কে এম এনামুল হক
জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছে। এতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশ। এখানে মোট রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, বিদেশি উৎস থেকে সহায়তা ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং বাজেট ঘাটতি প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এবারের বাজেট কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়ক হবে, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সুদৃঢ়করণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এটাই মানুষের প্রত্যাশা। সেই লক্ষ্যে সরকার জাতীয় বাজেটের ১৫%-২০% শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বৈশ্বয়িক অঙ্গীকার করলেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষায় বরাদ্দ দিয়েছে ১১.৬৯%।
করোনা মহামারির কারণে মার্চ ২০২০ থেকে মানুষ যে ধরনের স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা ও শিক্ষা ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে, তা থেকে উত্তোরণের জন্য এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, জরুরি অবস্থায় শিক্ষা, কর্মসৃজন, ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে তা সবারই প্রত্যাশা। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের বিশেষ প্রভাব থাকায় দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১,০৩,০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থাকলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি।
বিগত কয়েক দিন যাবৎ বিভিন্ন দিক থেকে শুনছিলাম এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতে প্রায় ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ মানব সক্ষমতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর দেখলাম বরাবরের মতোই এবারও শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলিয়ে ৮৫,৭৬০ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ১৫.১০% বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে খুশি হলেও মনে মনে ভয় পাচ্ছি এ দিয়ে শিক্ষা পুনরুদ্ধার কীভাবে হবে? কেননা, একটু ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখলাম প্রকৃত চিত্রটি ভিন্ন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ মিলিয়ে মোট ৬৬, ৪০১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা খাতে প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১১.৬৯ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ০.০১% বেশি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় প্রকৃত অর্থে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কমে গেছে, যা আমাদের মর্মাহত করেছে।
করোনার এই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কার্যক্রমের আওতায় জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষা পরিচালনার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে শিক্ষার নতুন চাহিদা পূরণের জন্য শিক্ষকদের প্রস্তুত করা ও শিক্ষা অধিকার রক্ষায় এ বাজেট পর্যাপ্ত কী?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মহামন্দা কাটাতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কেইন্সের মতে জাতীয় অর্থনীতি যখন স্থবিরতার সম্মুখীন হয় তখন রাষ্ট্রকে অনেক বিনিয়োগ করতে হয়, তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমসাময়িককালে সাইমন কুজনেটসের পরামর্শ অনুযায়ী সচ্ছলদের কাছে বেশি অর্থ দিলে তারা দরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান করবেন। এমন চিন্তা থেকে বিশ্ব অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছে। উন্নয়নের আধুনিক ধারাবলে ব্যালেন্স গ্রোথ অত্যন্ত জরুরি। অর্থাৎ পরিকল্পনা এমন হওয়া উচিত যার সুবিধা সমাজে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে বেশি যাবে এবং অপেক্ষাকৃত ধনী যারা আছেন তারা অধিক হারে দায়িত্ব নেবেন, বেশি হারে আয়কর দেবেন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্থের পুনর্বণ্টনের একটি ব্যবস্থা করলে সেটি সবার জন্য মঙ্গলময় পরিস্থিতি তৈরিতে সহায়ক হবে।
তাই কোভিড ১৯-এর ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ বরাদ্দের দাবি রাখে। এরপরেই আসে মানব সক্ষমতা উন্নয়ন। বর্তমানে কর্মসৃজন এবং ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের জন্য দক্ষ জনগণ তৈরি জন্য বিনিয়োগ এবং সাময়িক দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সুদৃঢ় করা।
এই লক্ষ্য সামনে নিয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের পক্ষ থেকে এবার জাতীয় বাজেটের অন্তত ১৫% শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট উন্মুক্ত আবেদন এবং অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো স্মারকলিপিতে গণসাক্ষরতা অভিযানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষা কার্যক্রমের মতো ২০২০-২০২১ অর্থবছর থেকে আগামী ২-৩ বছর মেয়াদি একটি শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে কোভিড ১৯-এর ফলে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে।
