শিক্ষার আলো ডেস্ক
বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের পরেই অবস্থান রয়েছে চামড়াশিল্পের। দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো বৃদ্ধির লক্ষ্যে চামড়াশিল্পের বিকল্প নেই। ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশে বৃহৎ আকারের চামড়াশিল্পের বিকাশ ঘটে। এর পরে থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ ধরে রেখেছে চামড়াশিল্প। বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত চামড়ার গুণগত মান ভালো হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারেও এর রয়েছে বেশ কদর। এ জন্য চামড়া ও চামড়াশিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী বহু প্রতিষ্ঠান তাদের বিজনেস অপারেশন বাড়াচ্ছে। চামড়াশিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ছোট জুতা ও চামড়াজাত পণ্য তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও জুতার পাশাপাশি নানা ধরনের চামড়াজাত পণ্য দেশে তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্যের রপ্তানি আয়ও দ্রুত বাড়ছে। এই শিল্প দ্রুত সম্প্রসারণের কারণে এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োজন। তাই লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যারা ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্য রয়েছে প্রচুর কাজের সুযোগ।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং কি?
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যকে সংশ্লেষণ, উৎপাদন ও পরিশুদ্ধ করণকে বোঝায়। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস যেমন: ফুটওয়্যার, ব্যাগ, খেলার সামগ্রী, জুতা, মানিব্যাগ, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন বিলাসবহুল পণ্য তৈরি করা হয়। ম্যানুফ্যাকচারিং, ফুটওয়্যার, লেদার প্রোডাক্টস এই ৩টি শাখা হচ্ছে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান শাখা।
পড়াশোনা
লেদার সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে মূলত পড়ানো হয় কাঁচা চামড়া থেকে লেদার তৈরির কলাকৌশল, বিভিন্ন ব্যবহার উপযোগী লেদার উৎপাদন এবং বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্যের ডিজাইন ও নির্মাণকৌশল। এর পাশাপাশি চার বছরের কোর্সে অন্তর্ভুক্ত থাকে বিভিন্ন ভৌত ও ফলিত বিজ্ঞান কোর্স। সঙ্গে মৌলিক প্রকৌশলের বিভিন্ন কোর্স যেমন: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার অ্যান্ড ফান্ডামেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (আইলেট) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ানো হয়। বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে লেদারের পাশাপাশি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং,পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিজাইনিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স ইত্যাদি বিষয়ে একজন লেদার ইঞ্জিনিয়ারের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
কাজের সুযোগ
পোশাকশিল্পের মতোই একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হচ্ছে চামড়াশিল্প। লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১১০টি রপ্তানিমুখী কারখানায় চামড়ার জুতা তৈরি হয়। এর মধ্যে এপেক্স, এফবি, পিকার্ড বাংলাদেশ, জেনিস, আকিজ, আরএমএম বেঙ্গল এবং বে এম্পোরিয়ামের রয়েছে নিজস্ব ট্যানারি ও চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। এর বাইরে শুধু চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে এমন কারখানার সংখ্যা ২০৭টি। এ খাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আছে প্রায় ৮ লাখের বেশি মানুষ। এতে কর্মসংস্থানও বাড়ছে দিন দিন। এখানে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগ আছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেদার, ফুটওয়্যার ও লেদার প্রোডাক্টস প্রতিষ্ঠানে একজন ইঞ্জিনিয়ার বা ফুটওয়্যার ডিজাইনার হিসেবে চাকরি করার। এ ছাড়া সুযোগ রয়েছে বায়িং হাউসে চাকরির। একজন লেদার ইঞ্জিনিয়ার মূলত রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, প্রোডাক্ট ডিজাইনিং, মার্চেন্টাইজিং, প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি পর্যায়ে কাজ করার।
বেসরকারি সেক্টর ছাড়া লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের সুযোগ রয়েছে বিসিএসসহ সরকারি প্রায় সব চাকরির পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে এনএসআই, র্যাব, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, লেদার রিসার্স ইনস্টিটিউট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, ডিটিই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এলএসবিপিসি, এসএমই ফাউন্ডেশন, অর্থ মন্ত্রণালয়াধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ইত্যাদি ক্ষেত্রে চাকরির যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে। সুযোগ রয়েছে উদ্যোক্তা হিসেবের ক্যারিয়ার গড়ার।
আয়-রোজগার
অভিজ্ঞতার ঝুলিই হলো লেদার ইন্ডাস্ট্রিতে উপরে ওঠার সিঁড়ি। এখানে যার যত অভিজ্ঞতা তিনি ততই নিজেকে উপরে নিয়ে যেতে পারবেন। আর বেতন-ভাতাটাও কিন্তু অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে হেঁটে চলে। তার মানে অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়লে বেতনও বাড়বে লেদার ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে ফ্রেশার লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন শুরু হয় ২০-২২ হাজার টাকা থেকে। আর এর উপরের চাকরির কোনো নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই। নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে প্রতিমাসে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা ডিপোজিট হবে স্যালারি একাউন্টে। আর উদ্যোক্তা হিসাবের শুরু করলে ‘স্কাই ইজ লিমিট’।
সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি
সিদ্ধান্তটা হতে হবে নিজের সর্বোচ্চ থেকে। যাতে ফল আর যাই আসুক নিজস্ব ব্যর্থতার প্রসঙ্গটা যেন হয়ে যায় গৌণ একটা বিষয়।
- কঠিন সময়ে নিজের স্মৃতিশক্তিকে বারবার ওলটপালট করে দেখে নেওয়া। কেবল শেষ ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘটনাকেই মনে রাখবেন, সেটা কাম্য নয়। সামগ্রিকভাবে নতুন পরিস্থিতির ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’গুলো খতিয়ে দেখুন।
- আগের একই ধরনের পরিস্থিতিতে অমুক জিনিসটা কাজে দিয়েছিল বলেই যে এবারও সেটাই কাজে লাগবে তার কোনো মানে নেই। অর্থাৎ একই ধরনের প্রোগ্রামে প্রতিবার একই ‘ফেসভ্যালু’ই যে কাজে দেবে তা কিন্তু নাও হতে পারে।
- সব রকম বিকল্পকেই গ্রহণ করা বা মাথায় রাখা দরকার। কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে যথাসম্ভব তথ্য জোগাড় করে ফেলা হবে প্রাথমিক কাজ। তারপর সেগুলোকে একত্রিত করে, নতুন ছাঁচে ফেলার মতো করে সেই পরিস্থিতিতে বসিয়ে বিচার করে ভেবে দেখা বাঞ্ছনীয়। অমুকে ওই কাজটা তমুকভাবে করেছে বলে আমাকেও ওইভাবেই করতে হবে এই সিদ্ধান্ত পরে চূড়ান্ত আক্ষেপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিজেকে ও নিজের পারিপার্শ্বিককে এবং তার প্রাসঙ্গিকতাকে ভুললে বোকামি হবে।
- নিজেকে নমনীয় রাখা, নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার প্রতি আসক্তি তৈরি হতে না দেওয়া। অনেক কষ্ট করে, ভাবনাচিন্তা করে সময় দিয়ে ওই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম বলে জোর করে সেটাতেই স্থির থাকতে হবে এটা কিন্তু এক ধরনের নির্বুদ্ধিতা। বারবার ভুল করার থেকে নিজেকে একটু ভেঙে, অহংবোধকে একপাশে সরিয়ে রেখে, যুক্তি দিয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। এ ক্ষেত্রে পরের ভালোটুকু মেনে নিতে তো দোষ নেই। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে অনেক সময় আসলের থেকে সুদটা অনেক লাভজনক হয়।
Discussion about this post