রবিনুর রহমান / শিশির আসাদ
এই সর্বশেষ মুহূর্তে এসে অনেকেই বুঝতে পারে না কিভাবে পড়বে।সবাই একটা কমন প্রশ্ন করছো,”শেষ ১০ দিন কিভাবে প্রস্তুতি নিবো??? ছোট অভিজ্ঞতা থেকেই কিছু বলতে চাই আশা করি কিছুটা উপকার হতে পারে।
সর্ব প্রথমেই যেটা দরকার সেটা হল
যেমন পরিস্থিতিই হো আর যেমন প্রিপারেশনই হোক “মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে”
যেটা সবথেকে বেশি প্রয়োজন পরীক্ষা হলের ১ঘন্টা সময়ে।তাই এই সময়ে বাড়তি চাপ নেওয়া যাবে না।আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে বেশি বেশি। ইনশাআল্লাহ তিনি ভালো কিছু রেখেছেন।তিনি কাউকে নিরাশ করেন না।
💙 ব্রেনকে ঠান্ডা রাখতে হবে।প্রতিবছর এই কারণে অনেক শিক্ষার্থীর চান্স মিস হয়ে যায়। তাই মাথা গরম করা যাবে না।
💓এই সময়টাতে সবাই ” হতাশ”হচ্ছো,কেউ এটা বাদ তো ওটা বাদ রয়েছে ব্লা ব্লা।সো,
কোনভাবেই হতাশ হওয়া যাবে না। কনফিডেন্স লেভেল যেন কোনভাবেই না কমে যায়। হতাশা আসলে এ সময় পড়তে ইচ্ছা করবে না।
💝অনেকে ফুল সিলেবাস কম্প্লিট করার চিন্তা করছো,নতুন করে পড়তে চাচ্ছো।আমি বলব গভীরে পড়ার দরকার নেই এখন। প্রতি 1 দিনে একটি করে বই শেষ করতে হবে। বুঝতেই পারছ কত দ্রুত তোমাকে পড়তে হবে।শুধু বইয়ের দাগানো লাইন এবং ইতোপূর্বে যেখান থেকে তুমি ভুল করেছো সেইগুলো একবার করে চোখ বুলিয়ে দাও। অতিরিক্ত শীট গাইড নোট কিছুই পড়া দরকার নাই।
যদি সম্ভব হয় তাহলে
প্রতিটা সাবজেক্ট শেষ করে টা মডেল টেস্ট এর পরীক্ষা দিও বা কোচিং এর প্রশ্ন গুলো একবার চোখ বুলিয়ে যেও।যতটুকু পারো, এতে তোমার ভুল গুলো আবার সংশোধন হবে।
💘জিকে+ইংরেজি নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন ছিলো,তাদের জন্য বলব
জিকে+ইংরেজির জন্য শেষ সপ্তাহে ৪-৫ দিন রাখতে পারো। আমার কাছে মনে হয় জিকে ইংলিশ শেষ ২ দিনে পড়াই বেটার। কারণ তুমি এখন পড়লে আবার ভুলে যাবে। অতএব শেষ দিকে পড়াই ভালো।
★মুক্তিযুদ্ধ+বঙ্গুবন্ধু রিলেটেড সবকিছু
★ইংরেজি-বিসিএস+মেডি প্রশ্নব্যাংক
এগুলো পড়লেই যথেষ্ট
💖 কঠিন চ্যাপ্টারের গুলো যতটুকু পারো শুধু চোখ বুলিয়ে যাও
★রসায়ন(১মপত্র)-১,৩,৫ এগুলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ
★রসায়ন(২য় পত্র)-২,৫,১
★বোটানি-৩,৭,৮,৫ এগুলা গুরুত্বপূর্ণ
★প্রণিবিদ্যা-৮,২,১১,৩
◼️পরীক্ষার আগের রাতে রিলাক্স থাকতে হবে,রিলাক্স মুডে নিজেকে রাখতে হবে।পরীক্ষার আগের রাতে বেশি পড়াশোনা করবে না। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করবে।জিকে , ইংলিশ ,কিছু ছক,পার্থক্য, বিভিন্ন ভ্যালুগুলো দেখে যাবা তাহলেই হবে।
শেষ মূহুর্তের জীববিজ্ঞান প্রস্তুতি –
