শিক্ষার আলো ডেস্ক
নওগাঁর শিক্ষক দম্পতি মো. আবুল কালাম আজাদ ও মোছা. রেবেকা সুলতানার দুই মেয়ে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় মেডিক্যালে চান্স পেয়েছেন। তারা দু’জনই যমজ। একজন হলেন ইসরাত জাহান দিবা আর অন্যজন নুসরাত জাহান দিনা।
দিবা চান্স পেয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে আর দিনা চান্স পেয়েছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে।
তাদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে। দিবা-দিনার বাবা আবুল কালাম নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আর মা নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভদ্রসেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
দিবা ও দিনা ছোট বেলা থেকেই ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। রাজশাহী পি. এন. সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ ৫। আর এইচএসসিতে রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পেয়ে স্কলারশিপসহ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা।
রাজশাহী মেডিক্যালে চান্স পাওয়া দিনা বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল, সহযোগিতা ছিল। আমরা দু’জন কে কি পড়ছি তা শেয়ার করেছি, আবার পরীক্ষায় কেউ কারো থেকে কম পাবো না এটাও মাথায় রেখে পড়াশুনা করেছি। এভাবেই শেষ পর্যন্ত মেডিক্যালে চান্স পেয়েছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরে ভালো লাগছে। তবে আরও বেশি ভালো লাগতো যদি আমাদের নানা বেঁচে থাকতেন। আমাদের এই সাফল্যের জন্য নানা সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। কারণ তার হাত ধরেই আমরা স্কুলে যাওয়া শুরু করি।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যালে চান্স পাওয়া দিবা বলেন, একা চান্স পেলে হয়তো এত আনন্দ লাগতো না। দুইজন একসঙ্গে চান্স পাওয়ার অনুভূতিটা নিজে চান্স পাওয়ার আনন্দের চেয়েও অনেক বেশি।
দু’জনই প্রতিযোগিতা দিয়ে পড়াশুনা করেছি উল্লেখ করে দিবা বলেন, মেডিক্যালে ভর্তির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কোচিংয়ে মডেল টেস্ট দিয়ে এসে দু’জনই দেখতাম আমাদের কার কোথায় ভুল হচ্ছে। আমারটা ও ধরিয়ে দিতো আর আমি তারটা। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল আমরা মেডিক্যালে চান্স পাবো, ডাক্তার হব। তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। বাবা মা ও আমাদের ওপর খুশি।
মেয়েদের সাফল্যে তদের মা রেবেকা সুলতানা বলেন, দিবা ও দিনার পড়াশুনার হাতেখড়ি আমার হাতেই। প্রাইমারি থেকেই তাদের পড়াশুনার বেশ আগ্রহ ছিল। সব ক্লাসেই তাদের রেজাল্ট ভালো ছিল। এখন মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে। এর চেয়ে বেশি আনন্দের আর কি হতে পারে। এ অনুভূতি বলে প্রকাশ করার মতো নয়।
দিবা-দিনার বাবা আবুল কালাম বলেন, স্কুল থেকেই যে কোনো বিষয়ে তাদের একটু দেখিয়ে দিলেই বাকিটা তারা নিজে নিজে করে ফেলতো। আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই শিক্ষক। আমাদের কাছে সব ছাত্র-ছাত্রীই সন্তানের মত। তাই অন্য শিক্ষার্থীদের যেমন পড়াশুনার ব্যাপারে গাইড করতাম। আমাদের সন্তানদেরও তেমনই করেছি।
স্কুলে বাবা-মা দিবা-দিনাকে পড়াশুনার ব্যাপারে পরামর্শ দিলেও কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তাদের পরামর্শ দিয়েছেন তাদের মামা নুরুজ্জামান মৃধা। তিনি ঢাকা মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক। দিবা-দিনার সাফল্যে আমাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং আশপাশের মানুষ সবাই খুশি।
নওগাঁর এ শিক্ষক দম্পতির এখন স্বপ্ন- তাদের মেয়েরা মানুষের মত মানুষ হবে। একদিন বড় ডাক্তার হয়ে মানব সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবে।
Discussion about this post