদিবসের জন্য ভর্তি কার্যক্রম উন্মুক্ত থাকবে। কোনোক্রমেই মেধাক্রমের ব্যতিক্রম করা যাবে না।
কলেজ কর্তৃপক্ষ শিডিউল অনুযায়ী ভর্তির অগ্রগতি তালিকাসহ পরিচালক (চিশিজ), স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর, মহাখালী, ঢাকাকে দফায় দফায় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান এবং সন্তানদের জন্য মোট আসনের ২ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।
Discussion about this post