শিক্ষার আলো ডেস্ক
সুপ্রিয় মেডিকেল কলেজে ভর্তিচ্ছু বন্ধুরা! আসছে ৯ ফেব্রুয়ারী তোমাদের জীবনের মহাগুরুত্বপূর্ণ একটা দিন , সাথে সাথে মহাটেনশনেরও! তাই বলে কি ভয় পেলে চলবে? জয়ী হওয়ার জন্যই যে এ লড়াই! তাই ঘাবড়ানোর কিছুই নেই। স্রেফ কিছু নিয়ম ও কৌশল মেনে চললেই বিজয় তোমার সুনিশ্চিত। মেধাবী পূর্বসুরীদের পরামর্শ অবলম্বনে তাই কিছু টিপস তোমাদের জন্য-
৬০-৭০ শতাংশ কমন পড়ার সম্ভাবনা
পরীক্ষার আগে একটা রুটিন করে নেওয়া ভালো। নিয়মিত মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করবে। পরীক্ষার আগের সপ্তাহে প্রতিটা বই অন্তত দুবার শেষ করবে। এ সময় নতুন কিছু পড়বে না। আগে যা পড়েছো, তাই বারবার রিভিশন দেবে।উত্তরের ব্যাখ্যা দেওয়া আছে, এমন কোনো প্রশ্নব্যাংক নিয়ে বিগত বছরগুলোর মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বারবার অনুশীলন করবে। এর মধ্য থেকেই ৬০-৭০ শতাংশ কমন পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
পরীক্ষার আগের দিন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা বইয়ে একবার চোখ বুলিয়ে নেবে, প্রশ্নব্যাংক থেকে গত ১০ বছরের প্রশ্ন দেখে নেবে। এদিন বন্ধুদের সঙ্গে ফোন দিয়ে কে কেমন প্রিপারেশন নিলে, এসব আলোচনা করার কোনো দরকার নেই। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখবে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, কোনো রকম গুজবে কান দেবে না। প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে এখনকার প্রশাসন খুবই কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে, কাজেই এ রকম কিছু শুনলেও এড়িয়ে যাবে। মনে রাখবে, অসদুপায় অবলম্বন করে কখনো ভালো কিছু পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুনঃমেডিকেল কলেজে ভর্তি নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের নির্দেশ
যেসব ব্যাপার ভর্তিযুদ্ধে এগিয়ে রাখবে—
১. নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসটা ধরে রেখো
২. একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, যদি প্রশ্ন কঠিন হয় সবার কাছেই কঠিন, শুধু তোমার একার নয়।
৩. মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সময় যেসব প্রশ্ন দেখামাত্রই উত্তর করতে পারবে, সেগুলোই প্রথমে দাগাবে। গাণিতিক প্রশ্ন, কনফিউজিং প্রশ্ন এগুলো পরে দাগাবে।
৪. রসায়নে প্রতিটি চ্যাপ্টারেরই কিছু টপিক থাকে, যেগুলো থেকে নিয়মিত প্রশ্ন হয়। এ রকম টপিকগুলো (যেমন—আয়ন বা মৌল শনাক্তকরণ, নির্দেশক) একটু মার্ক করে বা টুকে রাখতে পারো, যেন এগুলো বারবার রিভিশন হয় এবং এগুলো থেকে ভুল না হয়।
৫. পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো ভালোভাবে বুঝে মনে রাখতে হবে।বইয়ের ছক, পার্থক্য, মোটা করা লাইনগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বইয়ের উদাহরণ ও অনুশীলনীর অঙ্কগুলো বারবার করলে তোমার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে, যা পরীক্ষার হলে তোমাকে দারুণভাবে সাহায্য করবে।
৬. ১০০ নম্বরের মধ্যে ৩০ নম্বরই থাকে জীববিজ্ঞানে থেকে। এর মধ্যে ২৪–এর বেশি নম্বর না পেলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে।প্রাণিবিজ্ঞানের জন্য গাজী আজমল স্যারের বই এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্য আবুল হাসান স্যারের বই থেকে ছক,পার্থক্য,উদাহরণ এবং আগের বছরগুলোয় যেসব টপিক থেকে প্রশ্ন এসেছে তাই জরুরি!