এবারের বাজেটে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কিছু প্রত্যাশার মধ্যে অন্যতম ছিল শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহারের অগ্রগতি। বিশেষ করে করোনাকালে গত ১৮ই মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আইসিটি ডিভিশন এবং একসেস টু ইনফরমেশনের সহযোগিতায় গৃহীত উদ্যোগটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। এ সময় সংসদ টেলিভিশন চ্যানেল ব্যবহার করে যে বিকল্প দূরশিক্ষণ পদ্ধতি চালু হয়েছে তার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে রেডিও এবং মোবাইল ফোন প্রযুক্তি যুক্ত হলে শিখন ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে যাবে। কোভিড পরবর্তী সময়েও এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন।
একই সঙ্গে শিক্ষকদের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া, বিশেষ করে নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারণ, প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা, আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার মতো এসব কার্যক্রম মিলিয়ে শিক্ষা খাতে ন্যূনতম ১৫% বরাদ্দ দেওয়া সময়ের দাবি। এই বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম প্রসারের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তার সুবিধা শিক্ষার্থীরা পাবে, যা প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রান্তিক ব্যক্তিদের দুর্ভোগ লাঘবে সহায়ক হবে।
ইউনেস্কো এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড ১৯-এর ফলে পারিবারিক অর্থ সংকট, শিশুশ্রম, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, ঝরে পড়া, অপুষ্টিজনিত প্রতিবন্ধকতা ও বাল্যবিবাহের কারণে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা খাতে বিগত দুই দশকে যে অগ্রগতি হয়েছে তা বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চাহিদা এবং অধিকারের কথা বিবেচনা করে মানবসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জনমানুষের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল।
বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা খাতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৯,৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে তা ২২,৮৮৪ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং পারিবারিক উন্নয়ন বিভাগসহ এ খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ২৯,২৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিগত বছরের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ১৩.৬৬%। সেই তুলনায় শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য নয়। টাকার অংকে এই বৃদ্ধি ৮.৬৪% হলেও জাতীয় বাজেটের অনুপাতে বৃদ্ধি মাত্র ০.০১%।
সরকার বরাবরের মতো এবারও অন্যান্য বিভাগ বা মন্ত্রণালয় যুক্ত করে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি দেখানোর প্রয়াস হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১৭,৯৪৬ কোটি টাকা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ১,৪১৫ কোটি টাকাসহ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ৮৫,৭৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেখিয়েছে।
মন্ত্রণালয় বা বিভাগওয়ারী বরাদ্দ পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অপারেটিং ব্যয় হিসেবে ১৫,৫৩৬ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় হিসাবে ৯,৪০৪ কোটি টাকাসহ মোট ২৪,৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ৪.৩৯%। অনুরূপভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে অপারেটিং ব্যয় হিসেবে ২১,২৫২ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় হিসাবে ১১,৮৬৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩৩,১১৭ কোটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ৫.৮৩%। এরই ধারাবাহিকতায় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে অপারেটিং ব্যয় বাবদ ৬,২৬৮ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় বাবদ ১,৯৭৮ কোটি টাকাসহ মোট ৮,৩৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১.৪৭%। অর্থাৎ শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৬,৪০১ কোটি টাকা, যার মধ্যে অপারেটিং ব্যয় ৪৩,১৫৬ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২৩,২৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেটের ১১.৬৯%, যা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ছিল ১১.৬৮%, নিট পরিবর্তন ০.০১%।
বাজেট বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সকল ক্ষেত্রেই মজুরি ও বেতন এবং প্রশাসনিক ব্যয় খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে প্রশিক্ষণ বাজেট বৃদ্ধি পেলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে প্রশিক্ষণ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।
দুটি মন্ত্রণালয়েই ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, মেশিনারি ও ইকুইপমেন্ট ক্রয় এবং অন্যান্য স্থায়ী সম্পদ ক্রয়ের জন্য বাজেট উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার মান উন্নয়ন (প্রশিক্ষণ ব্যতীত), স্কুল মিল কার্যক্রম এবং সামাজিক সহায়তার জন্য বাজেট উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়নি।
অর্থাৎ বরাবরের ন্যায় শিক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো রয়েই গেল। জাতীয় বাজেটের পর বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন করে এ ঘাটতি দূর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। যা পরবর্তীতে সম্পূরক বাজেট অথবা সংশোধিত বাজেটের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে।
লেখক: উপ-পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান ও জাতীয় সমন্বয়ক, এডুকেশন আউট লাউড।
Discussion about this post