আজাহার ইসলাম
‘মিথ্যা কথার ব্যবসা করতে আইন পড়? বটতলার উকিল হবা?’ প্রতিনিয়তই এরকম হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হয় আইনের শিক্ষার্থীদের। আইন পড়লেই সাধারণত মানুষ ধারণা করে জজ, ব্যারিস্টার, শিক্ষক কিংবা উকিল। তবে আইন পেশায় রয়েছে সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার। আইন পেশার পাশাপাশি কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের সাথে বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (বিসিএস), সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
‘জুডিশিয়াল সার্ভিস’ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ কেবল আইনের শিক্ষার্থীরাই পেয়ে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, ভূমি অধিদপ্তর, দূতাবাস, আইন কর্মকর্তা, দেশে ও দেশের বাইরে সাইবার ক্রাইম, ইমিগ্রেশন, স্পোর্টস ও মিডিয়ার আইনজীবী হিসেবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। চাইলে চলচ্চিত্রশিল্পে আইন পরামর্শক বা কোর্টরুম বিষয়ক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকারও হতে পারেন। আইনের বিষয়গুলো গল্পচ্ছলে লিখে হতে পারেন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জন গ্রিশামের মতো লেখকও।
বাংলাদেশে অনেক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আছে। তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা ব্যয়বহুল। তাই শিক্ষার্থীরা ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেয় পাবলিকে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে। স্বাধীনতাত্তোর দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের বিস্তর সুযোগ। একমাত্র এখানেই রয়েছে আইন অনুষদভুক্ত তিনটি বিভাগ রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গন, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ডিবেটিংসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে এই অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষে ‘আল কানুন ওয়াশ শারিয়াহ’ নামে এখানে চালু হয় আইন বিভাগ। যার বর্তমান নাম ‘আইন বিভাগ’। বিচারপতি হাফিজুর রহমান, ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল মাসুদ রুমী, এ বিএম রফেল, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের ফাহিমা খাতুনসহ বিভিন্ন স্থানে সনামধন্য আইনজীবী, জজ, জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটস, ফুটবলাররা বিভাগের নাম উজ্জ্বল করেই চলেছেন। বর্তমানে বিভাগটিতে ১৭ জন পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘আল-ফিকহ্’ নামে আরেকটি বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। বিভাগটির বর্তমান নাম ‘আল ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ’। প্রচলিত আইনের পাশাপাশি ইসলামিক আইনগুলো গুরুত্বসহকারে পড়ানো হয় বিভাগটিতে। ইসলামী আইনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় (মালয়েশিয়া), আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় (মিসর), মদিনা বিশ^বিদ্যালয় (সৌদিআরব) এর সিলেবাসভুক্ত বই এবং প্রচলিত আইনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসভুক্ত বই শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে রাখা হয়েছে।
এই বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এখানকার শিক্ষার্থীরা এলএল.বি ও এলএল.এমের সমান ডিগ্রি পেয়ে থাকে। এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইসলামিক স্কলার, ফকিহ ও ¯œাতক পর্যায়ের মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে যোগদান করতে পারে। এছাড়া বিসিএস, বিজেএসসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ত্র সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। তবে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষায় দক্ষতা থাকা জরুরি। বর্তমানে ৭ জন পিএইচডি ডিগ্রিধারীসহ মোট ৮ জন শিক্ষক পাঠদান করে যাচ্ছেন এই বিভাগে।
সর্বশেষ এই অনুষদের অধীনে ২০১৭ সালের তিন অক্টোবর যাত্রা করে ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। ২০১৭-১৮ শিক্ষবর্ষ থেকে চারজন সুদক্ষ শিক্ষক ও একটি শ্রেণিকক্ষে তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। আইনের সকল বিষয়ের পাশাপাশি ভূমি আইন বিষয়ক অতিরিক্ত আইন যুক্ত হয়েছে বিভাগটির পাঠ্যসূচিতে। ফলে ক্যারিয়ারে আইনের সকল ক্ষেত্রের পাশাপাশি ভূমি মন্ত্রনালয়ে ও ভূমি সংক্রান্ত মামলার জট নিরসনে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হবে।
এ বিষয়ে আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. হালিমা খাতুন বলেন, ‘এডভোকেট, জজ হওয়াসহ দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনের শিক্ষার্থীরা অবদান রাখছে। আইন বিষয়ে দেশে ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ আগের তুলনায় বেড়েছে। আমাদের দেশে একমাত্র ইবিতেই আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে কিছু স্পোশাল কোর্স পড়ানো হয়। বিভাগের শুরুতে শুধু আরবি ব্যকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতো।’
তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অন্যান্য লিগ্যাল বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি করানো হয়। তবে ওই বিভাগের শিক্ষকদের কাছে শুনেছি, যারা আরবি ব্যাকগ্রাউন্ডের না তাদের জন্য বেশ অসুবিধা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে এই বিভাগে ভর্তি হওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এছাড়া ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা আইনের সকল সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি ভূমি বিষয়ক সুযোগগুলোতে অগ্রাধিকার পাবে। আইন অনুষদের অন্য দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়ে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্কোপ বেশি বলে আমি মনে করি।’
Discussion about this post