৬. খুব কঠিন প্রশ্নগুলো না পারার জন্য আসলে চান্স মিস হয় না। চান্স মিস হয় কমন জিনিসগুলো না পারার কারণে। তাই শেষ সময়ে এসে কঠিন কঠিন প্রশ্নগুলো নিয়ে বেশি মাথা না ঘামানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
কিন্তু পরীক্ষার একদম শেষ সময় এসে সাধারণ জ্ঞানের এত কিছু দেখে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
তাই অবশ্যই দেখে যেতে হবে, এমন টপিকগুলো হলো-
১. ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, গণঅভ্যুত্থান
২. মুক্তিযুদ্ধ
৩. ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য+স্থাপত্য ভাস্কর্য
৪. বঙ্গবন্ধু
৫. নদ-নদী, খনিজ সম্পদ
৬. জাতিসংঘভুক্ত অঙ্গ-সংস্থায় বাংলাদেশের যোগদান
৭. সাম্প্রতিক সময় দেওয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক
ইংরেজিতে কী কী টপিকস পড়া প্রয়োজন?
ইংরেজিতে অসংখ্য টপিকস রয়েছে। যেকোনো টপিকস থেকেই প্রশ্ন হতে পারে। কিন্তু আগের বছরের প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্দিষ্ট কিছু টপিকস থেকে প্রায় প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে। এসব টপিকস সবার আগে শেষ করবেন। এগুলো হলো—
1. Synonyms and Antonyms+Vocabulary.
2. Parts of speech+Appropriate preposition.
3. Tense
4. Right form of verb.
5. Subject verb agreement
6. Sentence correction
7. Phrases and clauses
8. Translation+Proverb+Spelling
9. Number +Gender.
পরীক্ষার দিনে করণীয়
পরীক্ষার দিন সকালে গ্লুকোজ বা মিষ্টিজাতীয় কিছু খেয়ে যাবে। একগাদা বই নিয়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার দরকার নেই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে, দূরত্ব ও যানজটের ব্যাপারটা মাথায় রাখবে। কেন্দ্রে আপনার রুম ও সিট খুঁজে দিতে স্বেচ্ছাসেবকেরা সাহায্য করবেন। ঠিকমতো রোল ও রেজিস্ট্রেশনের ঘর পূরণ করবে। প্রশ্ন পেয়ে প্রথম আধা ঘণ্টায় যেগুলো কমন, সেগুলো দাগিয়ে নেবে, তারপর বাকিগুলো। চেষ্টা করবে ৯৫+ দাগাতে, যত বেশি দাগাবে, চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। একদম নিশ্চিত না হয়ে ডাবল অ্যান্সার বা ব্ল্যাংক রাখবে না। আর প্রশ্নের নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে উত্তর দাগাবে। যদি কোনোভাবে ভুল হয়েও যায়, না ঘাবড়ে ঠান্ডা মাথায় বাকিগুলো দাগাবে। মনে রাখবে, তোমার এত দিনের পরিশ্রমের ফল এই এক ঘণ্টার ওপর নির্ভর করছে। নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কমন প্রশ্নে ভুল করা যাবে না। মনে রাখবে, সহজ প্রশ্নগুলো আপনাকে চান্স পাইয়ে দেবে আর কঠিন প্রশ্নগুলো তোমাকে সিরিয়ালে এগিয়ে দেবে।
সর্বোপরি মনে রাখতে হবে যে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা মাত্র এক ঘণ্টার ব্যাপার, কিন্তু এই এক ঘণ্টা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক ঘণ্টা হতে পারে।তাই এই সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে এবং একই সঙ্গে নেগেটিভ মার্কিং যেন বেশি না হয়, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।
পরীক্ষার আগে সুস্থতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে একদম দূরে থাকবে। সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম ও খাওয়াদাওয়া করবে। সবার জন্য শুভকামনা রইল।
Discussion about this post