মেডিকেল বা ডেন্টালে চান্স পাওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে জীববিজ্ঞানের প্রস্তুতির উপর । মোট নম্বরের ৩০ শতাংশ বরাদ্দ থাকে জীববিজ্ঞানের জন্য ৷
৩০ এর মধ্যে ১৭-১৮ আসে হচ্ছে দ্বিতীয় পত্র থেকে । বাদ বাকি প্রথম পত্র থেকে।
বিগত কয়েক বছরের দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন এনালাইসিস করলে দেখা যায় মানব শারীরতত্ত্ব অংশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসে ( কারণ সামনে তোমাদেরকে এসব নিয়েই বিস্তৃত পড়ালেখা করা লাগবে)।
এই অংশের প্রত্যেকটা অধ্যায় গুরুত্ব সহকারে পড়া লাগবে। দাগানো লাইনগুলোর পাশাপাশি পুরো অধ্যায়টা একবার চোখ বুলানো লাগবে ।
প্রথম অধ্যায়,দ্বিতীয় অধ্যায় এবং শেষ অধ্যায় এগুলা থেকে বিগত বছরগুলোতে খুব কম সময় একটার বেশি প্রশ্ন এসেছিলো । এ অধ্যায়ের জন্য কোচিং থেকে দাগানো তথ্যগুলাই যথেষ্ট ।
****আলীম স্যারের বইয়ের এক্সট্রা ইনফোগুলো ( অধ্যায়ভিত্তিক একসাথে নোট করা থেকে থাকলে ভালো ) অবশ্যই পড়ে নেয়া লাগবে।
***প্রথম পত্রের ক্ষেত্রে আবুল হাসান স্যারের বই ই যথেষ্ট । গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর দাগানো তথ্যের পাশাপাশি কনসেপ্ট ক্লিয়ার থাকা বাঞ্চনীয় ।
***অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নব্যাংক সলভ,সেল্ফ টেস্ট,প্রশ্ন এনালাইসিস আবশ্যক ।
**জটিল কোন ধরণের ছন্দ মনে না রাখাই ভালো । পরে দেখা যাবে ছন্দ মনে রাখার জন্য আরেক ছন্দ লাগবে ।
** কোন টপিকে আটকে গেলে অইটার পিছনে লেগে থেকে সময় খরচ না করাই বেটার এই মুহূর্তে । সময় অল্প ।
পরীক্ষার আগের রাতে বেশি পড়াশোনা করবে না। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করবে।জিকে , ইংলিশ ,কিছু ছক,পার্থক্য, বিভিন্ন ভ্যালুগুলো দেখে যাবা।
পরীক্ষার হলে করণীয়
আমি আজ তোমাদের মাঝে আলোচনা করবো কিভাবে সেই এক ঘন্টায় নিজের নেওয়া এতো মাসের প্রিপারেশনের শতভাগ কাজে লাগাবে।
#পরীক্ষার সময়বন্টন:
প্রথমে প্রশ্ন পেয়ে সহজগুলো দাগানো শুরু করবে।প্রথম ৩০-৩৫মিনিটে ৬০-৬৫দাগানোর চেষ্টা করবে।এগুলা খুব সিউরলি দাগাবে।মনে রাখবে সহজ প্রশ্ন ভুল করলে চান্স মিস হয়ে যেতে পারে কিন্তু একটা কঠিন প্রশ্ন না পারলে কখনো চান্স মিস হবে না।পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ মিনিট ম্যাথ প্রশ্ন গুলো দাগানোর চেষ্টা করবে। শেষ ৫ থেকে ৭মিনিট খুব বেশি দাগানোর দরকার নাই। কারন তুমি এই সময় যত দাগাবে ততো ভুল হবে। মোটামুটি ৮৫ (৯০+)প্লাস দাগানোর চেষ্টা করবে। প্রশ্ন যদি সহজ হয় তাহলে একটু বেশি দাগাবে আর কঠিন হলে কম দাগাবে।
