শিক্ষার আলো ডেস্ক
গত ৫ মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা। এতে অংশ নিয়েছিল তাসমিন। আর ৭ মে ফলাফলে মেধা তালিকায় স্থান না পেয়ে কিছুটা হতাশ হয়েছিল সে। পরে ১২ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও আশানুরূপ ফলাফল হয়নি। অনেকটা মন খারাপের মধ্যেই ১৬ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তাসমিন। স্বপ্ন ছিলো চবিতে প্রথম হবে। আর সেই স্বপ্নটিই যেন বাস্তবে রূপ নিলো তার জীবনে। ফলাফলের দিন নিজের নামটি এক নাম্বারে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। ফলাফল শুনে চোখের জল আটকাতে পারলেন না তার মা।
এই অদম্য ইচ্ছাশক্তির গল্পটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘এ’ ইউনিটে প্রথম স্থান অধিকারী তাসমিন আক্তারের। গত সোমবার ১৬ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে ২৬ হাজার ৯০৮ জন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০৬.২৮ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার তাসমিন আক্তার।
তাসমিনের বাড়ি বাঁশখালীতে হলেও পরিবারসহ থাকেন নগরীর চকবাজার এলাকায়। বাবা ফটিকছড়ি বিএমসি ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরিবারের মেজো মেয়ে তাসমিন ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। জেএসসি পরীক্ষায় রায়ছটা প্রেমাশিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ–৫ ও বৃত্তি পান তিনি। পরে এসএসসিতে জিপিএ–৫ মিস গেলেও কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ–৫ পেয়ে আবারো মেধার স্বাক্ষর রাখে তাসনিম।
অনুভূতি প্রকাশ করে তাসমিন বলেন, চবিতে প্রথম হওয়া আমার স্বপ্ন ছিলো। আমার যখন ডেন্টালে মেধা তালিকায় আসেনি তখন মন খারাপ হয়েছিলো। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। পরে মা ও আমার ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নতুনভাবে উৎসাহ পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা আশানুরূপ না হলেও চবির পরীক্ষা ভালো হয়। ফলাফলে নিজের নামের পাশে এক নাম্বার দেখে অন্যরকম অনুভূতি হয়, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার ফলাফল শুনে আমার মা খুশিতে কান্না করে দেন। বাবাও কলেজ থেকে বার বার খবর নিচ্ছিলেন।
ভালো ফলাফল বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মা–বাবা আমার পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। সব সময় দোয়া করেছেন। আমার ভালো করার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হচ্ছে আমার মা–বাবা। এরপর আমার বড় ভাই, যিনি পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। ডেন্টালে যখন আমার আসেনি, তখন আমাকে সাহস দিয়েছে আমার ভাই আর আমার মা। আর তাদের অনুপ্রেরণায় আত্নবিশ্বাস ধরে রেখে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বলেই আজ তার পুরষ্কার পেলাম।
ছোটদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে তাসমিন বলেন, প্রথমে সৃষ্টিকর্তার ওপর আস্থা রাখতে হবে। অনেক সময় একঘেয়েমি চলে আসে পড়াশোনায়, তখন আমাদের বাবা–মার কষ্টের কথা স্মরণ করতে হবে। বাবা–মার কষ্টের কথা ভেবে এগিয়ে যেতে হবে। হতাশ না হয়ে আত্নবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
Discussion about this post