তবে আমার মনে হচ্ছে এবার প্রশ্ন কঠিন হতে পারে । এতে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই প্রশ্ন কঠিন হলে মার্ক কম উঠবে সহজ হলে মার্ক বেশি উঠবে।তবে প্রশ্ন কঠিন হলে বেশি দাগালে বেশি নেগেটিভ হয় এজন্য কম দাগাবে।
#আমার সেকেন্ড টাইমার সকল বন্ধুদের জন্য একটা উপদেশ, খুবই ঠাণ্ডা মাথায় প্রথমে ৫ টা সিওর দাগানোর চেষ্টা করবে। এরপরে আরো তোমাকে কমপক্ষে ১০ মার্ক তুলতে হবে। কারণ ৭৫ কাট মার্ক ধরা হয় তোমাদের জন্য। প্রশ্ন যেমনই হোক না কেন ৬০ থেকে ৬৫ টা খুবই সহজ আসে। এরপরে কিছু আসে অনুধাবনমূলক।
মাথা ঠান্ডা রাখাঃ
পরীক্ষার সময় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে মাথা ঠান্ডা রাখা। মাথা ঠান্ডা রাখতে পারা মানে চান্স ইন শা আল্লাহ ৬০%নিশ্চিত। কারন মেডিকেল এডমিশন টেস্টের প্রশ্ন আহামরি কঠিন আসে না। মাথা ঠান্ডা রেখে প্রশ্ন বুঝে উত্তর করলে অনায়সে ৬০%এর বেশি কারেক্ট করতে পারবে যে কেউ। মাথা ঠান্ডা রাখতে না পারলে তোমার এতো মাসের পরিশ্রম ও কাজে দিবে না।
নেগেটিভ মার্ক কমিয়ে আনা এবং আত্মবিশ্বাসঃ
প্রশ্ন পাওয়ার সাথে সাথেই তোমার বুঝতে হবে প্রশ্নটা গতবারের তুলনায় সোজা হয়েছে নাকি কঠিন। এই জিনিসটা বুঝার জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। অনেকে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভাবে যে প্রশ্নটা তার কাছেই কঠিন লাগতেছে। সে বুঝতেই পারে না প্রশ্নটা সবার জন্যই কঠিন। যার ফলে সে নার্ভাস হয়ে যায়।কনফিডেন্স লেভেল এমন রাখতে হবে যে যেইটা তুমি পারতেছো না সেইটা হলের কেউই পারতেছে না।
এই কনফিডেন্স রাখতে পারলে ভুল দাগানোও কমে আসবে। আমি সবাইকে বলবো ৫০%হতে পারে এমন অপশন না দাগানোই ভালো। কারন পরীক্ষা হলে মনে হয় সব উত্তরই সঠিক। ৭০% সঠিক মনে হলে এমন অপশন দাগাবে, তা ছাড়া ছেড়ে দেও। মনে রাখবে প্রশ্ন কঠিন হলে যতো কম নেগেটিভ মার্ক হবে ততোই তোমার চান্স পাওয়া নিশ্চিত হবে।
“নয়” যুক্ত প্রশ্ন আগে থাকতে চিহ্নিত করে নাওঃ
অনেক প্রশ্ন আসে যেইখানে শেষে “নয়” কথাটি যুক্ত থাকে। যেমন নিচের কোনটি পায়ের অস্থি নয়।আর পরীক্ষার সময় যেহেতু শিক্ষার্থীরা তাড়াহুড়ো আর চাপে থাকে সেহেতু এই “নয়” শব্দটি তারা খেয়াল করে না।আর এমন ভুলই হয় অহরহ।
ভালো মতো খাতায় ইনফরমেশন ভরাট করাঃ
যদি তোমার রোল রেজিস্ট্রেশন ভুল হয় তাহলে সরি আমার বলা উপরের কোন উপদেশই কাজে দিবে না।
এতদিন যা ইনপুট করছো এখন অইগুলাই বারবার ঝালিয়ে নেয়ার সময় । রিভিশন দাও,সেল্ফ টেস্ট নাও,নিজেকে যাচাই করো। ভুলগুলো শুধরাও ।সবশেষে সবাই সুস্থ ভাবে,ব্রেন ঠান্ডা রেখে যেন ভালোভাবে পরীক্ষা শেষ করতে পারে এই আশাই ব্যক্ত করি। শুভ কামনা।
Discussion about this post